আইসিজের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে ঢাকা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার বিষয়ে আইসিজের (আন্তর্জাতিক বিচার আদালত) রায়কে স্বাগত জানিয়ে একে মানবতার বিজয় এবং সকল জাতির মানবাধিকার আন্দোলন কর্মীদের জন্য মাইলফলক হিসাবে বর্ণনা করেছেন। নেদারল্যান্ডের হেগ নগরীতে আইজেসি কর্তৃক এই রায়ের কপি সরবরাহের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ ইকুয়েডোর থেকে ফোনে বাসসকে বলেন, “আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই…আমার বিশ্বাস মিয়ানমার এই আদালতকে সম্মান জানাবে…তাদের (মিয়ানমার) পক্ষে একে অগ্রাহ্য করা সম্ভব হবে না।”

জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত আজ মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ওপর কথিত গণহত্যা বন্ধ করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহনের পাশাপাশি চার মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে এবং অত:পর প্রতি ৬ মাসে রিপোর্ট দিতে বলেছে। আব্দুল মোমেন বলেন, এই রায় দুইভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে। একদিকে মিয়ানমার এখন থেকেই তাদের লোকদের ফিরিয়ে নিতে রাখাইনে অনুকুল পরিবেশ তৈরিতে আরো আন্তরিক হবে। অপর দিকে রোহিঙ্গরা স্বেচ্ছায় নিজ ঘর-বাড়িতে ফিরে যেতে ভরসা পাবে।

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক আদালত-আইসিজে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার নৃশংসতা না চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন…এটি তাদেরকে (রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে আস্থাশীল করবে।” পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই রায় মিয়ানমারের ওপর বিরাট আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করবে এবং এই রায়ের ভিত্তিতে রাশিয়া এবং চীনও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ দেবে।

তিনি বলেন, “রাশিয়া এবং চীন ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে এবং এই রায় এখন মিয়ানমারকে প্রত্যাবাসনে রাজি করাতে সহায়ক হবে।”
এর আগে এই রায়ের পর পরই এক প্রতিক্রিয়ায় মোমেন বলেন, এটি গাম্বিয়া, ওআইসি, রোহিঙ্গা এবং অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য একটা বিজয়। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি মানবতা এবং ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ শেখ হাসিনার জন্য আশীর্বাদ। তিনি বলেন, আদালত ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেছে, মিয়ানমারের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও নৃশংসতা বন্ধ করতে বলেছে’।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, এই ধরণের রায় বিশ্বে জাতিগত নির্মূলকরণ এবং গণহত্যার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করবে। মোমেন আরও উল্লেখ করেছেন যে, আইসিজে ১৫ জন বিচারকের সকলের সর্বসম্মত রায়ে চারটি অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ গ্রহণ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ফোরামে অংশ নিতে এখন ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো নগরীতে অবস্থান করছেন।

গাম্বিয়া বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), কানাডা এবং নেদারল্যান্ডসের সমর্থন নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মামলা দায়ের করেছে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া অভিযোগ করেছে যে, মিয়ানমার হেগ নগরীতে গত ডিসেম্বরের শুনানিতে ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। অং সান সু চি আদালতে সাক্ষ্যদানকালে ব্যাপকভাবে ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে তার দেশের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন।

বাংলাদেশ বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখের বেশী রোহিঙ্গাকে অস্থায়ী কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের বেশিরভাগ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সামরিক ক্র্যাকডাউন শুরু করার পর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘ এ ঘটনাকে ‘জাতিগত নির্মূলকরণের উদাহরণ’ বলে এবং ‘গণহত্যা হিসাবে অভিহিত করেছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। তবে, ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়া সত্তে¡ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগণ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাননি। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান