আরভিনের সেঞ্চুরি: নাইমের ৪ উইকেট

বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টের প্রথম দিনই সেঞ্চুরি করলেন সফরকারী জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। তার সেঞ্চুরিতে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৯০ ওভারে ৬ উইকেটে ২২৮ রান করেছে সফরকারী জিম্বাবুয়ে। ১০৭ রানে আউট হন আরভিন। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম দিন সফল বোলার ছিলেন ডান-হাতি স্পিনার নাইম হাসান। ৬৮ রানে ৪ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে জিম্বাবুয়ে। ব্যাট হাতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার কেভিন কাসুজা ও প্রিন্স মাসভাউরি। বাংলাদেশের ওপেনিং দুই পেসার আবু জায়েদ ও এবাদত হোসেনের ডেলিভারি সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন কাসুজা ও মাসভাউরি। প্রথম ৪ ওভারে দলকে কোন রান দিতে পারেননি তারা।

পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়াইড থেকে রানের খাতা খোলে জিম্বাবুয়ে। আর সপ্তম ওভারের শুরুতে এবাদতকে চার মেরে ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে প্রথম বাউন্ডারির স্বাদ দেন মাসভাউরি। সর্তকতার সাথে হাটতে থাকা জিম্বাবুয়ের ওপেনারদের বিচ্ছিন্ন করেন বাংলাদেশের পেসার আবু জায়েদ। অষ্টম ওভারের শেষ বলে গালিতে নাইম হাসানকে ক্যাচ দিয়ে থামেন কাসুজা। নিজের চতুর্থ ওভারে প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে ২৫০ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখালেন আবু জায়েদ।

দলীয় ৭ রানে প্রথম উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। এরপর আরেক ওপেনার মাসভাউরির সাথে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। শুরুটা সর্তকতার সাথে হলেও, মাসভাউরি-আরভিন জুটি রানের চাকা সচল করেন। তাই মধ্যাহ্ন-বিরতির আগ পর্যন্ত ভালো অবস্থায় পৌঁছে যায় জিম্বাবুয়ে। ৩০ ওভারে ১ উইকেটে ৮০ রান তুলে তারা। এ সময় মাসভাউরি ৪৫ ও আরভিন ২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন।
বিরতি থেকে ফিরে আবু জায়েদকে চার মেওে মোকাবেলা করা ১০৪তম বলে ৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মাসভাউরি। হাফ-সেঞ্চুরির পরও ব্যাট হাতে রান তোলার কাজটা ভালোই করছিলেন তিনি। এ অবস্থায় এই জুটি ভাঙ্গতে চার বোলারকে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মোমিনুল হক। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছিলো না। অবশেষে আউট হবার সুযোগ নাইমকে দিয়েছিলেন মাসভাউরি।

৪১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বোলার নাইমকেই ক্যাচ দিয়েছিলেন মাসভাউরি। অবশ্য ক্যাচটি কঠিনই ছিলো। তবে ধরার চেষ্টা করেও পারেননি নাইম। তাই প্রথমবারের মত জীবন পেয়ে যান মাসভাউরি। ৪৩তম ওভারের শেষ বলে নাইমের বলে আবারো জীবন পান মাসভাউরি। স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্ত লুফতে পারেননি মাসভাউরির ক্যাচ। ৫৮ ও ৫৯ রানে জীবন পান মাসভাউরি।
মাসভাউরির এভাবে জীবন পাবার পর ৪৮তম ওভারে আবু জায়েদকে তিনটি বাউন্ডারি মারেন আরভিন। ঐ ওভারের প্রথম বাউন্ডারিতে জুটিতে শতরান পূর্ণ হয়। দু’বার জীবন পাওয়ায়, ভয়-শংকা কাজ করছিলো মাসভাউরির মনে। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে তার প্রমানও মিললো। সেই নাইমের বলেই পাল্টা ক্যাচ দিয়ে থামেন বাঁ-হাতি মাসভাউরি। ৯টি চারে ১৫২ বলে ৬৪ রান করেন ৩১ বছর বয়সী মাসভাউরি। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটিই তার সেরা স্কোর। গেল মাসে দেশের মাটিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে হারারে টেস্টে ১৪৯ বলে ৫৫ রান করেছিলেন মাসভাউরি। দ্বিতীয় উইকেটে মাসভাউরি-আরভিন জুটি দলকে এনে দেন গুরুত্বপূর্ণ ১১১ রান। দু’জন বল খেলেছেন ২৪১টি। জুটিতে মাসভাউরির ছিলো ১২৮ বলে ৬০ রান।

মাসভাউরিকে হারিয়ে ক্রিজে অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলরকে সঙ্গী হিসেবে পান আরভিন। ৫০তম ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশের আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলামকে চার মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন আরভিন।

অধিনায়কের হাফ-সেঞ্চুরির পর বড় ধরনের ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। ৫১তম ওভারে নাইমের ঘুর্ণিতে বোল্ড হন টেইলর। ১টি চারে ১১ বলে ১০ রান করেন টেইলর। ১৬ রানের মধ্যে মাসভাউরি ও টেইলরকে হারিয়ে হারিয়ে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে।

এই চাপ থেকে দলকে মুক্ত করেন আরভিন ও সিকান্দার রাজা। চা-বিরতি পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থাকেন তারা। এ সময় জিম্বাবুয়ের রান ছিলো ৩ উইকেটে ১৫০। বিরতির পরও রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন আরভিন ও রাজা। ৭০ ওভারে দলের রান ১৭০এ নিয়ে যান তারা। এই জুটিও বড় স্কোর গড়ার পথ তৈরি করছিলো। এমন সময় বাংলাদেশের মুখে হাসি ফুটান ২বার দলকে সাফল্য এনে দেয়া নাইম।
নাইমের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া রাজা। ৩টি চারে ৬২ বলে ১৮ রান করেন তিনি। আউট হওয়ার আগে চতুর্থ উইকেটে আরভিনের সঙ্গে ১১৭ বলে ৪০ রান করেন রাজা।

এরপর অধিনায়ককে নিয়ে দিনের খেলা শেষ করার পরিকল্পনায় ছিলেন ডান-হাতি তিমিসেন মারুমা। কোন ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে শান্ত মেজাজে খেলছিলেন তিনি। তবে রানের দিকে চোখ ছিলো আরভিনের। ৭৭তম ওভারে লেগ বিফোর হয়েছিলেন মারুমা। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। অবশ্য সেই লেগ বিফোরেই থামেন মারুমা। পেসার আবু জায়েদের বলে ৭ রানে আউট হন মারুমা।
মারুমার আউটের পর দলের স্কোর ২শতে পৌঁছায়। ৮২তম ওভারে নতুন বল নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। তারপরও আরভিনকে রান তোলা থেকে থামাতে পারেনি বাংলাদেশের বোলারার। ইনিংসের ৮৬তম ওভারে এবাদতের প্রথম ডেলিভারিকে লেগ সাইডে ফ্লিক করে ২১৩ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৮তম ম্যাচে তৃতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন এ ম্যাচের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক আরভিন। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম দু’টি সেঞ্চুরি করেছিলেন আরভিন। আর জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে অধিনায়কত্বের অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি করলেন আরভিন। এর আগে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছিলেন ডেভিড হটন।

দিনের শেষভাগে আরভিনের সেঞ্চুরিতে মুখে চওড়া হাসি ছিলো জিম্বাবুয়ের। কিন্তু সেই হাসি নিয়ে দিন শেষ করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। কারন দিনের খেলার ১০ বাকী থাকতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন আরভিন। নাইমকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। বল তার পায়ে লেগে উইকেট ভাঙ্গে। ২২৭ বলে ১৩টি চারে ১০৭ রান করেন আরভিন। তখন দলের রান ২২৬।

এরপর দিনের শেষ ১০ বলে কোন বিপদ ছাড়াই শেষ করেন উইকেটরক্ষক রেগিস চাকাবা ও ডোনাল্ড তিরিপানো। চাকাবা ৯ ও তিরিপানো শুন্য রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের নাইম ৩৬ ওভার বল করে ৬৮ রানে ৪ উইকেট ও আবু জায়েদ ১৬ ওভারে ৫১ রানে ২ উইকেট শিকার করেছেন।

স্কোর কার্ড :
জিম্বাবুয়ে ইনিংস :
প্রিন্স মাসভাউরি ক এন্ড ব নাইম হাসান ৬৪
কেভিন কাসুজা ক নাইম ব আবু জায়েদ ২
ক্রেইগ আরভিন বোল্ড ব নাইম ১০৭
ব্রেন্ডন টেলর বোল্ড ব নাইম ১০
সিকান্দার রাজা ক লিটন ব নাইম ১৮
তিমিসেন মারুমা এলবিডব্লু ব আবু জায়েদ ৭
রেগিস চাকাবা অপরাজিত ৯
ডোনাল্ড ত্রিপানো অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা-৪, ও-৩) ১১
মোট (৬ উইকেট, ৯০ ওভার) ২২৮
উইকেট পতন : ১/৭ (কাসুজা), ২/১১৮ (মাসভাউরি), ৩/১৩৪ (টেইলর), ৪/১৭৪ (রাজা), ৫/১৯৯ (মারুমা), ৬/২২৬ (আরভিন)।

বাংলাদেশ বোলিং :
এবাদত হোসেন : ১৭-৮-২৬-০ (ও-২)।
আবু জায়েদ : ১৬-৪-৫১-২ (ও-১)।
নাইম হাসান : ৩৬-৮-৬৮-৪,
তাইজুল ইসলাম : ২১-১-৭৫-০ (ও-২)।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান