নগদ সহায়তা না বাড়ালে বন্ধ হবে হোম টেক্সটাইল শিল্প

দেশের রি-সাইকেল ইয়ার্ন অর্থাৎ কটন ওয়েস্ট, গার্মেন্ট ঝুট থেকে উৎপাদিত সূতা ব্যবহার করে আমরা হোমটেক্সটাইল এবং টেরি টাওয়েল পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানি করি। বস্ত্র ও বস্ত্রজাত সামগ্রীর মধ্যে হোমটেক্সটাইল এবং টেরি টাওয়েল পণ্যের মূল্য সংযোজন হার সর্বোচ্চ প্রায় সত্তর শতাংশ। হোমটেক্সটাইল ও টেরি টাওয়েল শিল্পের কাঁচামাল দেশিয় বিধায় এই শিল্পের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সরকার হোমটেক্সটাইল ও টেরি টাওয়েল শিল্পকে “উচ্চ অগ্রাধিকার শিল্প” হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

আমাদের এই হোমটেক্সটাইল এবং টেরি টাওয়ের শিল্পকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে অনেকগুলো হাউজ, কেমিক্যাল কারখানা গড়ে উঠেছে। আমাদের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ ডাইজ, কেমিক্যাল স্থানীয় সূত্র থেকে আমরা সংগ্রহ করতে পারছি। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিটেনশন হচ্ছে।

বর্তমানে হোমটেক্সটাইল এবং টেরি টাওয়েল রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। আমরা মনে করি, আগামী ৫ বছরে হোমটেক্সটাইল এবং টেরি টাওয়েল রপ্তানির পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে। তবে বৈশি^ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের কিছু সহায়তা প্রয়োজন।

প্রথমত, হোমটেক্সটাইল এবং টেরি টাওয়েল রপ্তানিকারকদের জন্য নগদ সহায়তার হার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা দরকার। প্রণোদনার হার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করতে হবে। নতুন পণ্য নতুন বাজার সহায়তার হার ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা দরকার। একই রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা, প্রণোদনা, নতুন পণ্য নতুন বাজার সহায়তার সর্বোচ্চ হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা জরুরী।

দ্বিতীয়ত, আগামী ৫ বছরের জন্য উত্তর এবং দক্ষিন আমেরিকার বাজারে হোমটেক্সটাইল এবং টেরি টাওয়েল পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নগদ সহায়তা প্রদান করা। যেমন- ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৪ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ শতাংশ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ শতাংশ সহায়তা প্রদান করা।

তৃতীয়ত, হোমটেক্সটাইল এবং টেরি টাওয়েল শিল্পের জন্য শূন্য হারে বা বিনা শুল্কে ১০-২০ কাউন্ট সূতা প্রকৃত ব্যবহারকারী কর্তৃক বন্ড ব্যতিত বেনাপোল স্থল বন্দরসহ সমূদ্র বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করার অনুমতি দেওয়া হোক।

চতুর্থত, হোমটেক্সটাইল এবং টেরি টাওয়েল শিল্পের কাঁচামাল কটন ওয়েজ রপ্তানি বন্ধ করা। প্রয়োজনে ৬ মাসের জন্য হলেও কটন ওয়েজ রপ্তানি বন্ধ রেখে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা যেতে পারে।

আপনাকে জানাতে চাই, বিগত সময়ে আমরা স্থানীয় স্পিনিং কারখানা থেকে আমাদের চাহিদা মত ১০, ১৬ এবং ২০ কাউন্টের সূতার সরবরাহ পেতাম এবং এসব সূতার মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন ছিল। কিন্তু ইদানিং আমরা স্থানীয় স্পিনিং কারখানা থেকে আমাদের চাহিদা মত সূতার সরবারহ পাই না এবং আংশিক পাওয়া গেলেও এসব সূতার মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় প্রায় ১৫-২০ শতাংশ বেশি।

সম্প্রতি আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি ডেনিম কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এসব কারখানা ৭-৩০ কাউন্টের সূতা ব্যবহার করছে, যা স্থানীয় স্পিনিং কারখানাগুলো সরবরাহ করে থাকে এবং এসব সূতার দাম এবং মান টেরি টাওয়েল খাতে ব্যবহৃত সূতার দাম এবং মানের চেয়ে উন্নত। এত স্থানীয় স্পিনিং কারখানাগুলো টেরি টাওয়েল সূতার পরিবর্তে ডেনিম সূতা তৈরী করছে। টেরি টাওয়েল কারখানাগুলো সূতার অভাবে তাঁদের রপ্তানি আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এমনকি বেশি দাম দিয়েও স্থানীয় স্পিনিং কারখানা থেকে সূতা সরবরাহ পাচ্ছে না।

অন্যদিকে বন্ড সুবিধা না থাকার দরুণ টেরি টাওয়েল কারখানাগুলো সূতা আমদানি করতেও পারছে না। সংগত কারণেই টেরি টাওয়েল কারখানাগুলোকে শূন্য হারে বা বিনা শুল্কে ১০-২০ কাউন্ট এর সূতা বন্ড ব্যতিত বেনাপোল স্থল বন্দরসহ সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করার অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন।

এসব প্রস্তাবনাগুলো যদি অচিরেই বাস্তবায় না করা যায় তাহলে আমাদের এই শিল্প কারাখানাগুলো পথে বসবে বা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।

এম শাহাদাত হোসেন সোহেল
প্রেসিডেন্ট, বিটিটিএলএমইএ
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টাওয়েল টেক্স লিমিটেড