জেব্রাফিশের দ্রুত চলার রহস্য লুকানো মস্তিষ্ক ও লেজে

সাদা কালো গায়ের রং। অসম্ভব সুন্দর এক মাছ জেব্রা ফিশ। অ্যাকুরিয়াম প্রেমীদের কাছে অতি পরিচিত এই মাছটি। বিশ্ব জুড়েই স্বচ্ছ পানির ছোট মাছ জেব্রাফিশ বেশ জনপ্রিয়। শুধু দেখতেই নয় বরং মাছটি দ্রুতগতির জন্যও বেশ প্রশংসিত। গবেষকদের কাছেও বেশ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মাছটি। বেঙ্গালুরুর সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের গবেষকরা মাছটি নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা চালিয়েছেন। তারা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন কীভাবে প্রতিকূলতার মাঝেও সাবলীলভাবে দ্রুত চলতে পারে জেব্রাফিশ। উর্বশী ঝাঁ এবং ভাটশাল থিরুমালাই এর নেতৃত্বাধীন দল জেব্রাফিশের উপর গবেষণা করেন। তারা এই মাছের লার্ভাতে ‘অপটোমটর’ খুঁজে পান। এই অপটোমটর হলো একটি স্নায়ুবিক কোষ। এই কোষের সাহায্যেই জেব্রা ফিশ সাবলীলভাবেই দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারে।

গবেষকরা আরো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন কীভাবে একটি মাত্র স্নায়ুবিক কোষ মাছটির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে?  গবেষকরা অপটোমটর প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য ল্যাবরেটারিতে মাছের নিচে সাদা ও কালো রঙের ছোট বারের সঙ্গে স্ক্রিন রাখেন। এরপর তারা সাদা এবং কাল বার নাড়িয়ে অপটোমটর কোষটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। মাছগুলো স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তনরত বারের সঙ্গে মিলিয়ে সাঁতরাতে থাকে। আরো দেখা যায়, পানিতে কার্যকারী ডোপামিন রিসিপটর ওষুধ মিশিয়ে দিলে মাছগুলো আরো দ্রুত সাঁতার কাটছিল। গবেষক দল দেখতে পান, মাছগুলো লেজ নাড়িয়ে দ্রুত সাঁতার কাটছে। জেব্রাফিশের লেজের নড়াচড়ার কারণ হলো মটোর নিউরন থেকে প্রেরিত মাংস পেশিতে বৈদ্যুতিক সংকেত। দেখা যায়, মটর নিউরনের উপর ডোপামিনের সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় মাছের লেজের নড়াচড়া বৃদ্ধি পায়। গবেষকদের প্রাপ্ত ফলাফল নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। কারণ মটর নিউরন যে আচরণগত পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা স্পষ্টত। জেব্রা ফিশের দ্রুতগতির কারণ উল্লেখিত গবেষণাপত্রটি কারেন্ট বায়লোজি জার্নালে এই প্রকাশিত হয়। গবেষণাপত্রটির লেখিকা মিস ঝাঁ ব্যাখ্যা করেন, জেব্রাফিশ আচরণগত দিক থেকে বেশ সুগঠিত। বর্তমানে আমরা জেব্রাফিশের লেজে থাকা মটর নিউরন নিয়ে পরীক্ষা করছি। যার উপর ডোপামিনের প্রতিক্রিয়া বাড়ে। এভাবেই মাছের স্পাইনাল কর্ড নিয়েও সামনে পরীক্ষা করবেন বলে আশাবাদী এই গবেষক। অন্যদিকে প্রফেসর থিরুমালাই বলেন, আমরা এরই মধ্যে দেখেছি জেব্রাফিশের মেরুদণ্ডে প্লাস্টিসিটি রয়েছে। এ নিয়ে যদিও বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন। এছাড়াও এর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মস্তিষ্কের সংকেত অনুযায়ী নড়াচড়া করে। তবে এর লেজ নাড়ানোর বিষয়টির পরিবর্তন ঘটে শুধু মটর নিউরন বেড়ে গেলেই। এজন্য প্রয়োজন হয় ডোপামিন।

আজকের বাজার/শারমিন আক্তার