ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে মেয়াদোত্তীর্ণ তিস্তা রেল সেতু

মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার প্রায় ৯০ বছর পরেও লালমনরিহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার সংযোগকারী ঝুঁকিপূর্ণ তিস্তা রেল সেতু পারাপারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ঐতিহাসিক এ সেতুর রেলপথ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৮টি ট্রেন চলাচল করে।

নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে ১৮৩৪ সালে লালমনরিহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার সংযোগকারী ২ হাজার ১১০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটি নির্মাণ করে। সেতুটি নির্মাণের সময় এর স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছিল ১০০ বছর।

নিমার্ণের প্রায় দুই শতাব্দীর পরেও বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট জোনের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ শফিকুর রহমান এ সেতুটি এখনো ততটা ঝুকিপূর্ণ নয় বলে দাবি করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। বেশিরভাগ কাঠের স্লিপারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে এবং অধিকাংশ রেলপথে ব্যবহৃত ক্লিপগুলো চুরি হয়ে গেছে। তিস্তা রেল সেতুতে ব্যবহৃত কাঠগুলো পঁচে যেতে শুরু করেছে এবং অনেক জায়গায় স্লিপারের সঙ্গে রেলপথ আটকানোর জন্য ব্যবহৃত লোহার প্লেটগুলো নেই। এছাড়াও সেতুর পাশে দুই সারির জোড়ায় ব্যবহৃত ফিসপ্লেটে চারটি নাট-বল্টু থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছে তিনটি।

দিনের পর দিন রেলপথটি ঝুঁকিতে থাকলেও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, বুড়ীমারি স্থলবন্দর দিয়ে নতুন আরেকটি সংযোগ পথ হয়ে গেলেই সরকার ঝুঁকিপূর্ণ লালমনিরহাট রেল সেতুর পাশে আরও একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেবে।

এছাড়া রেল বিভাগের কর্মকর্তারাই মেয়াদোত্তীর্ণ তিস্তা রেল সেতুর ভয়াবহ অবস্থার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাদের দাবি বিট্রিশ আমলের তৈরি বলেই এখনো চলছে।

বাংলাদেশের মানুষের কাছে ট্রেন এখনো অনেক বেশি পছন্দের এবং ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্রেনকেই সবাই বেছে নেন। তবে, রেলপথের ঝুঁকিপূর্ণ পথগুলো অনেকসময় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

গত ২৩ জুন বারমচল রেলস্টেশনের কাছে বারোচরা খালের ওপর ঢাকাগামী ‘উপবন এক্সপ্রেস’ এর ছয়টি কোচ রেলপথ থেকে ছিটকে পড়ে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে রেল সেতুর খারাপ অবস্থার কথা তুলে ধরলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসকল সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না।

গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে সড়ক ও রেলপথের সকল সেতু বা কালভার্টের অবকাঠামো নিয়ে জরিপ করার নির্দেশ দেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্থ সেতুগুলোর সংস্কারে নির্দেশ দেন।

গত ২৫ জুন একনেক ৪০৮টি সেতুর অনুমোদন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শফিকুর।

তিনি দাবি করেন, যদিও তিস্তা সেতু মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে তারপরও এটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। আমরা এর পশ্চিম পাশে একটি ডাবল ব্রডগেজ রেলপথ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করছি।

তবে স্থানীয়রা এ নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। রফিকুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনগুলো এ সেতু দিয়ে আসা যাওয়া করছে। আমরা যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আছি।

তিনি বলেন, ‘বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’ তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ