পরিবেশ দূষণে দিল্লির পরেই রয়েছে ঢাকা!

বর্তমানে মানুষজনের কাছে চিন্তার একমাত্র বিষয় হল পরিবেশ দূষণ। কিভাবে এই পরিবেশ দূষণের মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে চিন্তিত সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন। সাধারণ মানুষকে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে বারবার সচেতন করার চেষ্টা হলেও সচেতনতা কতটা বেড়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ দিল্লি। সেখানকার দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি দিল্লিবাসীরা অন্যত্র চলে যেতে চাইছেন।

কেননা ধোঁয়া এবং কুয়াশার মেশার ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই এতটা জটিল হয়ে পরছে যার ফলে সাধারণ মানুষ আজ স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে পারছে না। আজ এই বিষয়টা কেবলমাত্র কোন দেশের পরিপ্রেক্ষিতে নয় সমগ্র বিশ্বের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। বর্তমানে ভারতের উত্তরাংশ এই চূড়ান্ত রকমের দূষণের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক সমগ্র এশিয়া মহাদেশে বায়ুদূষণের হার ঠিক কি রকম।

বায়ুদূষণের দিক থেকে দেখতে গেলে বেজিং উপরের দিকে থাকলেও পরিসংখ্যার দিক থেকে ভারত, বাংলাদেশ, এবং পাকিস্তানের বায়ুদূষণের হার বেশ বেশি। অর্থাৎ দেখতে গেলে দক্ষিণ এশিয়াতে পরিবেশ দূষণের হার অন্যান্য দেশের থেকে উপরে। আইকিউ এয়ারভিশুয়ালের করা গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বের ৩০টি দূষিত শহরের মধ্যে ভারতেরই ২২ টি রয়েছে। এছাড়া বাকি ৮ টি শহর রয়েছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং চিনে।

বিশ্বের সব থেকে দূষিত রাজধানীর মধ্যে সব থেকে উপরেই রয়েছে দিল্লি। তারপরে রয়েছে ঢাকা। বর্তমানে দিল্লির আশেপাশের রাজ্যের শস্য পোড়ানোর ফলে দিল্লিতে দূষণের পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে যায় দিল্লি সরকারকে স্কুলের ছুটি বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপরেই রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতি বছরের দূষণের ভিত্তিতে করা সমীক্ষাতে উঠে এসেছে এইরকম তথ্য। যা কপালে ভাঁজ ফেলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে দূষণের কারণ নিয়ে। শহরাঞ্চলে বায়ু দূষণ হয় মূলত অতিরিক্ত ট্র্যাফিক, কলকারখানা থেকে বেড়িয়ে আসা ধোঁয়া এবং গাছ কেটে ফেলে শহরাঞ্চলের বিস্তারের ফলে। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে দূষণ হয় অতিরিক্ত ফসল পোরানোর ফলে। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের সহকারী অধ্যাপক থমাস স্মিথ জানিয়েছেন এই বিষয়টি বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিন যে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কেননা চিনে চাষের ফসল পোরানোর বিষয় পুরোপুরি ভাবে নিষিদ্ধ।

বায়ুদূষণের পরিমাপ করা হয় বাতাসে অবস্থিত বিপদজনক ধূলিকণার উপর ভিত্তিতে। বাতাসে যদি এই বিপদজনক ধূলিকণার হার বেড়ে যায় তাহলেই তা বায়ুদূষণ হিসেবে মানা হয়। এই দূষণের ফল বিভিন্ন মানুষের উপরে বিভিন্ন ভাবে দেখা যায়। তবে মূলত চোখ জ্বালা থেকে শুরু করে শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যাতে ভুগতে থাকে সাধারণ মানুষ। তবে সব থেকে ভুক্তভোগী হন বয়স্ক মানুষজন।

বর্তমানে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকাতে দূষণের হার অপেক্ষাকৃত ভাবে কম৷ তবে ১৯ এবং ২০ দশকে লন্ডনেও দূষণের হার ছিল বেশ বেশী। ১৯৫২ সালে লন্ডনের পরিস্থিতি হয়েছিল বর্তমান দিল্লির মতই। তবে সেই জায়গা থেকে পেরিয়ে আজ কড়া হাতে দমন করেছে দূষণকে।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান