দেশি মুরগি চিনুন সহজে

বাংলাদেশে মুরগির ব্যাপক চাহিদা। স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে ব্রয়লার মুরগীর চেয়ে চাহিদা বেশি মুরগির চাহিদাও বেশি। আমাদের দেশে বর্তমানে পোলট্রি ব্যবসা বেশ জমজমাট। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর সব যায়গায় মুরগীর ব্যপক চাহিদাই এর কারণ। এমনকি শহরের কিছু কিছু বাড়ির ছাদেও গড়ে ওঠেছে এ শিল্প । আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে মুরগীর খামার গড়ে ওঠার কারণে। কিন্তু দেশি মুরগি ও বেশি ডিম দেয়া মুরগি চেনাটা এর জন্য জরুরী। আাবার দেশি মুরগি না চেনার কারণে বাজারে বিক্রেতারাও পাকিস্তানি মুরগিকে দেশি মুরগি বলে গছিয়ে দেন।

দেশি মুরগি চেনার সহজ কিছু উপায়:

– দেশি মুরগির ঠোট সমান, চোখা ও ধারালো হবে।
– দেশি মুরগি চঞ্চল ও ছট ফটে স্বভাবের হবে।
– দেশি মুরগির শরীরে বিভিন্ন রং মেশানো থাকে অথবা একবারে কালো হবে।
– দেশি মুরগির মাংস হালকা বাদামি বণের হয়।
– দেশি মুরগির মাথার ঝুটি গাঢ় লাল থাকে, হালকা হয়না।
– দেশি মুরগির পা মসৃণ হয় না।

তবে শুধু মুরগির পা দেখে দেখে দেশি মুরগি চেনার চেষ্টা করাটা বোকামি কারন দেশি ও পাকিস্তানি উভয় ধরনের মুরগিরই হলুদ ও সাদা পা হয়ে থাকে।

বেশি ডিম দেয়া মুরগি চেনার উপায়:

১. যেসব মুরগির মাথা ছোট, হালকা এবং মাংশল অংশ কম থাকে, মাথার ঝুঁটি ও গলার ফুল হবে উজ্জ্বল লাল রঙের হয় সেসব দেশি মুরগি ডিম বেশি দেয়।

২. মুরগির দেহ সুগঠিত হবে। পরিমাণমতো খাদ্য ও পানি পান করবে, যে কারণে খাদ্যথলিতে খাবারে ভর্তি থাকবে। পেটে ডিম অনুভব হলে অবশ্যই ওজনে ভারি হবে। এধরনের মুরগির পিঠ হয় লম্বা ও প্রশস্ত। শরীরের কোনো অংশে খুঁত থাকবে না, বিকলাঙ্গ হবে না।

৩. সুস্থ অবস্থায় মুরগির পালক উজ্জ্বল ও সুবিন্যস্ত থাাকে। এ ধরনের মুরগি সাধারণত মার্চ মাসের দিকে পালক পাল্টায়। তবে মাথার উপরিভাগের পালক শূন্য হয়ে টাকের সৃষ্টি হয়।
৪. সুস্থ মুরগির পা থাকবে সুন্দর ও সুগঠিত। মুরগির পা’র মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাহাঁটি করবে।
৫. স্বাস্থ্যবান মুরগি সব সময় চঞ্চল থাকে এবং খাবার খুঁজতে ব্যস্ত মনে হয়। হঠাৎ কোনো শব্দ হলে অথবা শত্র“র উপস্থিত বুঝতে পারলে মুখে এক ধরনের শব্দ করে স্বজাতিকে সতর্ক করে দেয়। কেউ ধরতে গেলে দৌড়ে পালায়।

৬. ডিম পাড়া মুরগির মলদ্বার হবে প্রশস্ত ও ডিম্বাকৃতি। পরীক্ষা করলে সেখানে আর্দ্র ও রক্তাভ দেখাবে। মলদ্বারের উভয় পাশে হাত দিলে পাছার হাড় অনুভব করা যায়। উৎপাদনশীল মুরগির দুই হাড়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব হবে দু’ইঞ্চি।

৭. মুরগির তলপেটে হাত দিয়ে বুঝা যাবে এর ডিম ধারণের ক্ষমতা । ডিম দেয়া অবস্থায় তলপেট প্রশস্ত ও নরম থাকে। মুরগি ডিম পাড়া অবস্থায় বুকের হাড়ের নিম্নভাগ এবং পাছার উভয় হাড়ের মাথা পর্যন্ত দূরত্ব হবে দু’ইঞ্চি। মুরগির তলপেটে মেদ থাকবে না এবং চাপ দিলে পেটের ভেতর ডিম অনুভব হবে।

৮. মুরগির চামড়ার নিচে কোনো মেদ জমা থাকবে না। চামড়া হবে পাতলা ও নরম ।

৯. সুস্থ অবস্থায় মুরগির দাঁড়ানোর ভঙ্গি স্বাভাবিক থাকবে। পাখি দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে।

১০. ডিম পাড়ার সাথে সাথে মলদ্বার, ঠোঁট, ঝুঁটি, গলার ফুল ও পায়ের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করে। রঙ পরিবর্তন শেষ হলে বুঝতে হবে ডিম পাড়ার সময় শেষ।

১১. বেশি ডিম দেয়া মুরগির আচরণ হবে সতর্কভাব, ভদ্র ও চঞ্চল। ডিম পাড়ার সময় বাসায় ঢুকবে, কোনো সময় অলস বসে থাকবে না । ডিম পাড়া মুরগির পিঠে হাত রাখলে সহজেই বসে পড়বে।

যেহেতু মুরগীর ও ডিমের চাহিদা প্রচুর আর দেশে বেকারত্বেও হারও দীঘ তাই সুস্থ এবং উৎপাদনশীল মুরগির খামার করে অনেকেই এই বেকারত্বকে জয় করতে পারেন। ইতোমধ্যে এমন অনেক উদাহরণও আমাদের সামনে রয়েছে। তাই সুস্থ এবং উৎপাদনশীল মুরগি চিহ্নিত করে তবেই পালন করা উচিত। এতে একদিকে যেমন রোগবালাইয়ের সম্ভাবনা কম থাকবে, তেমনি খামারি হবে লাভবান হবেন।

 

আজকের বাজার / মিথিলা