নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশে বাজেটে ওয়েন্ডের ৮ দফা সুপারিশ

দেশের নারী উদ্যোক্তাদের অধিকতর বিকাশের লক্ষ্যে এবং নারী উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন ওমেন এনটারপ্রিনিওয়ার্স নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (ওয়েন্ড)। আজ ০২ মার্চ ২০১৯, শনিবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম মিলনাতনে সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবী তুলে ধরেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ড, নাদিয়া বিনতে আমিন।

সুপারিশগুলো হলো

১. সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান

২. ভ্যাটের হার হ্রাস
৩. করহার হ্রাস
৪. শুল্কহার হ্রাস
৫. ট্রেনিং ইনন্সিটিউট প্রতিষ্ঠা
৬. প্রতি বিভাগে সাপোর্ট সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা
৭. আন্তঃজেলা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মেলায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহায়ক নীতি প্রণয়ন
৮. বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন (বেজা), ইপিজেড-এ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে শিল্প স্থাপনে প্লটসহ সুযোগ সৃষ্টি

ড. নাদিয়া বিনতে আমিন বলেন, মাস্টারকার্ড ইনডেক্স অব উইমেন আন্ট্রেপ্রেনিউরস এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ব্যবসা ক্ষেত্রে মোট মালিকদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা ৩১.৬ শতাংশ, অর্থাৎ ৩১.৬ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা প্রতিনিয়ত দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য সরাসরি কাজ করছেন। অন্যদিকে নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া এসডিজি-৫ বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া আরো ১১টি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের সাথে নারীরা জড়িত। সুতরাং নারী উদ্যোক্তা তথা নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা ও স্বপ্ন পূরণ সম্ভব নয়। দেশের অর্থনীতিতে নারীদের এতো সব সম্ভাবনা ও অবদান থাকার পরও নারী উদ্যোক্তারা কাঙ্খিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ প্রদানের নীতিমালা প্রণয়ন করলেও নারী উদ্যোক্তারা এই সুবিধা পাচ্ছেন না। ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জটিলতা নানাবিধ শর্তের বেড়াজাল এবং উচ্চ সুদের কারণে প্রতিনিয়ত পুঁজি সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছে। এসব সমস্যা ও জটিলতা নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার ক্ষেত্রে বড় একটি বাধা।

ড. নাদিয়া বিনতে আমিন বলেন, সরকার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ প্রদানের নীতিমালা প্রণয়ন করলেও নারী উদ্যোক্তারা এই সুবিধা পাচ্ছেন না। ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জটিলতা নানাবিধ শর্তের বেড়াজাল ও উচ্চ সুদের কারণে প্রতিনিয়ত পুঁজি সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছে। এ বিষয়ে বিদ্যমান সরকারের নীতিমালা আরও সহজীকরণের মাধ্যমে তার কার্যকর বাস্তবায়ন দেখতে চায় নারী উদ্যোক্তারা। এছাড়া স্বল্প সুদে অবাধ পুঁজির প্রবাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা প্রধানতম সংকট নিরসনের জোর দাবী জানান তিনি। নারী উদ্যোক্তা দ্বারা পরিচালিত বছরে পঞ্চাশ লক্ষ্য টাকা টার্নওভার রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের শূন্য হারে ভ্যাট অব্যাহতির দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সিংহভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের। ফলে উচ্চ হারে ভ্যাট আরোপ করা হলে তারা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে পারবে না। ড. আমিন নতুন ভ্যাট আইনে তিনটি স্তরে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ হার নির্ধারণের সুপারিশ করেন। এছাড়াও আয়করের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বর্তমানে প্রচলিত করমুক্ত আয় সীমা তিন লক্ষ্যের পরিবর্তে পাঁচ লক্ষ্য টাকায় উন্নীত করার দাবী জানান। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় মেশিন ও মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ আমদানি এবং বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুযোগ প্রদানের সুপারিশ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ড. নাদিয়া বিনতে আমিন বলেন, দেশে কর্পোরেট করহার এশিয়া কিংবা বিশ্বের যেকোন দেশের চেয়ে অনেক বেশি। নারী উদ্যোক্তারা এ কারণে বড় ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে পারছেন না। ব্যবসাক্ষেত্র উদ্যোক্তাবান্ধব না হওয়ার কারণে নারীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগে উৎসাহিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি কর্পোরেট করহার সব পর্যায় থেকে আগামী তিন অর্থবছরে পর্যায়ক্রমে ৫, ৭ ও ১০ শতাংশ হারে কমানোর প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, কর্পোরেট কর কমিয়ে এই অর্থ দক্ষতা উন্নয়ন, অবকাঠামো এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সফলতার সাথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা একটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করে ড. নাদিয়া বলেন, এই প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের লক্ষ্যে নারীদের জন্য বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার কোন বিকল্প নেই। পেশাগত ও কারিগরি বিষয়ে নিডবেজ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকল্পে অনতিবিলম্বে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দাবী জানান। একই সাথে দেশের আটটি বিভাগে নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতি বিভাগে একটি করে সাপোর্ট সেন্টার করার জন্য দাবী জানান। দেশ-বিদেশে অনুষ্ঠিত মেলায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তারা যাতে পণ্যের বাজারজাতকরণের সুযোগ পায় সে লক্ষ্যে ইপিবির মাধ্যমে সরকার থেকে আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানে নীতিমালা প্রণয়নের দাবী জানানো হয়। এছাড়া সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ইকোনমিক জোন, বিসিক শিল্প নগরী, আইটি পার্ক ইত্যাদিতে নারী উদ্যাক্তাদের বিশেষ সুবিধায় প্লট বরাদ্দ করার দাবী জানান তিনি। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা ও নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য আসন্ন বাজেটে এসব সুপারিশ অন্তভূর্ক্ত করার দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি শামীমা লাইজু ও সহসভাপতি আয়শা সিদ্দিকা, কোষাধক্ষ আনোয়ারা সিদ্দিকা, কো-কোষাধক্ষ জর্জিনা আলম, সাধারণ সম্পাদক জিসান আক্তার চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক নাদিরা ইয়াসমিনসহ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।