চোখের পানি কমলে কি ক্ষতি

কাজের জন্য একটানা তাকিয়ে থাকতে হয় কম্পিউটার বা ল্যাপটপের দিকে। বাড়িতে ফিরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সরব থাকার কারণে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপেই চোখ আটকে। অথবা দীর্ঘ সময় টিভির পর্দায় বুঁদ রয়েছেন কিংবা ভিডিয়ো গেম খেলায় মশগুল? এতে যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আপনার চোখ, সে দিকে লক্ষ রাখছেন কি? চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন অনেক মানুষ। ড্রাই আইজ় ডেকে আনতে পারে অন্ধত্বও। ড্রাই আইজ় বা শুষ্ক চোখের সমস্যার একাধিক কারণের মধ্যে একটানা অনেকক্ষণ স্ক্রিনে আটকে থাকাকে চিকিৎসকেরা প্রধান কারণ বলে মনে করছেন।

চোখের উপরে পানির একটি পাতলা স্তর থাকে। পানি, তেল, পিচ্ছিল মিউকাস এবং জীবাণুরোধী অ্যান্টিবডি দিয়ে তৈরি এই চোখের পানি। চোখের গ্রন্থি থেকে কোনও কারণে পানি নিঃসরণ কম হলে চোখ শুষ্ক হয়ে পড়ে। সমস্যা দেখা দেয় তখনই। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানালেন, ‘‘চোখে যথেষ্ট পরিমাণে পানি তৈরি না হলে বা সেই পানি লুব্রিক্যান্ট হিসেবে যথেষ্ট না হলে চোখ কড়কড় করে, জ্বালা ভাব অনুভূত হয়। আলোর দিকে তাকানোও যায় না। মিউকাসে ভরে যায় চোখ। ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টি।’’

বয়স বাড়লে, ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে এই সমস্যা বাড়ে। মেয়েরা মেনোপজ়ের পরেও এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। আবার অতিরিক্ত এসি ঘরে বেশি সময় কাটালেও ড্রাই আইজ়ের আশঙ্কা থাকে। প্রতিনিয়ত দূষিত আবহাওয়াও শুষ্ক চোখের কারণ হতে পারে। আবার কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া শোগ্রেন সিনড্রোমও (এক ধরনের অটোইমিউন ডিজ়িজ়) চোখের উপরে আঘাত আনতে পারে। ঘুমোনোর সময়ে যাদের চোখ পুরোপুরি বন্ধ হয় না, যেমন স্ট্রোক বা স্নায়ু সমস্যার রোগী, তাঁদেরও চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। ভিটমিন এ-র ঘাটতিও চোখের পানি কমার কারণ হতে পারে। এই সমস্যা অনেক দিন ধরে চললে এবং ঠিক মতো চিকিৎসা না করলে দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কী করে বুঝবেন, সমস্যাটি আপনার চোখে দানা বেঁধেছে?

•চোখ অনবরত চুলকালে বা বারবার চোখ রগড়াতে ইচ্ছে হলে

•চোখ ভারী-ভারী মনে হলে

•চোখ খটখটে শুকনো লাগলে বা চোখে কিছু পড়েছে মনে হলে

•চোখ লাল হয়ে গেলে বা অবিরাম পানি পড়তে থাকলে

•আলোয় অস্বস্তি হলে, কাছের ও দূরের বস্তু দেখতে অসুবিধে হলে

•কোনও কোনও ক্ষেত্রে মাথাব্যথা থেকে জ্বর এমনকি নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপসর্গ হলে

এই সমস্ত লক্ষণ দেখা দিলে ড্রাই আইজ় হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

উপশমের সন্ধান

চোখের শুষ্কতার চিকিৎসার শুরুতেই কারণ নির্ণয় করা জরুরি। স্ক্রিন টাইম বাড়ার জন্য না কি অনেকক্ষণ ঠান্ডা ঘরে থাকার ফলে অথবা অন্তর্নিহিত রোগের কারণে— উৎস বুঝে চিকিৎসা চলবে। ‘টিয়ার সিক্রেশন টেস্ট, টিয়ার কোয়ালিটি টেস্ট, টিয়ার ভলিয়ুম অ্যাসেসমেন্ট করে চোখের পানি তৈরি হচ্ছে কি না বা চোখের পানি তৈরি হলেও সেটি যথেষ্ট পরিমানে রয়েছে কি না— তা জেনেই প্রতিকার হিসেবে কৃত্রিম চোখের জল (আর্টিফিশিয়াল টিয়ার্স) তৈরি করতে হবে। কার্বক্সিমিথাইল সেলুলোজ, সোডিয়াম হাইলুরোনেট শুষ্কতা কমানোর সলিউশন হিসেবে খুব ভাল কাজ করে। এতেও সমস্যা না গেলে আই ড্রপ, অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।

চোখের শুষ্কতাকে অবহেলা করা উচিত নয়। এটি কর্নিয়ার ক্ষতি করার পাশাপশি অন্ধত্বের কারণও হতে পারে। সুস্থ থাকতে গেলে রোগের চিকিৎসাই একমাত্র উপায় নয়। প্রাথমিক শর্ত হল সচেতনতা। কর্মব্যস্ততার মাঝেই সময় বার করুন, মেনে চলুন কয়েকটি নিয়ম। তা হলে সুন্দর থাকবে চোখ। ভাল থাকবেন আপনিও।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান