চোরাই ফোন বন্ধ করতে এনএআইডি সেবা চালু করেছে বিটিআরসি

চোরাই ও অবৈধ পথে মোবাইল ফোন আমদানি রোধ করতে এবং ব্যবহারকারীদের চুরি যাওয়া সেট বন্ধ করে দেয়ার সুবিধা দিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এনওসি অটোমেশন অ্যান্ড আইএমইআই ডাটাবেজ (এনএআইডি) চালু করেছে।

মঙ্গলবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিটিআরসি ভবনে এ সেবা উদ্বোধন করেন।

বিটিআরসির তত্ত্বাবধানে ও বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) আর্থিক সহায়তায় এনএআইডি চালু করা হয়েছে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এনএআইডি চালু হওয়ায় সরকার লাভবান হবে। চোরাই ও অবৈধ পথে ফোন সেট আসা বন্ধ হবে। সেই সাথে চুরি হওয়া মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়া যাবে। পাশাপাশি এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এনবিআর ও বিটিআরসি ঘরে বসেই অবৈধ পথে আসা সেট শনাক্ত করতে পারবে।

দেশ ডিজিটাল হওয়ার সাথে সাথে ডিজিটাল অপরাধও হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল অপরাধ বন্ধ করার ক্ষেত্রে নির্বাচনের সময় গুজব রোধে বিটিআরসি বিরাট বড় ভূমিকা রেখেছে। নির্বাচনের সময় এক রাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নামে ৭৬০টি সাইট খোলা হয়েছিল। সেগুলোর বিরুদ্ধে বিটিআরসি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশ অনেক এগিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে শুধু হ্যান্ডসেট ও ল্যাপটপ নয়, অচিরেই আমরা কম্পিউটারের মাদারবোর্ড তৈরি করব।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্ত হতে যাচ্ছে। বর্তমান সাবমেরিন ক্যাবল ১ ও ২ এর সক্ষমতা শেষ হওয়ার পথে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান মোস্তাফা জব্বার।

মোবাইল অপারেটরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ফাইভ-জি চালু করতে আমরা পিছপা হব না। আপনারা এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিন।’

এ সময় বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, এনএআইডি চালু হওয়ার ফলে সরকারের প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। অবৈধভাবে ফোন আমদানি ও চুরি বন্ধ হবে।

বিটিআরসির মহাপরিচালক (স্পেকট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছিম পারভেজ জানান, প্রতিবছর বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে বৈধভাবে দুই কোটি ৭৬ লাখ হ্যান্ডসেট আসে। আর বাজারে থাকা সেটের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আসে অবৈধভাবে। এতে সরকার প্রতি বছর এক হাজার থেকে বার শ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আইএমইআই ডাটাবেজে ৬০ শতাংশ হ্যান্ডসেটের নম্বর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং বাকিগুলো এখনও অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি।

অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস ও বিএমপিআইএ সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুবসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং মোবাইল অপারেটরগুলোর সিইও ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এনএআইডি চালু হওয়ায় যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে:

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া রোধ করতে সব হ্যান্ডসেটের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে।

হ্যান্ডসেট আমদানিকারকরা আমদানির অনাপত্তিপত্র পেতে অনলাইনে আবেদন এবং অনলাইনেই অনাপত্তিপত্র গ্রহণ করতে পারবেন।

জনসাধারণ মোবাইল ফোন কেনার আগে ডাটাবেজ হতে তথ্য যাচাই করে সেটের বৈধতা নির্ণয় করতে পারবেন। এতে অবৈধ আমদানি হ্রাস পেয়ে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে।

এছাড়া ডাটাবেজ থেকে দেশের মোবাইল ফোন খাতের সার্বিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে। গ্রাহকের ধরন, ফিচার ফোন হতে স্মার্টফোন গ্রহণের প্রবণতা, কী পরিমাণ হ্যান্ডসেট প্রতি বছর দেশের বাজারে বিক্রি হয়, বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মডেলের সেট সংখ্যা ইত্যাদি তথ্য যাচাই-বাছাই করে টেলিকম খাতের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে ডাটাবেজ।

ডাটাবেজ ব্যবস্থাটিতে কাস্টম হাউজের জন্য আলাদা মডিউল এবং একটি ডিভাইস থাকবে, যাতে বিটিআরসির দেয়া অনাপত্তিপত্রতে উল্লেখিত আইএমইআই নম্বর যাচাই করে শুল্কায়ন করা যাবে। ফলে ভুল আইএমইআই নম্বরের মোবাইল ফোন তালিকায় প্রবেশ করতে পারবে না।

ভবিষ্যতে ন্যাশনাল ইক্যুপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) স্থাপন করা হলে চলতি ব্যবস্থাটি তার ডাটাবেজ হিসাবে কাজ করবে। তখন সেটি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন চুরি ও ছিনতাই রোধসহ অপরাধমূলক কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হবে।

গ্রাহকদের এনএআইডি সেবা পেতে কোনো ধরনে নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না।

শুধুমাত্র ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বৈধভাবে আমদানিকৃত বা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের বেশির ভাগ আইএমইআই নম্বর বিটিআরসির ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর বাইরের আইএমইআই নম্বর ডাটাবেইজে আপাতত পাওয়া যাবে না। তবে এখন থেকে যত হ্যান্ডসেট বৈধভাবে আমদানি বা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হবে তা যাচাই-বাছাই করে ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে।

আইএমইআই নম্বর যাচাই:

নতুন মোবাইল ফোন কেনার ক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে থাকা ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর (*#/,. ইত্যাদি বিশেষ চিহ্ন বাদে শুধুমাত্র ১৫টি নম্বর) এবং ব্যবহৃত মোবাইলের ক্ষেত্রে *#০৬# চেপে প্রাপ্ত ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর KYD<Space>১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখে ১৬০০২ নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএসে আইএমইআই নম্বরটি বিটিআরসির ডাটাবেজে সংরক্ষিত রয়েছে কিনা তা জানা যাবে। তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ