পাটকল শ্রমিকদের পাওনা নভেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ পরিশোধ হবে: মন্ত্রী

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সব মিলের শ্রমিকদের পাওনা আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

বিজেএমসি’র বন্ধ ঘোষিত মিলগুলোর অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ বিষয়ে বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে বিজেএমসি’র সব মিলের শ্রমিকদের পাওনা সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করা হবে।’

মন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত আট মিলের শ্রমিকদের পাওনা বাবদ মোট ১,৭৯০.৫২ কোটি টাকা অর্থ বিভাগ থেকে পাওয়া গেছে, যা শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবে হস্তান্তর এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। আগামী ২৫ অক্টোবর আরও দুটি মিলের (চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিল ও খুলনার ইস্টার্ন জুট মিল) শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হবে।

‘আশা করা যাচ্ছে যে এ প্রক্রিয়ায় আগামী মাসের মধ্যে সব মিলের শ্রমিকদের পাওনা সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করা সম্ভব হবে,’ বলেন তিনি।

গোলাম দস্তগীর বলেন, পৃথিবীজুড়ে পাটের কদর ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটচাষিরা ও কাঁচা পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। চলতি পাট মৌসুমে কাঁচা পাটের গড় দর ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। এর ফলে পাটচাষিরা ভবিষ্যতে অধিক পরিমাণে পাট চাষে আগ্রহী হবেন। এতে করে দেশের অর্থনীতিতে পাট খাতের অবদান আরও সুসংহত হবে বলে আশা করা যায়।

মন্ত্রী জানান, বন্ধ ঘোষিত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি সার্বিকভাবে পাট খাতকে পুনরুজ্জীবিত এবং মিলগুলোকে উপযুক্ত মডেলে আধুনিকায়ন ও পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে মিল ও বিজেএমসি’র অন্যান্য সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহার বিষয়ে অনুসরণীয় কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং বিজেএমসি’র সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনসহ প্রয়োজনীয় জনবলের যৌক্তিকীকরণ বিষয়ে সুপারিশ দিতে সরকার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পৃথক কমিটি গঠন করেছে। ‘আশা করা যায় যে বর্ণিত কমিটি দুটির সুপারিশের আলোকে বন্ধ ঘোষিত মিলগুলো নতুন আঙ্গিকে পুনরায় চালু হবে এবং এভাবে পুনরায় চালুকৃত মিলে পূর্বের অভিজ্ঞ শ্রমিকরা পুনরায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পলিথিন ও প্লাস্টিকের অপরিণামদর্শী ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান সচেতনতার দরুন প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে পাটের কদর ও চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে বিজেএমসি’র উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করা এবং করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও পাট ও পাটজাত পণ্য হতে রপ্তানি আয়ে গত অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি (৮.১০ শতাংশ) অর্জিত হয়েছে এবং এ খাত ৮৮২.৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে ওঠে এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির হার ৩৯.২৬ শতাংশ। আশা করা যাচ্ছে যে এ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য হতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

সরকারি সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলোর বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান এবং পাটখাত পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বিজেএমসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি মিলে কর্মরত সব স্থায়ী শ্রমিকের গ্র্যাচ্যুইটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়নসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার মাধ্যমে চাকুরি অবসানপূর্বক উৎপাদন কার্যক্রম ১ জুলাই হতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

শ্রমিকদের আর্থিক দুরবস্থা বিবেচনা করে ২৫ মিলের ২৪,৬০৯ জন কর্মরত স্থায়ী শ্রমিকের সমুদয় পাওনা বাবদ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৩ হতে অবসরপ্রাপ্ত ১০,১০৭ শ্রমিকের পাওনা বাবদ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকাসহ মোট প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা চলতি অর্থবছরে এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত দেন। শ্রমিকদের ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক শ্রমিকের পাওনার ৫০ শতাংশ নগদে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করার নির্দেশনাও দেন।