এখন থেকে বছরে একবারই মুদ্রানীতি ঘোষণা

অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য আলাদাভাবে মুদ্রানীতি ঘোষণার ‘বিশেষ তাৎপর্য’ না থাকায় এখন থেকে বছরে একবারই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যালয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতির ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।

এসময় গভর্নর বলেন, আমাদের মুদ্রানীতি ঘোষণাপত্র অর্থবছরের দুই অর্ধের জন্য দু’বারের বদলে অর্থবছরের শুরুতে সমগ্র বছরের জন্য একবার ঘোষণা করা হবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে দেশের মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান বলেন, প্রথাগতভাবে অর্থবছরের শুরুতে সমগ্র বছরের জন্য মুদ্রানীতি কার্যক্রম প্রণয়ন করা হয় এবং মধ্যবর্তীকালে যে কোনো সময়ে নীতি সুদহার ও নগদ জমার/তারল্যের বিধিবদ্ধ হারসমূহকে প্রয়োজনসাপেক্ষে পরিবর্তন করে প্রকাশ করা হয়। সুতরাং অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য আলাদাভাবে মুদ্রানীতি ঘোষণার বিশেষ কোনো তাৎপর্য বহন করে না।

ড. সালেহ উদ্দিন গভর্নর থাকার সময় ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথমবারের মতো অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। এর আগে বছরে একবারই মুদ্রানীতি ঘোষণা হত।

নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনা হয়েছে। গভর্নর জানান, নতুন এ মুদ্রানীতি কর্মসংস্থান মুখী প্রবৃদ্ধি সহায়ক। মূল্যস্ফীতি ৫.৫০ শতাংশ পরিমিত রেখে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ প্রশাসনের লক্ষ্যে ঘোষিত মুদ্রানীতি আগের মত সতর্কভাবে সংকুলানমুখী হবে।

নতুন মুদ্রানীতিতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত লক্ষ্য ঠিক করেছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের জুন পর্যন্ত লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের (জুলাই-জুন) পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রক্ষেপণ ছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ। কিন্তু গত জুন শেষে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি চলতি মুদ্রানীতির ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম।

গভর্নর জানান, মুদ্রানীতি কর্মসূচি নিয়ে সমগ্র জনগোষ্ঠির ধারণা ও প্রত্যাশার উন্নততর চিত্র পেতে এখন থেকে মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে অর্থবছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে রাজধানী ছাড়াও বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যাপকতর পরিসরে বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসংশ্লিষ্ট মহলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ সভার আয়োজন করা হবে।

মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ডেপুটি গভর্নর এস এম মুনিরুজ্জামান, আহমেদ জামাল, পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী, বিআইএফইউ-এর প্রধান আবু হেনা মো. রাজি হাসান, ব্যাংকিং রিফর্ম অ্যাডভাইজার এস. কে. সুর চৌধুরী, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মো. আখতারুজ্জামানসসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

আজকের বাজার/এমএইচ