‘নেট মিটারিং’ ব্যবস্থার অধীনে ২৭ গ্রাহক বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে

গ্রাহকের ছাদের সৌরবিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে

নতুন চালু হওয়া ‘নেট মিটারিং’ ব্যবস্থার অধীনে গ্রাহকদের ছাদ থেকে সৌর বিদ্যুৎ কেনা শুরু করেছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো।

কর্মকর্তাদের মতে, ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির মধ্যে পাঁচটি গ্রাহকদের নিজস্ব ছাদের সৌর প্যানেল থেকে সৌর বিদ্যুৎ কেনার জন্য মোট ২৭ জন গ্রাহকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্মসচিব ও নবায়নযোগ্য শক্তি সংক্রান্ত বিষয়টির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘এই গ্রাহকরা জাতীয় গ্রিডে ৩.০৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। আমরা আশা করি, গ্রাহকদের সংখ্যা শিগগিরই বাড়বে এবং সৌর বিদ্যুতের পরিমাণও আরও বৃদ্ধি পাবে।’

গত ২৮ জুলাই গ্রাহকদের কাছ থেকে ছাদের সৌর বিদ্যুৎ কেনার জন্য ‘নেট মিটারিং নির্দেশনা ২০১৮’ প্রকাশ করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এটি কিভাবে কাজ করে?

এই ব্যবস্থার অধীনে, কোনো গ্রাহক পর্যন্ত ছাদে সৌর ব্যবস্থা স্থাপন করে ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ পেতে পারে এবং বিনিময় ব্যবস্থার আওতায় একটি বিশেষ মিটারের মাধ্যমে তার চাহিদা পূরণের পর অতিরিক্ত সৌর শক্তি বিক্রি করতে পারে।

কোনো গ্রাহক বা উদ্যোক্তা নিজের ভবন বা প্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌর প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। নিজের প্রয়োজন মেটানোর পর বিশেষ মিটারের মাধ্যমে বাড়তি সৌরবিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবে। এ বিষয়ে সরকার ও উদ্যোক্তা চুক্তিবদ্ধ হবে। উদ্যোক্তা তার নেয়া বিদ্যুতের চেয়ে গ্রিডে বেশি বিদ্যুৎ দিলে সরকারের কাছ থেকে নির্ধারিত দরে বিল পাবে। আবার উদ্যোক্তার বিদ্যুৎ বেশি হলে তাকেও বিল দিতে হবে। এটাকে বলা হচ্ছে নেট মিটারিং সিস্টেম।

এর মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের নিজস্ব সৌরবিদ্যুতের পাশাপাশি জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে। তবে ছুটির দিনে যখন সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় না, তখন তারা জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিক্রয় করতে পারবে।

এমনকি কর্মদিবসে তারা গ্রিডের জন্য সৌরবিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রয় করতে পারবে। আবার নিজেদের প্রয়োজনে তা ফেরত নিতেও পারবে।

মাস শেষে গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল খরচ ও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রয়ের ওপর সমন্বয় সাধন করা হবে। পাশাপাশি গ্রাহক বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাবে।

গত ২৮ জুলাই বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রাহকদের কাছ থেকে ছাদ সৌর বিদ্যুৎ কেনার জন্য ‘নেট মিটারিং বিধিমালা ২০১৮’ প্রণয়ন করে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ২০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ২.৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনে অন্যান্য সংস্থার চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে প্রধান সংস্থার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন অবস্থান রয়েছে। কারণ এটি তার কোনো গ্রাহকদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেনি।

একজন গ্রাহকের কাছ থেকে ৩৬৪ কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কিনেছে আরইবি ও নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)। অন্যদিকে একজন গ্রাহকের কাছ থেকে ২৫ কিলোওয়াট ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, দু’জন গ্রাহকের কাছ থেকে ১৩.৫ কিলোওয়াট ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) এবং তিনজন গ্রাহকের কাছ থেকে ১৩.৩ কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কিনেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)।

কর্মকর্তারা জানান, আগস্টের শেষের দিকে দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছে একটি সরকারি আদেশ পাঠায় বিদ্যুৎ বিভাগ, যেখানে নিট মিটারিং সিস্টেমের অধীনে আগামী তিন মাসের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন গ্রাহক থেকে ছাদের সৌর বিদ্যুৎ কেনার জন্য প্রত্যেককে নির্দেশ দেয়া হয়।

এই বিধিমালা প্রকাশ করে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস ঘোষণা করেন যে, প্রতিটি বিতরণ কোম্পানিকে কমপক্ষে ২০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে অবশ্যই সৌর বিদ্যুৎ কিনতে হবে। এটিকে মন্ত্রণালয়ের সাথে স্বাক্ষরিত তাদের বার্ষিক কর্মক্ষমতা চুক্তি (এপিএ) অধীনে একটি লক্ষ্য (টার্গেট) হিসেবে গণ্য করা হবে।

বিধিমালা তৈরির সাথে সম্পৃক্ত থাকা পাওয়ার সেল এর পরিচালক মো. আব্দুর রউফ বলেন, কোনো গ্রাহকের সৌর বিদ্যুৎ ক্ষমতার কোনো নিম্ন সীমা নেই। তবে ক্ষমতার ঊর্ধ্ব সীমা হচ্ছে তিন মেগাওয়াট।

তিনি বলেন, সারাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে উৎসাহিত করতে ছাদের সৌর বিদ্যুৎ কেনার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সরকার ছাদ সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০-১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে পারবে। কারণ ইতিমধ্যে সরকারি নীতির অংশ হিসেবে নিজস্ব ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন শিল্প কারখানা, এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, শপিংমল এবং হোটেলের মতো বড় বড় গ্রাহকরা ছাদ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে।

এমনকি ব্যক্তিগত গ্রাহক যারা সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থাপন করেছে তারাও নেট মিটারিং সিস্টেমের মাধ্যমে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে।

কর্মকর্তারা জানান, ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশব্যাপী ছাদ সৌর বিদ্যুৎ প্রচারণার জন্য নেট মিটারিং সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য শক্তি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) এক কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে ৩,১৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ