তারকাদের জীবন ও আত্মহত্যার বিরুদ্ধে করণীয়

নীরা কয়েকদিন ধরে খুবই মন খারাপ। সে মেধাবী ছাত্রী তবে একটা সমস্যা আছে। ওর কথা জড়িয়ে যায়। ক্লাসে এটা নিয়ে বন্ধুরা খুবই হাসাহাসি করে। অনেক সময় মারাত্মক বিদ্রুপের শিকার হতে হয় তাঁর। কাউকে মুখ ফুঁটে বলতে পারছেনা। বাবা দেশের বাইরে থাকেন। মা চাকরিজীবী।
প্রচন্ড অভিমানী নীরা অবশেষে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে।

এরপর বাবলু। বাবলুও পড়াশোনায় ভালো। ওর সমস্যা গঠন নিয়ে। ওর স্বাস্থ্য অনেক বেশি ভালো। বেশিক্ষন খেলাধূলাও করতে পারে না সে কারনে। একবার খেলার শিক্ষক সবার সামনে তাকে যা নয় তাই বলে দিলো।

ভাষা হচ্ছে এরকম,”তোর বাপ, মা তোকে বেশি না খাইয়ে গরীবদের খাওয়াতো তো আজকে এমন হতো না? সাজুকে দেখ ছিপছিপে গড়ন কত ভালো খেলে। ওরা গরীব, এমন ধনী হয়ে লাভ কী? গরীবদের না দিয়ে খাস এবার বোঝ!

উপরের যে কথাগুলো এগুলি খুবই মারাত্মক, একটা পরিণত মানুষকে এই কথা দিয়েই ঘায়েল করতে যথেষ্ট।
আর এই বাবলু অথবা নীরা এসব কাল্পনিক চরিত্র। যদিও আমাদের সমাজে এরকম অপমানজনক কথা অনেকের কাছেই পরিচিত। সেটি ব্যক্তিগত জীবনে না হলেও সামাজিক ভাবেও আমরা জানতে পারি পত্র পত্রিকা অথবা টিভি খবরে।

নীরা এবং বাবলু কোমলমতি শিশু, কারণ তারা এখনও স্কুলে পড়ে, অনেক সময় বাচ্চারা মা, বাবার কাছে মন খুলে বলতেও পারে না। আবার এমন অনেক বাবা,মা সন্তানের ব্যাপারে খুবই উদাসীন।

নীরা যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছিল তাতে শিরোনাম দেখেই বোঝা যায় যে কতটা গর্হিতপূর্ণ কাজ করতে উদ্যত হয়েছিল। কিন্তু এমন কিছু হয়নি, কারণ তার দাদী মা কয়েকদিন হয়েছে দেশের বাড়ি থেকে এসেছেন। নীরার মা মীরা সুলতানা অফিস নিয়ে ব্যস্ত।সে যে অফিসে কাজ করে সেখানে বিদেশী ক্লায়েন্টস, এম্বাসাডর আসেন। অদ্ভুত বিষয় তিনি নিজেই বেসরকারি পর্যায়ে শিশুদের নিয়ে কাজ করেন।কারন তার চাকুরি ইউনিসেফ এর প্রতিষ্ঠান। অথচ তাঁর নিজের মেয়ে প্রচন্ড স্নায়ুচাপে ভুগছে সে খবর নেই ওনার?

নীরার কি এই গর্হিত বিষয় নিয়ে ভাবার বয়স হয়েছে? গর্হিত কথাটির অর্থ কী তাও সে জানেই না ভালোভাবে।

আর বাবলু সেও নীরার মতোন এক সন্তান। বাবলুর মা মারা গিয়েছে কয়েকবছর পূর্বে। বাবা আলম তিনি তো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আলম সাহেব পরবর্তীতে আর বিয়ে করেননি। তবে আলমের মা মাহমুদা বেগম, বাবলুকে আগলে রেখেছে।
বাবলুর বেড়ে যাওয়া স্বাস্থ্য এটা ওর রোগ। ইংরেজিতে একে বলা হয়, কোয়াশিওকোর।

তাছাড়াও ওর থাইরয়েডের প্রবলেম আছে। আমাদের দেশে অনেকেই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিচিত নন। আলম সাহেবের কাজ হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া অর্থাৎ তিনি চিকিৎসক।

এবার আসি তারকাদের আত্মহত্যা প্রসঙ্গে। গত ১৪ জুন ২০২০ সালে সুশান্ত সিং রাজপুত নামক বলিউড তারকার আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। এরকম একজন তরুণ, সুদর্শন তারকার মৃত্যুর খবর ভারতে শুধু নয় আমাদের দেশেও প্রভাবিত করেছে।
অবশ্য তারকাদের মৃত্যু কিংবা এ ধরনের আকস্মিক মৃত্যু আত্মহত্যা যাই হোক আজও রহস্য উদঘাটিত হয়নি।
কি কারনে তাঁরা আত্মহত্যা করেন? বলিউডে অভিনয় জগতে এসে যে স্বপ্ন তারা বুনেন সে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেই আত্মহত্যা করেন? মানসিক আঘাত,প্রেম বিরহ আর্থিক কোন সমস্যা সহ্য করতে না পারা ইত্যাদি বিষয়গুলো তখন জানার আগ্রহ থাকে তাদের ভক্ত এবং সাধারণ মানুষের মনে।

এমনকি তারকাদের মৃত্যুর খবরে কেউ নিজের প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দেন! এ বিষয়টি বাংলাদেশেই ঘটেছে।
নব্বই দশকে জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহের মৃত্যুতেই ঘটেছিল! অনেক ভক্তের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গিয়েছিল এমন সাড়া জাগানো নায়কের মৃত্যুর খবরে। সে সময়টা তখন আমি স্কুলে পড়ি। স্কুলের পরীক্ষা চলছিল তাই ঐ সময়ে বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দিতে পারিনি। পরীক্ষা শেষ হবার পরপরই ক্লাসে রীতিমতো আলোচনার ঝড় উঠেছিলো!
সালমান শাহের যত ভিউ কার্ড সব বিক্রি হয়ে যেতো। তাকে ঘিরে নানান ম্যাগাজিন বের হতে লাগলো।
যদিও সালমান শাহের বাংলাদেশী ছায়াছবিতে অভিষেক ঘটার সাথে সাথে সাড়া পড়ে গিয়েছিলো।প্রিয় দর্শিনী তারকা মৌসুমির সাথে সালমান শাহের প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল আকাশচুম্বী। সেসময়ে তাদের বলা হতো হার্ট থ্রুব।যদিও এই শব্দটা আমার কৈশোর জীবনে একেবারে নতুন।
সালমান শাহের ছায়াছবি হাতে গোনা দু একটা দেখেছি সবে, এর ভেতরই তার অকাল মৃত্যু!আমার নিজের কাছে পুরোপুরি অবাস্তব মনে হচ্ছিলো।
এর পর বড় ভাই, বোনের সাথে ছবিঘরে গিয়ে তার অভিনীত চলচ্চিত্র দেখলাম।
বয়স যদিও কম ছিল,তবে বড় ভাই বোনদের কথার সাথে একমত পোষণ করতাম তার জাদুকরী অভিনয় দেখে।
তখনও শহরে লাগেনি এতটা আধুনিকতার ছোঁয়া।কিন্তু সালমান শাহ ফ্যাশনে নিত্য নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল,ঢাকাই চলচ্চিত্রে পদার্পন করেই। একের পর এক ছবিগুলোতে ফুটে উঠতো নায়ক সুলভ ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল। ১৯৯৬ সালের ঘটনা এটা।

তার পূর্বে টিভি নাটকে অভিনয় করতেন সালমান।সেটা অবশ্য পরে জেনেছি এবং দেখেছি। সালমান,শমী কায়সার অভিনীত বাংলা নাটক দেখে রীতিমতো মুগ্ধ বিস্ময়ে মন ছুঁয়ে যেতো। একপাশে মুগ্ধতাকে রেখে অন্যপাশে বিষন্নতা ভর করতো তার মতো নায়কের চলে যাওয়ায়।

ঠিক সে সময়টা ঐ বয়সে আমার মনে যে উপলব্ধি তৈরি করেছিল, আজ এতবছর পর আবারও হলো তেমনটা!
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুটা একটু মিলিয়ে দেখলাম।সেও ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিতে আসার পূর্বে টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করতো।
জিটিভিতে প্রচারিত ‘পবিত্র রিশতা ‘ নামক জনপ্রিয় সিরিয়ালে সুশান্ত ছিল ‘মানাভ ‘ নামক চরিত্রে।
‘আর্চনা’ নামক চরিত্রের নায়িকা আঙ্কিতা লাখোন্ডে তাঁরই প্রেয়সী।এসব অবশ্য এখন জেনেছি।
কিন্তু তাদের প্রেমটি স্থায়ী হয়নি।

সুশান্তের ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিতে আসা আঙ্গকিতার সাথে প্রেমের পথে বাধা ছিল কিনা আমার জানা নেই।তবে এই তারকার মৃত্যুর পর নানান গল্প খেয়াল করলাম।
বেশ কয়েকজন সুন্দরী নায়িকাদের সাথে জড়িয়ে সুশান্তের জীবন কাহিনী কিংবা অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী।
একটি প্রেমও পরিণতি পায় নি।সে কারনেও কি তিনি বিষন্ন থাকতেন?
লেখাপড়ায় ভালো ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র সুশান্ত। সদা হাস্যজ্জ্বোল,তারুণ্য দীপ্ততায় ভরপুর এমন রাজপুতের এই পরিণতি ঠিক কী কারনে; সেটি নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুঙ্গে উঠছে ক্রমশ।সামাজিক যোগাযোগে তো আরও বেশি।একেকসময় বেরিয়ে আসছে অদ্ভুত তথ্য!কোনটির সাথে আবার কোনটির মিলও নেই।
মৃত্যুর পূর্বে প্রচন্ড ডিপ্রেশন ছিলেন।তার ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করতেন সেসব।
পরবর্তীতে অন্য একজন নায়িকা ও পরিচালককে দায়ী করে উঠে আসে তার মৃত্যুর কারণ!
আবার বলিউড বাদশা যাকে বলা হয় শাহরুখ খান, তিনিও বাদ যাননি দায়ীদের তালিকায়।

শাহরুখ ও শাহেদ কাপুরের সাথে একই স্টেজে সুশান্তকে মিমিক্রি করে লাঞ্চনার ভিডিও অনেক ভক্তদের মনে তীব্র ক্ষোভের উদ্রেক ঘটায়। ভিডিওতে কমেন্টস গুলো বিস্ফোরিত হয় তুমুল সমালোচনায়। সালমান খান,করন জোহর সহ আরো অনেক সুপারস্টাররাও অন্তর্ভূক্ত সে দায়ীদের তালিকায়।

বিষয়টি আমাকে ভীষণভাবে অবাক করেছে। এতদিন জানতাম যারা তুখোড় অভিনয় দিয়ে পর্দা কাঁপান তাঁরাই খলনায়ক কিংবা খলনায়িকা। একইসাথে মর্মাহত হয়েছি সত্যি যদি এসব খ্যাতিমান তারকা নতুন তারকাদের ভৎসনা করেন,কটূক্তি করেন নিঃসন্দেহে তাঁরা বাস্তবিক জীবনেই অভিনেতা বা অভিনেত্রী। ভক্ত সাধারণের মনে প্রশংসিত স্থানে থাকার আর কোন অবকাশই রইলো না। ভক্ত সাধারণের ভালোবাসা তুচ্ছ মনে করার কোনো কারন নেই। শেখারও নেই এমন দাম্ভিক তারকাবহুল আচরণ থেকে!

আবার বলা হচ্ছে সুশান্ত আত্মহত্যা করেননি।তার মৃত্যুটি স্বাভাবিক নয় এমন মতান্তরও দেখা যাচ্ছে এখন। তাঁর মৃত্যু রহস্য শেষ অবধি অজানাই থেকে যাবে, নাকি কিনারা পাবে সেটা বলবে ভবিষ্যৎ।

শুধু সালমান শাহ কিংবা সুশান্ত রাজপুত নয় এমন অনেক তারকার মৃত্যু রহস্য এখন পর্যন্ত রহস্যই থেকে গিয়েছে। তারকাদের আকস্মিক মৃত্যু কিংবা অস্বাভাবিক মৃত্যু কোন এক রহস্যের নীল জালে আবৃত এখন পর্যন্ত! সেটা প্রায় সবকটা মৃত্যু পর্যালোচনা করলেই তাজ্জব হতে হয়। তবে যেকোন তারকা বা শিল্পী সত্যি মনে আহত হয়ে প্রচন্ড অভিমানের বর্শবর্তী হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন সেটা মারাত্মক ভুল এবং অপরাধ।আত্মহত্যা মহাপাপ, কাপুরুষোচিত কর্মকান্ড এসব বিষয় জানিয়ে নিরুৎসাহিত করতে হবে। সর্বসম্মতভাবে নিরুৎসাহ নিজেদেরও বাড়াতে হবে এসবে।

কারো মন খারাপ বা প্রবল হতাশার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অবগত হলে তার সাথে কথা বলা যায়।নেতিবাচক বিষয় নিয়ে অযথা অস্থির না হওয়া,চিকিৎসকের কাছে যাওয়া,নিয়মমত শরীর চর্চা,প্রার্থনা,বিশ্রাম,ধ্যান করা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া, ছবি আঁকা, গান শোনা ইত্যাদি যা ভালো লাগে সেসব পরামর্শ দেয়া যায় বার্তা পাঠিয়ে।

এসব বিষয় লেখার উদ্দেশ্য সন্তান। এবার আসি কেন সেটা।

ব্যক্তিগত জীবনে কত মানুষই পরিচিত হই আমরা। পরিচিত হলেই বন্ধু হয় না বা কাছের কেউ। এই বন্ধুর ভেতরেও ওঁৎ পেতে থাকতে পারে মুখোশধারী শক্র। যাদের নিতান্ত অপ্রাসঙ্গিক আচরণ মনকে ব্যথিত করে। এমন মনে হলে পূর্বেই সঙ্গ ত্যাগ করা বাঞ্চনীয়।

জীবনে মহামূল্যবান সম্পদ হচ্ছে সেই সন্তান।রাত্রিরে ঘুমানোর পূর্বে একবার হলেও খেয়াল করুন,
আপনার কোমলমতি সন্তান ভালো আছে তো?
কেউ এমন কিছু বলে তাকে আহত করেনি তো যাতে তার আত্মসম্মানকে গলাটিপে মেরেছে।যা থেকে এমন ভয়াবহ প্রবনতায় ঝুঁকে পড়ছে।

আমি অবশ্যই ঘৃনা করি এসব।কোমলমতি কেন কেউ যদি পরিণত কাউকে খুবই বাজে খুবই নোংরা একটা কটুক্তি করে বসে তবে সে আর যাই হোক মানুষ নয়।নামে মানুষ কর্মে নয়। ব্যবহারে যে অমানুষ তাদের দেয়া আঘাত একটা হৃদয়কে যে কতটা ক্ষতবিক্ষত হয় সেটা বলাই বাহুল্য।

সন্তানের ব্যাপারে এটাই বলবো,কেউ যদি সে অমানুষের কাজটি করে তাহলে যারা অভিভাবক অর্থাৎ বাবা, মা তাদের উচিত ভুলিয়ে দেয়া। সন্তানের সর্বোত্তম সুরক্ষায় তার পাশে থাকা।
দাদা,দাদি,নানা নানি,খালা,ফুপি মামা,চাচা অথবা বড় ভাই বোন তারাও ভূমিকা রাখবে।বিশেষ করে পরিবারের সদস্যের চাইতে আপন কেউ নয়।উপরে উল্লেখিত সদস্য তারা বন্ধু হয়ে উঠবেন।

স্কুল থেকেই শুরু হতে পারে সেটা। স্কুলে নতুন বন্ধুরা সবসময় ভালো ব্যবহার করবে না। এমন কোন কথা বা আচরণ মনে বাড়তি উত্তাপ ছড়াতেই পারে।
একজন মা সন্তানের চেহারা দেখলেই বুঝতে পারে। বাবাও পারেন।বাবা কিংবা মা সন্তানের সবচাইতে ভালো বন্ধু হলে সমস্যার সমাধান অনেকাংশে সহজ হয়।

স্কুল কিংবা কলেজ হোক, র‍্যাগিং নামক উপদ্রব এখন কারো অজানা নয়।শুধু র‍্যাগিং কেন ইভটিজিং অথবা অশালীন আচরণও সমাজে মারাত্মক ব্যাধি।
এসব ব্যাধির ছোবলে পড়লে বেঘোরে প্রাণ চলে যায়। অকাল মৃত্যুতে নেমে আসে অন্ধকার।
সমাজে এ ব্যাধি একবারে ঠেকানো যাবে না।কিন্তু পরিবারের ভিত্তি মজবুত থাকলে সম্ভব।

মীরার অনুপস্থিতে তার শ্বাশুড়ি মায়ের আগমনে নীরা মনে মনে যে অপরাধ সংগঠনের কথা অজান্তেই ভেবেছিল সেটি প্রতিহত হয়েছে। তার কারন নীরার মুখ দেখে তার দাদীমা ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন।
একই দৃষ্টান্ত দেই বাবলুর ব্যাপারে।
ক্রমাগত একটি রুমের ভেতরে বাবলু কষ্ট পেয়ে যখন খুব কাঁদছিল তারও দাদীমা একইভাবে বুঝতে পেরে ছিলেন।
দুজন দাদীমাই তাদের আদরের নাতি নাতনীকে কোলের কাছে আনেন।তারপর একটার পর একটা প্রশ্ন করে জানতে পারেন কষ্টের মূল কারণ।

এখন প্রশ্ন দাদীমা ছিল বিধায় দাদীমার কাছে সব বলে আদর সেবা যত্ন পেয়ে বাচ্চা দুটো কষ্ট থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিল। কিন্তু যাদের দাদী মা নেই তারা কী করবে?
তারা সেটাই করবে যেমন পূর্ববর্তীতে বলা হয়েছে। পরিবারের সদস্য অথবা সবচাইতে আপন যে বা যারা তাকে বা তাদের কাছেই বলতে হবে।
কাছে যদি কেউ না থাকে তাহলে?

এমন কোন বন্ধু পরিবারের সদস্যের মতোই আপন তাকে বলতে হবে।
এরপরও মানসিক যে কষ্ট যেমন শ্লীলতাহানি হলে আত্মহত্যাকেই বেছে নেন এ অসহনীয় অপমান থেকে মুক্তির জন্যে। তাদেরকে বেঁচে থাকার পক্ষে সমর্থন যোগাতে হবে জীবনঘনিষ্ঠ পরামর্শে।উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বেঁচে থাকার সংগ্রামে সাহস যোগাতে হবে।

পরিবারের সদস্য বা কাছের বন্ধু তখন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন।বর্তমানে কাউন্সিলিং খুবই ভালো সেবা দিয়ে থাকে।
একজন ভালো মনোচিকিৎসক তার চমৎকার ভাষায় যখন উক্ত ব্যথিত মনের কাউকে বোঝাতে যান তখন ব্যথা অনেকাংশে প্রশমিত হয়। এটি একারণে হয় কারণ তিনি যে ভালোবাসা ও মমতা নিয়ে কথা বলেন তাতে উক্ত রোগী সম্মানিত বোধ করেন। মনোচিকিৎসক পরামর্শের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ঔষধ ও ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন।
এভাবে আস্তে আস্তে আহত হৃদয়ের মানুষটি তার সম্মান ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।

তবে পরামর্শ যেই দিক না কেন ভালোবাসা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহনযোগ্য। একজন পরামর্শ দাতা ভালোবাসা ও মমতা নিয়ে যখন ব্যথিত মনের কাউকে বলবে তখন রোগী আপনা থেকেই সেড়ে উঠবে।

পরিবারে মা সন্তানকে কোলে চেপে সকল কলুষিত বিষয় মাতৃত্বের জাদুকরি আবেশে যারপরনাই ভুলিয়ে দিতে সক্ষম।তার স্নেহমাখা আদর, সোহাগের স্পর্শ আর সেবায় ফিরিয়ে আনবে সব যা সে হারিয়ে ছিল। ফিরে পাবে প্রশান্তিকর অনুভব। তেমন বাবার বুকে মাথা দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় পরম নির্ভরতার আশ্রয়,কতই না কোমল আর তৃপ্তির সেই কোল।
সন্তানের সকল কর্মকান্ড খোঁজ রাখা তার বিষয়ে সজাগ সচেতন দৃষ্টি বেড়ে গেলে আত্মহত্যার মতো মহাপাপ ঠেকানো সম্ভব। তেমনি সম্ভব সামাজিক এ ব্যাধি থেকে কল্যানকর নিষ্কৃতি।

হাসিনা সাঈদ মুক্তা
ক্যান্টনমেন্ট,ঢাকা