চোখের দেখায় শেয়ার কেনার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

চোখের দেখায় শেয়ার কেনার মানসিকতা থেকে বিনিয়োগকারীদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা না জেনে না বুঝে বিনিয়োগ করি যার ফলে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী শুধু বাজারকে দোষারোাপ করি। মার্কেট গ্রামার বলে যে, কোনও ক্লোজিংয়ের ২-৩ মাস আগে সবাই অবস্থান নেয়। এটা সবাই জানেন, যা কমন থিউরি। ক্যাপিটাল মার্কেট ভিন্ন পথে হাঁটে, সবাই যেটা বুঝে মার্কেট তার উল্টো পথে যায়। স্মার্ট পিপল অলওয়েজ লাইক দিস। পুঁজিবাজার নিয়ে ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও পরিচালক মইন উদ্দীন এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে একদিকে যেমন দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন, বিনিয়োগ করবেন কি না! অন্যদিকে আবার বাজার বেড়ে যাচ্ছে সেই স্রোতকে টাচ করতে পারবেন কি না? আবার ভাবেন, বাজার একটা সারটেইন প্রাইস এপ্রিসিয়েট করে একটা জায়গায় এসেছে এখন কি করা উচিত? এসব নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব রয়েছে। আমরা আবেগপ্রবণ জাতি, যখন বাজার যেদিকে যেতে থাকে আমরাও সেদিকেই যেতে থাকি। শেয়ারের দর যখন কমতে থাকে তখন অনেকেই ভাবতে থাকে মনে হয় দর আরও পড়ে যাবে। আর যখন বাড়তে থাকে তখন কেনা শুরু করে। বিনিয়োগকারীদের এই মানসিকতা বদলানো উচিত। মার্কেট নিয়ে আমরা শঙ্কায় থাকি কেন? এখন থেকে ছয় মাস আগের মার্কেটের ইনডেক্স দেখি, তাহলে দেখব, অনেক শেয়ারের দর ৩০-৪০ শতাংশ কম ছিল। এখন থেকে ৬ মাস আগেও অনেক ব্যাংকের শেয়,রের দাম আন্ডার প্রাইসে ছিল। অনেকেই মনে করেন, ফান্ডামেন্টাল অবস্থার কারণেই শুধু শেয়ারের দাম বাড়ে । ফান্ডামেন্টাল অবস্থা ছাড়াও কিছু অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকে যা আইডেন্টিফাই করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কোন প্রাইসে বিনিয়োগ করা যায় এবং প্রাইসটা কতটুকু যৌক্তিক সেটা বিনিয়োগকারীরই নির্ধারণ করা জরুরি। এই যৌক্তিকতার বিবেচনার অনেকগুলো ধরণ রয়েছে যেমন, পিই এবং ডিভিডেন্ড দেখে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু পরিসংখ্যান রয়েছে, দরের বড় ধরনের পরিবর্তন হয় মার্কেট ডিমান্ড এন্ড সাপ্লায়ের উপর ভিত্তি করে। বিনিয়োগ করার সময় কোম্পানি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে বলে মনে করেন এই অভিজ্ঞ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, আমরা কিন্তু পুঁজিবাজারে সবসময় ভবিষ্যত থেকে ক্রয় করি। মার্কেট ফিউচার দেখেই বিনিয়োগ করি । তাই যে শেয়ারে বিনিয়োগ করব সেটা কতটুকু যৌক্তিক? আগেই তা নির্ধারণ করা জরুরি। যেমন, আমাদের রেগুলেটরির দিক থেকে একটা ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, ৪০ পিই’র উপরে মার্জিন ফাইন্যান্স করা যৌক্তিক নয় । আসলে ৪০ পিই কি যৌক্তিক? ৬০ পিইর শেয়ারেও বিনিয়োগ করা যায় যদি কোম্পানির গ্রোথ ভালো থাকে। তার মানে পিই দেখেই বিনিয়োগ করতে হবে এমনটা ঠিক নয়। আসলে এটা দিয়ে বিনিয়োগ কারীদের একটা বিষয় বুঝানো হয়েছে যে, এর নিচে পিই গেলে বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় শুধু পিই দিয়ে ক্যালকুলেট করা সঠিক নয় বলে মনে করেন তিনি ।

এ ছাড়াও তিনি বলেন, আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের উদ্দেশ্যই থাকে ৯ টাকায় কিনলে ১০ টাকায় বিক্রি করব। আসলে এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। কেউ যদি জেনে শুনে আগুনে ঝাঁপ দেয় তাহলে কারোরই কিছু করার থাকে না। কোন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন,কি তাদের ব্যবসা এসব জানা দরকার। আগামি দুই বছর কারা থাকবেন পরিচালনা পর্ষদে, কেমন ব্যবসা করছে তা জেনে শুনে বিনিয়োগ করা উচিত। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য শুধু কোজিং নির্ভর না থেকে শেয়ার সম্পর্কে আইডিয়া রাখতে হবে। স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। যে শেয়ার ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেয় তার দর কোনোভাবেই ১৬-১৭ টাকা থাকা উচিত নয়। ১৬ টাকার ব্যাংকের শেয়ার ২০ শতাংশ দেয় আর অন্য খাতের ১৮০ টাকার শেয়ার ২৫ শতাংশ দেয়, তাহলে কোনটা ফেয়ার আর কোনটা আনফেয়ার? বাজারে আরো ভালো কোম্পানি আসা উচিত। মার্কেটে ভালো শেয়ার আসলে মার্কেট আরো বড় হবে। তাতে মার্কেটের গতি বাড়বে