দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনের কাজ

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল রেল লাইনের নির্মাণ কাজ। চলতি বছরের জুনের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন রেল কর্তৃপক্ষ। দিন-রাত কাজ করছেন দেশি বিদেশি শ্রমিকরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডাবল রেললাইন নির্মাণ কাজ শেষ করতে চলছে এ মহাকর্মযজ্ঞ।

এদিকে ডাবল রেললাইন নির্মাণকাজের অগ্রগতি দেখতে প্রায়ই ছুটে যান রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ উর্ধ্বতম কর্মকর্তারা। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল রেললাইনের নির্মাণ কাজের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছেন। সে কারণে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী, আগামী জুনেই রেল চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। ডাবল রেল লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ হলে জ্বালানি তেল খরচ যেমনি কমবে তেমনি সময়েরও সাশ্রয় হবে, কমবে দূরত্ব, একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়ে উঠবে রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের বাণিজ্যিক শহর হিসেবে পরিচিত চট্রগ্রামের।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের (কুমিল্লার লাকসাম-আখাউড়া) ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এ অংশের কাজ দ্রুত সম্পন্ন হলে নির্মিত ১৩৫ কিলোমিটার ডাবল লাইনের সুফল মিলবে। ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পুরোটাই (৩২৫ কিলোমিটার) ডাবল লাইনে উন্নীত হবে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে যাতায়াতে সময় কমবে প্রায় ২ ঘণ্টা। বর্তমানে এ পথে সোয়া ৫ ঘণ্টায় ট্রেনে পৌঁছানো যাচ্ছে। পুরো পথ ডাবল লাইন হলে মাত্র সোয়া ৩ ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন ভ্রমণ সম্ভব হবে। একই সঙ্গে একাধিক সরাসরি ট্রেনসহ আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু করা যাবে। এজন্য প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার সময় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ৩২৫ কিলোমিটার।

এর মধ্যে ডুয়েলগেজ ছিল ১১৮ কিলোমিটার। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পুরো রেলপথকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে এ রেললাইনের (ঢাকা-চট্টগ্রাম) ২৫৩ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ লাইনে উন্নীত হয়েছে। অবশিষ্ট ছিল কুমিল্লার লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার। আগামী জুনের মধ্যে এ অংশটিও ডুয়েলগেজ-ডাবল লাইনে উন্নীত করার লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে নির্মাণ কাজ চলছে। লাকসাম-আখাউড়া রেলপথটি ডুয়েলগেজে উন্নীত করার প্রকল্পটি ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে অনুমোদন পায়। ঠিকাদার নিয়োগে ২০১৫ সালের ৪ মে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৬ সালের ১৫ জুন ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েলগেজ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবি ঋণ দিচ্ছে ৪ হাজার ১১৮ কোটি ১৪ লাখ ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) দিচ্ছে এক হাজার ৩৫৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বাকি এক হাজার ২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্পের আওতায় ১৪৪ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ মেইন লাইন ও ৪০ দশমিক ৬০ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে। মেইল লাইনে ১৩২ পাউন্ড ও লুপ লাইনে ৯০ পাউন্ড রেলপাত ব্যবহার হবে। এ ছাড়া ১১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, ১৩টি মেজর ও ৪৬টি মাইনর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ১১টি স্টেশনের ভবন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে। ৬৮ হাজার ১৯০ বর্গমিটারের ইঞ্জিনিয়ার্স অফিস নির্মাণ করা হবে। লাকসাম-আখাউড়া রেললাইনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে জয়েন্ট ভেঞ্চার গ্রুপের মাধ্যমে কাজ করছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা যায়, দ্রুতগতির ট্রেন কিংবা বুলেট ট্রেন চালুর উপযুক্ত পথ হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই পুরো এ লাইনকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ৩২৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১১৮ কিলোমিটার ডাবল লাইন ছিল। পরে ২০১১ সালে টঙ্গী-ভৈরববাজার পথে ৬৪ কিলোমিটার ও লাকসাম-টিনকি আস্তানা পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ করা হয়। এদিকে আখাউড়া-লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন প্রকল্প সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দ্রুততার সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক মেশিন ও যন্ত্রাংশের সাহায্যে প্রকল্পের কাজ চলছে। ডাবল লাইন নির্মাণের পাশাপাশি এ পথের বিদ্যমান লাইনেও ডুয়েল গেজে রূপান্তরের কাজ সমান্তরালে চলছে।

‘আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ ও বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডিএন মজুমদার জানান, এ প্রকল্প যথাসময়ের মধ্যে সমাপ্ত করতে ব্যাপক চাপ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল রেল লাইনের নির্মাণকাজের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছেন। ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটির কাজ সমাপ্ত হবে ২০২০ সালের জুনে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি জয়েন্ট ভেঞ্চার গ্রুপের মাধ্যমে কাজ করছে। চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিটিএম জয়েন্ট ভেঞ্চার)। ইতিমধ্যে লাকসাম-আখাউড়া রেলপথের ডুয়েলগেজ কাজের অগ্রগতি প্রায় ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান