ঈদে হায়দরাবাদের ডিজাইনে গয়না আনছে জাভেরি গোল্ড: উত্তম বণিক

জুয়েলারি সেক্টরটি হচ্ছে হাই ভেল্যুয়েবল জায়গা। এখানে পণ্য ছোট কিন্তু দাম বেশি। এখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বেশি হয়ে যায়। ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল থাকলে অনেকেরই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। পৃথিবীর কোথাওই হাই ভ্যাল্যুর জিনিসের ভ্যাট এত বেশি না। এটা ছোট জিনিস। একজন পকেটে করেও এক টুকরো স্বর্ণ নিয়ে আসতে পারে বা সরকারেরও অনুমোদন রয়েছে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ যে কেউ সঙ্গে করে আনতে পারবে। সেক্ষেত্রে কোন প্রয়োজনে মানুষ আমাদের থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে ক্রয় করবে? আমরা বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে এনবিআরের সঙ্গে বসেছি। আশা রাখছি তারা বিষয়টি দেখবে।

জুয়েলারি সেক্টরের বর্তমান অবস্থা

এতদিন জুয়েলারি সেক্টরের অবস্থা বেশ ভালই ছিল। সর্বশেষ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এটা সবারই জানা আছে। ওই বিষয়টির জন্য বর্তমানে কিছুটা ক্রান্তিকাল যাচ্ছে বলা যায়। এ বিষয়ে বলতে গেলে, আমাদের এর আগে কোনো নীতিমালা ছিল না। একটি বাচ্চা স্কুলে পড়াশোনা করে, নিয়মের মধ্যে থাকে, সিলেবাস থাকে তারপর বছর শেষে তাকে পরীক্ষা দিতে হয়। আর পড়াশোনা না করিয়ে, কোনো সিলেবাস না দিয়ে হঠাৎকরে যদি বলা হয় তুমি পরীক্ষা দাও; তাহলে তো সমস্যা হবেই। আমরা এখন সেরকম অবস্থার মধ্যেই পড়েছি। বছরের পর বছর পরম্পরার মধ্যে দেশের স্বর্ণ ব্যবসা এভাবেই চলছে। এখন হঠাৎকরে বলে, এত সোনা কোথা থেকে পেলেন? এরআগে তো আমরা কখনো ভাবিইনি যে কেউ আমাদের কাছে এভাবে স্বর্ণের জবাবদিহিতা চাইতে পারে।

আপন জুয়েলার্স ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছে। এতদিন খবর নেই। এখন এসে তাকে বলা হচ্ছে, তুমি এতগুলো স্বর্ণ কোথায় পেলে? এখন কী জবাব দেবে? এরকম প্রতিটি স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছেই কিছু স্বর্ণ থাকে। আমাদের কাছেও রয়েছে। আমরা তো মনেকরি, সারা জীবনে কোনোদিনই এরকম পরীক্ষা দিতে হবে না। এরআগে আমরা একটা আপিলও করেছিলাম, নীতিমালা করার জন্য। সরকার তখনও করেনি। এখন বিষয়টি যেহেতু আলোচনায় এসেছে, আশাকরি প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি আমাদের প্রতি থাকবে। না হলে, এই জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তীলে তীলে এই সেক্টর ধ্বংস হয়ে যাবে।

কাঙ্খিত ভ্যাটের হার
ফুল প্রাইজের ওপর ভ্যাট ধরতে হলে সর্বোচ্চ ১ থেকে দেড় শতাংশ ভ্যাট ধরলে সবার জন্য সুবিধার হবে। এছাড়া যদি সরকার নির্ধারিত মূল্যে আমাদের স্বর্ণ দেয়। এরপর লাভের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নেয় তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু ফুল প্রাইজের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট অনেক বেশি হয়ে যায়। একজন সাধারণ মানুষও যদি তার মেয়ের বিয়েতে ২ লক্ষ টাকার গহনা বানাতে চায় তাহলে প্রায় ৩০/৩৫ হাজার টাকা ভ্যাটই চলে আসবে। স্বাভাবিকভাবেই সে চাইবে যেন অন্য কোথাও থেকে স্বর্ণটা আনিয়ে নেওয়া যায়।

আমাদের স্বর্ণ কারিগরেরা
আমাদের কারিগররা খুবই দক্ষ। জয়পুরি,হায়দ্রাবাদি ডিজাইনের অলংকার আমরা বানাতে পারি। আমাদের কারিগরদের যদি সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয় তবে তারা আরও ভালো অলংকার বানাতে পারবে। তাদের সূè হাতের নিত্য নতুন ডিজাইনে গড়া অলংকার আমরা গ্রাহকদের হাতে তুলে দিতে পারছি। কারিগরদের যদি আধুনিক যন্ত্রপাতি আর প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তাহলে আমার বিশ্বাস আমরা আন্তর্জাতিক মানের অলংকার দিতে পারব। এতে আমাদের গ্রাহকরা সন্তুষ্ট হবে,বিদেশেও দিতে পারব। আমাদের কারিগরদের নিপুণ হাতে বানানো পাথরখচিত অলংকার যথেষ্ট উন্নতমানের। বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা বড় বড় পার্টিতে আমাদের দেশিয় ডিজাইনের অলংকারই বেশি চলে। জাভেরি গোল্ডের হাতের কঙ্কন, চুড়ি, গলার চেইন একেবারেই আলাদা ডিজাইনের এবং এটা আমাদেরটা ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যাবেনা। এগুলো আমাদের নিজস্ব ডিজাইনার ও কারিগররাই বানাতে সক্ষম। আমরা ভারত থেকে খুব বেশি কিছু আমদানি করিনা কারণ আমি মনে করি আমাদের ডিজাইনার আর কারিগররাই অনেক ভালোমানের অলংকার বানাতে পারে। এর পরও যদি সরকার আধুনিক যন্ত্রপাতি ওঅন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয় তাহলে আরও ভালো কিছু আমরা পাবো।

জুয়েলারি সেক্টরে সমস্যা
ডিজাইনের ক্ষেত্রে আমাদের খুব একটা সমস্যা নেই। তবে গত প্রায় ২০ বছর ধরে আমরা যে দাবি করে আসছি তা হলো এয়ারপোর্টে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ আনা যায়, এর পমিাণ বাড়ানো গেলে আমাদের এই শিল্প দেশকে আরও বেশি কিছু দিতে পারবে। আর সরকার আমাদের কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মেটাল জাতীয় জিনিসপত্র দিয়ে সহায়তা করতে পারে। এতে আমাদের আর পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এগুলো আমদানি করতে হবে না।

হাতের না মেশিনের গয়না
বিদেশ থেকে আসা মেশিনের তৈরি গয়নার কাছে কি আমাদের কারিগরদের হাতে গড়া গয়না মার খাচ্ছে? না, একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী হিসেবে আমি তা মনে করছি না। আমাদের কারিগররা অনেক উন্নতমানের গয়না বানাতে পারে। একটু সময়ের হেরফের ছাড়া আর বিশেষ পার্থক্য নেই মেশিন কিংবা হাতে গড়া গয়নার মধ্যে। মেশিনে যেটা দুই দিনে হয় হাতে সেটা বড়জোড় ৫ দিন লাগতে পারে। আর বেশি মেশিনের ফলে আমাদের অনেক দক্ষ কারিগর বেকার হয়ে যেতে পারে। তবে কাজে গতি আনতে কিছু কিছু মেশিনের দরকার আছে। আমাদের নিজস্ব ডিজাইন যখন ইমিটেশনের গয়নায় চলে যায় তখন কিছুটা খারাপ লাগে যে জিাইনইনটা ইমিটেশনে এসে গেল?

ঈদে গয়নার ব্যবসা
ঈদকে সামনে রেখে আমরা বেশ কিছু নতুন ডিজাইনের গয়না বাজারে আনবো। আশা করি ঈদে আমাদের ভালো ব্যবসা হবে। ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করি ১৫ রোজার মধ্যে আমরা এগুলো বাজারে দিতে পারব। নতুন বেশ কিছু ডিজাইনের গয়না আমরা আনছি।এর মধ্যে রয়েছে হায়দরাবাদের ডিজাইন কিন্তু আমাদের এখানকার কারিগরদের বানানো মেয়েদের হাতের কঙ্কন, জয়পুরি লকেট আর বোম্বের ছোট ছোট কিছু গয়নার সেট। আমরা বলতে পারি এবারের ঈদে এদেশের মেয়েদের জন্য জাভেরি গোল্ডের নতুন উপহার হবে হায়দরাবাদি কঙ্কন। আর কিছু চেইন ও জয়পুরি ডিজাইনের বড় বড় আংটি থাকছে ঈদের আগে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নতুনদের জন্য পরামর্শ
জাভেরি গোল্ডের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে আছে, আমাদের আরও একটি শাখা স্থাপন। আটি গুলশান কিংবা অন্য এলাকায়ও হতে পারে। আর আমরা চাই আমাদের জুয়েলার্সের গয়না থাকুক বাংলার ঘরে ঘরে। আমাদের সূè হাতের গয়নার অনন্যতা আমাদের মা-বোনদের যুগ যুগ তুষ্ট করুক।
নতুনদের প্রতি একটাই আমার উপদেশ সততা আর ধৈর্য্য নিয়ে ব্যবসা করুন সাফল্য আসবেই।

উত্তম বণিক
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জাভেরি গোল্ড