‘নীরব বিপ্লব ঘটেছে এগ্রিবিজনেস খাতে’

এহতেশাম বি. শাহজাহান : এগ্রি সেক্টরের বয়স ২৫ বছরের বেশি হবে। এগ্রি বিজনেস খাতটি যুব উন্নয়নে সহোযোগিতা করছে। বিগত ২০-২৫ বছরে এই খাতে অধিপত্য করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এই খাতে আমরা দীর্ঘসময় থেকে বিনিয়োগ করে আসছি। কিন্তু সব ইনপুট গুলো আমাদের হাতে নেই। দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বেশিরভাগ কৃষিপণ্য এখনও আমদানি করতে হয়। ডলার রেট যখন উঠানামা করে, টাকার মান যখন কমে যায় তখন আমাদের খরচ অনেকাংশে বেড়ে যায়। বর্তমানে সে খারাপ সময়টাই চলছে।

এই খাতের কন্ট্রিবিউশন শুধু ব্যবসা নয়, আমরা এখনও দেশের অভ্যন্তরীন পুষ্টি চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছি। যে জাতির খাদ্য পুষ্টিমান, নিরাপত্তা যত কম হবে, সে জাতির সন্তানরা জেনেটিক্যালি কম বুদ্ধিমান হবে। এতে বেশি প্রভাব পড়ছে শিশুদের উপরে। কারণ তাদের ব্রেইন ডেভোলপের জন্য পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার তারা পায়না। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হলো ‘লবণে আয়োডিন’।

সরকার এটিকে বাধ্যতামূলক করেছে। আজকাল বাজারে স্বল্পমূল্যে যেসব খাদ্যপণ্য পাচ্ছি (পোল্ট্রি, মাছ) এর মধ্যে মাছ চাষে বাংলদেশে এখন নিরব বিপ্লব চলছে। সম্প্রতি সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে উঠে এসেছে মাছ চাষে বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধ। আপনারা জানলে অবাক হবেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটা দেশ, সে কিনা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাছ উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থান দখলে নিয়েছে।

এক্ষেত্রে পুরোটা কন্ট্রিবিউশন তো প্রাইভেট সেক্টরেরই। অন্যদিকে গার্মেন্টস রফতানিতে চায়নার পরেই রয়েছি আমরা। যে চায়না আমাদের চেয়ে ২০ গুণ বড় সে চায়নার পরেই আমাদের অবস্থান।

এসব অর্জন প্রমাণ করে যে আমাদের মেধা আছে। একটা প্রোডাক্টের কনসেপ্টকে দাঁড় করাতে অনেক কিছু নিয়ে কাজ করতে হয়। এখানে জনশক্তির প্রশিক্ষণের বিষয় আছে। আমাদের ভোকেশনাল ট্রেণিং বাড়াতে হবে। যাতে আমরা দক্ষ জনবল পাই। আমাদের দেশের নিউট্রেশন, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল কোনো ফিল্ডেই দক্ষ লোকজনের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। এজন্য আমাদেরকে বারবার বিদেশের কাছে মাথানত করতে হচ্ছে, কনসালটেন্ট আনতে হচ্ছে। কিন্তু এটা কেন? হোলিস্টিক অ্যাপ্রোচ নিতে হবে।

সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তাই কেবল সরকারকেই দুষলে হবেনা। বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদেরকে সাথে নিয়ে বসে একটা রোড ম্যাপ তৈরি করা প্রয়োজন। সরকার একটা প্লাটফর্ম তৈরি করবে সংশ্লিষ্টদের কথা শুনবে। ফার্মার, ইন্ডিকেশন, ঔষধের ব্যবসায়ী, কোল্ড স্টরেজ ওয়ালা আর খুচরো ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করতে হবে। কেন ফার্মাররা দাম পায়না।

কোন ধরণের মধ্যস্থতাকারীদের কাছে কৃষক জিম্মি তা সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। থানায় থানায় কোল্ড স্টরেজ তৈরি করতে হবে।

টমেটোর কেজি কখনও ৪০ কখনও ৪ টাকায় নেমে আসছে। এই মূল্য বৈষম্য দূর করতে হলে। বাজার স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হলে কৃষকদের স্বার্থেই কোল্ড স্টরেজ তৈরি করা জরুরি। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ইনস্টিটিউশন (বিএডিসি) এখন আগের মতো একটিভ নেই। তাই কৃষি খাতের উন্নয়নে শুধুমাত্র সরকারি নয় বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ জরুরি। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয় থাকা জরুরি।

ফিস এবং প্রোটিনে গুরুত্ব দিয়ে ২৩ বছর আগে কোয়ালিটি ফিডের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে আমরা চিংড়ির ফিড উৎপাদনে জোর দিচ্ছি। তাছাড়া আমাদের পরীক্ষামূলক খামার রয়েছে। এসব খামারে শখের চাষের পাশাপাশি গবেষণা চালানো হয়।

প্রকৃতপক্ষে কৃষকের উপর ভর করেই বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে। তাই আমাদেরকে প্রথমেই কৃষকদের বাঁচাতে হবে। এক্ষেত্রে অনেক কিছুই করার আছে। এর একটা হলো এগ্রিকালচার ইন্স্যুরেন্স চালু করতে হবে। এটা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে চালু থাকলেও আমাদের দেশে এখনও এই কনসেপ্টটি নতুন। কৃষক যদি সেটা না পারে ন্যূনতম একটা ইন্স্যুরেন্স সে করতে পারে।

এক্ষেত্রে কৃষক যদি কোনো মৌসুমে লোকসানে পরে, তাহলে সে ফাইন্যান্সিয়াল কাভারেজ পাবে। এ পদ্ধতি ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশেই চালু আছে। বিদ্যমান ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে একটা ফাইন্যান্সিয়াল মোর‌্যাল দাঁড় করাতে হবে। এখাতে সহায়তা করতে ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসতে পারে।

কৃষি খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংকের মনিটরিং সেল রাখতে হবে। তারা প্রাইভেট ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেবে যে, কোন খাতে কত বিনিয়োগ করা যেতে পারে। আর ইনভেস্টমেন্টগুলোও যাতে সিকিউরট থাকে।

বর্তমানে ফিড ইন্ডাস্ট্রিতে ৪০ শতাংশ ওভার ক্যাপাসিটি রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অধিক বটে। এ শিল্পে অনেক কারখানা কলাপস করবে। আর এরা কলাপস করা মানে ব্যাংক কলাপস করা। তাহলে এতগুলোতে ব্যাংক কেন অর্থ সহায়তা করবে? যেসব সেক্টর আমদানি নির্ভর সেসব খাতেই তো ব্যাংক বিনিয়োগ করবে।

ভিয়েতনামে যেভাবে কেইজ ফার্মিং হচ্ছে আমরাও সে পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারি। আমরা শুধু নতুন পদ্ধতি সংযোজন করলেই হবেনা। টেকসই পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। এসব কারণে ইউরোপের অনেকগুলো দেশ এখন সিমেন্ট শিল্পের কারখানা গড়ার অনুমোদন দেয়না। আফ্রিকা গামেন্টস খাতে পিছিয়ে পড়েছে। কারণ বিজনেস এখন গ্লোবাল ফ্যামিলি চালায়। এটা পরিবেশ প্রতিবেশের উপর নির্ভর করে। তাই পোল্ট্রি বা ফিস ফিড খাতের নতুন কারখানা গুলো এ সেক্টরে কলাপস করার আশংকা রাখে।

এহতেশাম বি. শাহজাহান
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
কোয়ালিটি ফিডস্ লিমিটেড।

সাবেক প্রেসিডেন্ট
ফিড ইন্ডাসট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।

আজকের বাজার : জাকির/এমআর/আরএম/