জামালগঞ্জে ভাসমান ধান চারা চাষ

সবুজে ঘেরা সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের চাঁনবাড়ি গ্রাম। গ্রামের ভেতরে পরিত্যক্ত গভীর নালায় গজিয়ে ওঠেছে ধানের চারা। গাঢ় সবুজের এই দৃশ্যমান কৃষিখন্ড দেখলে যে কেউ কৌতুহলবশতঃ দাঁড়িয়ে যাবেন।

কর্দমাক্ত ঘোলাটে পানির ওপর ভাসমান অবস্থায় স্থীর আছে রোপা-আমনের দর্শনীয় বীজতলাটি। কুচুরিপানা ও মাটিকে প্রক্রিয়াজাত করে প্রস্তুত করা হয়েছে বিয়ার-২২ ধানের বপন উপযোগী এই বীজতলা। যা ধীরে ধীরে রোপণ উপযোগী হয়ে উঠছে।

আর কিছুদিন পরেই হয়তো তা তোলে জমিতে রোপণ করা হবে। পরে রোপণকৃত এই বিয়ার-২২ ধানের গুচ্ছসারি হেমন্তের নবান্ন উৎসবে কৃষক-কৃষাণীর আনন্দ খোড়াকে পরিণত হবে।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের দুই ব্লকে ভাসমান বেডে ধানের চারা বপন করা হয়েছে। পরিত্যক্ত খাল ও ডোবায় কলাগাছের ভেলায় বাঁশ ও দাড়ির পাটাতনে কচুরিপানা পঁচিয়ে তার ওপর মাটি দিয়ে বীজতলা প্রস্তুত করে তাতে ধান চারা উৎপন্ন করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন নোয়াগাঁও ব্লকের চাঁনবাড়ি গ্রামের কৃষক ইকবাল হোসেন ও লালবাজার ব্লকের গোলামীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল খালিক।

এই দুই কৃষক জানায়, তাদের এই উদ্যোগে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

জানা যায়, বন্যা বিপর্যস্ত দুর্যোগে কাবু কৃষক সম্প্রদায়কে আপদকালীন সুবিধা পাইয়ে দিতে জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই ভাসমান কার্যক্রমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন।

সূত্র জানায়, উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের পতিত বিল বা ডোবায় ভাসমান বেডে ধান বীজ বপনে উদ্বুদ্ধকরণ ও কারিগরী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এতে ফলনও ভালো হবে এবং পানিতে ডোবার আশঙ্কাও থাকবে না।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভীমখালী ইউনিয়নের টানবাড়ি গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে মোঃ ইকবাল হোসেন তার বাড়ির সামনের পতিত খালে কলা গাছের ভেলায় বাঁশ ও দাড়ি দিয়ে চাটাই তৈরি করে তার ওপর কচুরিপানা ও মাটি দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে ধানের বীজ বপন করেন। সেই বপনকৃত ধান অঙ্কুরিত হয়ে চারায় রূপান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে চারার বয়স প্রায় পনেরো দিনে পৌঁছেছে। আর সপ্তাহখানেক পরে এই চারা জমিতে রোপণের পর একই বেডে লালশাক ও ডাটা বপন করবেন বলে জানিয়েছেন কৃষক ইকবাল হোসেন।

তিনি বলেন, এক সাথে দুইডা চাষ কইরা আমরা উপকার পাইমু। ধান ও সবজি দুইডাই হইয়া যাইব একখানে।

লালবাজার ব্লকের গোলামীপুর গ্রামের অপর কৃষক আব্দুল খালিক একই রকমভাবে ধান বীজ বপন করেছেন। বাড়ির পেছনে সুনামগঞ্জগামী সড়কের পার্শ্ববর্তী পরিত্যক্ত ডোবার কোমর পানিতে কচুরিপানা ঠেলে তিনি জায়গাটি চাষাবাদের উপযোগী করে গড়ে তোলেন।

আব্দুল খালিকের পরিচর্যায় অঙ্কুরিত ধান চারা রোপণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তার ধান চারার বয়স সপ্তাহ দশদিন হয়েছে। সময় হলেই তিনি তা উপড়িয়ে জমিনে রোপণ করবেন বলে জানান।

উপজেলা সহকারী কৃষি উপ-পরিদর্শক সত্যেন্দ্র কুমার দেবনাথ ও সাইদুল ইসলাম রুবেল বলেন, রোপা-আমনের এ মৌসুমে প্রায় সময়ই বন্যাক্রান্ত হন কৃষক। তখন বীজতলা ডুবে গেলেও ভাসমান প্রক্রিয়ায় তারা যাতে বন্যা সমস্যা উৎরিয়ে উঠতে পারেন সে ব্যাপারে আমরা বিভিন্নভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। কৃষকরা যাতে ভাসমান বেডে ধান চারা উৎপন্ন করে সুবিধাভোগী হয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার কবল থেকে তাদের রক্ষা করতেই আমাদের এ প্রয়াস।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম বদরুল হক জানান, আকস্মিক বন্যার কারণে রোপা-আমন ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে করে চারার অভাবে কৃষকের অনেক জমি পতিত থেকে যায়। অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে চারা তলিয়ে গেলে কৃষক সঙ্কটের মুখোমুখী হন। এ সমস্যা সমাধানে ভাসমান বেডে রোপ-আপন ধানের বীজতলা তৈরি করে ১৫ থেকে ২০ দিনেই চারা জমিতে রোপণ করা যায়। কৃষকেরা সঠিক সময়ে সঠিক বয়সের চারা রোপণ করতে পারেন। ফলে রোপা-আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়।

আকস্মিক বন্যা হতে রোপা-আমন আবাদে এটি একটি বড় প্রযুক্তি বলে ধরে নেয়া যায়, বলেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

আজকের বাজার/এমএইচ