নীলফামারীতে ঝুঁকেছেন কৃষকরা আউশ ধান চাষে

বৃষ্টির পানি কাজে লাগিয়ে জেলায় আউশ ধান চাষে ঝুঁকেছেন কৃষক। কম খরচে ফলন ভালো হওয়ায় সেচ নির্ভর বোরো ধানের বিকল্প হিসেবে দিনে দিনে কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওই ধানের আবাদ।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন, বছরের এ সময়টাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এসময়ে আউশ ধানের চাষ হওয়ায় দু-একটি সেচ বা সেচ ছাড়াই চাষ করা যায়। ফলে কম সময় ও কম খরচে আউশ চাষে সফল হওয়া যায়।

কৃষকরা বলছেন, বোরো ধান চাষে ২০ থেকে ২৫ বার সেচ দিতে হয়। আউশ ধান চাষে মাত্র দুই থেকে তিন বার সেচ দিলেই হয়। বাকি সময়টা বৃষ্টির পানিই যথেষ্ট। এছাড়া মাত্র ১২০ থেকে ১৩০ দিনের মধ্যেই ধান ঘরে তোলা যায়। ফলনও ভালো হয়।

জেলা সদরের পলাশবাড়ি ইউনিয়নের তরণীবাড়ি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে ব্যাপক আউশের ক্ষেত। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে জেলার উল্লেখযোগ্য পরিমান আবাদ হয়েছে গ্রামটিতে।

ওই গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ (৬৫) চার বিঘা জমিতে আউশের আবাদ করার কথা জানিয়ে বলেন,“এ সময়টাতে আমার জমি পতিত থাকে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার আউশ ধানের চাষ করেছি। ধান প্রায় উঠার পথে, ফলনও বেশ ভালো হয়েছে”।

একই গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন (৫০) বলেন, “জমিতে আমন উঠানোর পর ক্ষিরা চাষ করি। ক্ষিরার পর জমি ফেলে রেখে আমন আবাদ করতাম। এবার ফেলে না রেখে আউশের আবাদ করেছি। আর ১০-১৫ দিনের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তুলে আমন আবাদ করতে পারবো”। এতে করে একটি ফসল বেশী পাওয়ার কথা জানান ওই কৃষক।

কৃষক বিরেন চন্দ্র রায় (৭০) বলেন, “বৈশাখ মাসের সাত তারিখে দুই বিঘা জমিতে আউশ ধান লাগিয়েছি দুইবার টিএসপি ও ইউরিয়া প্রয়োগ করেছি। আর কয়েক দিনের মধ্যে ধান ঘরে তুলতে পারবো”।

একই গ্রামের কৃষক অবর উদ্দিন (৫০) বলেন, ‘বোরো ধান চাষ করতে ২৫ থেকে ৩০ বার সেচে দিতে হয়। এতে এক বিঘা জমিতে পানি বাবদ অন্তত দুই হাজার টাকা খরচ হয়। আউশ ধানে মাত্র দুই বা তিন বার সেচ দিতে হয়েছে। এরপর বৃষ্টি হওয়ায় আর সেচ দিতে হয়নি। ফলে সেচের ওই দুই হাজার টাকা খরচ কম হচ্ছে। পাশপাশি নিড়ানীসহ অন্যান্য খরচ কম লাগে। ফলনও প্রায় বোরোর সম পরিমান”।

সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের পলাশবাড়ি ইউনিয়নের তরনীবাড়ি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম রায় বলেন, “ভূগর্ভস্ত পানির যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। আউশ ধান যেহেতু বর্ষাকালে হয় একারণে বৃষ্টির পানিকে কাজে লাগিয়ে এর ফলন ফলানো সম্ভব। সেই সাথে আউশ ধানের চাষ জোরদার করা গেলে ক্রোপিং প্যাটার্ন এর পরিবর্তনের ফলে একই জমিতে বছরে তিন থেকে চারটি ফসল করা সম্ভব”।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন,“আবহাওয়ার বৈচিত্রের কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলানো সম্ভব। উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমরা আউশ ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর আবাদের পরিমান বাড়ছে”।

তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে জেলার ১৭৫০ হেক্টর জমিতে আউশের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার পলাশবাড়ি ইউনিয়নের তরনীবাড়ি ব্লকেই আউশের চাষ হয়েছে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে। এর আগে ২০১৯ মৌসুমে জেলায় ১৫১০ হেক্টর, ২০১৮তে ৪৬৪ হেক্টর, ২০১৭তে ৪৪৬ হেক্টর ও ২০১৬ মৌসুমে ৩৭৩ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান