গাজীপুরে একটি সড়কের আশায় দুই গ্রামের মানুষ

হিন্দুপল্লী নামে পরিচিত উধুর গ্রামটি গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ অঞ্চলের একেবারেই শেষ প্রান্তে। গত কয়েক যুগে গ্রামটির অবকাঠামো উন্নয়নে প্রাপ্তির খাতায় খুব সামান্যই যোগ হয়েছে। মাত্র এক কিলোমিটার সড়কের অভাবে উধুর গ্রামবাসীর দুর্ভোগের অন্ত নেই।

ঠিক একই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছিকোলিয়া গ্রামবাসীদেরও। দুটি গ্রামের মাঝখানের সড়কটি সারা বছরই পানিতে থৈ থৈ করে। শীত মৌসুমে শুকনো থাকলেও অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্প কলকারখানার তরল বর্জ্যরে কারণে বছর জুড়েই সড়কটি প্রায় ৫-১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকে। সংযোগ স্থাপনের জন্য গ্রাম দুটির মাঝখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলেও নেই সংযোগ সড়ক। উধুর ও ছিকোলিয়া গ্রামের মাঝখানে সংযোগ সড়কটি নির্মিত হলে পাল্টে যাবে দুই গ্রামের চিত্র। যাতায়াতে সুবিধাসহ কমবে দুর্ভোগ। একইসঙ্গে কৃষি পণ্য পরিবহনে সমৃদ্ধি আসবে বলে মনে করেন ভুক্তভোগী গ্রামবাসী।

শিক্ষার্থীসহ দুই গ্রামবাসীকে ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে যাতায়াত করতে হয়। প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে চাঁদা তুলে বাঁশের সাকো তৈরি করে যাতায়াতের জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়। অন্যথায় দুই কিলোমিটার ঘুরে উধুর এলাকার পথ পাড়ি দিয়ে এশিয়া হাইওয়ে হয়ে মিরের বাজার আসতে হয়। পরে মিরের বাজার থেকে আবার ছিকোলিয়া। এতে সময় লাগছে ৩০-৪০ মিনিট। উধুর গ্রামবাসীকে মাত্র এক কিলোমিটার সড়কের অভাবে বাড়তি অন্তত সাত কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি যাতায়াত ব্যয়ও বেড়েছে। সেই সঙ্গে এশিয়া হাইওয়ে সড়কে কোনো বাস সার্ভিস না থাকায় গ্রামবাসীকে ইজিবাইক অথবা লেগুনাসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহনে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়েছে।

উধুর এলাকার পূর্বের শেষ প্রান্তে পাকা সড়কও শেষ হয়ে গেছে। কৃষি ও গবাদী পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল এ গ্রামবাসীকে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও গাভীর দুধ বিক্রির পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের জন্য পূবাইল কলেজ গেট, রেলস্টেশন এবং বাজারে যেতে হচ্ছে। উধুর ও ছিকোলিয়া গ্রামের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার হলেও সড়কটি সারা বছর পানিতে তলিয়ে থাকে। বহু বছর আগে সড়কটি শীত মৌসুমে শুকনো থাকলেও বর্তমানে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্প কলকারখানার তরল বর্জ্যরে কারণে বছর জুড়েই সড়কটি প্রায় ৫-১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকে। সড়কটির মাঝখানে সেতু নির্মাণ করা হলেও নেই সংযোগ সড়ক।

উধুর এলাকার সুনীল চন্দ্র দাস জানান, তিনি কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। উধুর থেকে ছিকোলিয়া পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের পাশপাশি মাঝখানে পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ একটি কালভার্ড নির্মিত হলে গ্রামের উত্তর দিকের শত শত একর জমিতে ধানসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ সম্ভব হবে। চলতি বছর পানি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় শত শত একর বোরো ক্ষেত ৮-১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকদের লাখ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এমনিতেই গাজীপুর মহানগরে কৃষি জমি অনেক কমে গেছে। তবে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকজন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী সড়কটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পর এ ব্যাপারে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

সাবেক পূবাইল ইউনিয়ন পরিষদ ও বর্তমান সিটি করপোরেশন ৪২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান উদ্দিন জানান, সড়কটি উধুর ও ছিকোলিয়া গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। সড়কটি নির্মিত হলে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হবে।

৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বজলুর রহমান বাছির জানান, সড়ক নির্মাণে অনেক টাকা ব্যয় হবে। সড়কটি নির্মাণের কোনো প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অনেক বড় প্রকল্প।
এ ব্যাপারে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি জানান, উধুর থেকে ছিকোলিয়া পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের ব্যাপারে গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-২ এর সভাপতি আজিজুর রহমান শিরিষ জানান, সড়কটি নির্মাণের ব্যাপারে একটি প্রকল্প সিটি করপোরেশনে জমা দেওয়া আছে। চলতি মাসে টেন্ডার হওয়ার কথা রয়েছে। সড়কটি নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সড়কটি নির্মিত হলে উধুর ও ছিকোলিয়া গ্রামবাসী উপকৃত হবেন।

আজকের বাজার: আরআর/ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭