পুঁজিবাজারে চীনা অংশীদার: নতুন অধ্যায়ের সুচনা

শেরীফ এম এ রহমান : আমার প্রথম যে জিনিসটা বলার সেটা হচ্ছে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশীপে কিভাবে বেনিফিটেড হয় একটা কান্ট্রি? আমি বলব অবশ্যই নো হাউ। আমাদের দেশের উদীয়মান অর্থনীতি, আমাদের দেশের উন্নয়নের যে প্রেক্ষাপট সেখানে আমাদের এখন নো হাউ দরকার। আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের যে রেভোলোশনগুলো হয়েছে যে সরকারি ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক ও ফরেন ব্যাংক নিয়ে। আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরে যে বর্তমান অবস্থা দেখছি, সেখানে একটা বড় ধরনের নো হাউ আসছে কিন্তু ফরেন ব্যাংক থেকে।

ফরেন ব্যাংকের লোকগুলো যেখানে সিইও হিসেবে আছেন। ওখানকার ডাইনামিজম দেখেন। আবার অন্য ব্যাংকের নরমাল যারা লোকাল সিইও আছেন। বোঝা যাচ্ছে যে ওখানে একটা নো হাউ শিফটিং হয়েছে। নো হাউ আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের একটা বড় পাওয়া, যা ফরেন ব্যাংক থেকে নো হাউটা পেয়েছে। আমরা যদি একটু আগাই, অবশ্যই ব্যাংকিং সেক্টর, স্টক এক্সচেঞ্জ সব জায়গায় একটা বেস্ট প্র্যাকটিস আছে। সেই প্র্যাকটিস আমাদের ফলো করতে হবে।

আমাদের দেশে যে বর্তমানে উদ্যোক্তারা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে আমাদের কিছু নাম বলি যেমন, প্রাণ, ওয়াল্টন যারা যে আকারে এখন ব্যবসা করছে এবং গ্রো করছে। তারা এখন কী চাচ্ছে? তারা চাচ্ছে, এই যে গ্রো করছে সেই লেভেলটা তারা চাচ্ছে। তারা এখানে কী চাচ্ছে? তারা চাচ্ছে যে এখানে একটা স্ট্র্যাটেজিক এলায়েন্স গ্রো হোক। যাদের কাছে নো হাউ আছে। মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে বলেন, অপারেশনের ক্ষেত্রে বলেন। এখানে কিন্তু এই জিনিসগুলো খুব ডিমান্ড পাচ্ছে। কারণ একটা লেভেলের পর তাদেরকে কিন্তু নো হাউ’র জন্য বাইরে যেতেই হবে। স্কিলড লোক আনতে হবে। অনেক জায়গায় এখন দেখেন বিদেশি ম্যান পাওয়ার কাজ করছে। স্কিলড লোক নিয়ে আসা হচ্ছে। আমি যেটা মনে করি, এই নো হাউ’র জন্য আমাদের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশীপ।

চাইনিজ মার্কেট ওয়াল্ডের মধ্যে অন্যতম। চাইনিজ অর্থনীতি পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় বড় অর্থনীতি। তারা আমাদের সঙ্গে পার্টনারশীপে আসছে। এই পার্টনারশীপের মাধ্যমে আমরা যে বেনিফিট পাব আমাদের স্টক মার্কেটের জন্য এটা একটা অনেক বড় পাওয়া। এই জাতীয় পার্টনারশীপে যে কোনো সেক্টর ম্যানুফেকচারিং বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর বলেন সব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম কথা হলো ক্যাপিটাল ইনফরমেশন। আমাদের স্টক মার্কেটের জন্য যে ক্যাপিটাল সাপোজ আমাদের সঙ্গে যখন চাইনিজ পার্টনারশীপ আসবে তখন এটলিস্ট যেটা করবে তারা এখানে প্রথম চেষ্টা করবে যে এখানে যেসব লজিকগুলো আছে সেখানে তারা পার্টিসিপেট করবে। আমরা দেখেছি যে পাকিস্থানের সঙ্গে তারা পার্টনারশীপ শুরু করার পর কানাডা থেকে সিইও নিয়ে আসা হয়েছে। তো প্রথম লাভ হবে ক্যাপিটাল ইনফরমেশন।

দ্বিতীয়ত, এই যে মনে করেন আমাদের মার্কেটকে তারা বিদেশিদের কাছে প্রমোট করবে। তারা যেসব জায়গাতে সফল হয়েছে যেমন আমাদের দেশের ইনভেস্টরদেরকে চাইনিজদের যেসব জায়গায় বন্ড আছে সেসব জায়গায় আমাদেরকে ইনভেস্টমেন্টের সুযোগ দিবে। আমরা যেটা দেখছি যে সবচেয়ে বড় যে বেনিফিটটা আসবে সেটা হলো চাইনিজরা অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশ্বে উন্নত হয়েছে। তাদের সেই অর্থনীতির স্ট্রাকচারের বিষয়গুলো এখানে নিয়ে আসা হবে। আমাদের দেশে বর্তমানে বড় বড় অবকাঠামোর প্রজেক্টগুলো আসতেছে। সেসব প্রজেক্টগুলোতে ব্যাংক ফিন্যান্স বা বিদেশিরাও ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে আসতেছে। সেখানে যদি এবিএসটাকে যদি ইন্ট্রুডিউস করানো যায়। তাহলে কাজের গতি অন্যরকম হবে।

তৃতীয়ত, প্রোডাক্টের ডাইভারসেশন হবে। মার্কেটের সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো আমরা একটা ইকুইটির ওপর চলছি। শুধু একটা প্রোডাক্ট। শুধু ইকুইটি বেসড প্রোডাক্ট। যার দরুন আমাদের ইনভেস্টমেন্টের অন্য কোনো অপশন নাই। ইভেন আমাদের বন্ড মার্কেটও একটিভ না। তো সেখানে আমি মনে করি যে এখানে অনেকগুলো প্রোডাক্ট আসবে। প্রোডাক্টের মধ্যে ইনডেক্সের প্রোডাক্ট নিয়ে আসা হবে। যেটা ওয়াল্ডের মধ্যে অনেক পপুলার।

চাইনিজরা সবচেয়ে ভালো করেছে তারা এসএমই কোম্পানিগুলোকে খুব বেশি লিস্টেড করেছে এবং ওই জায়গায় তারা অনেক সাকসেসফুল হয়েছে। আমাদের এখানে অনেক কোম্পানি আছে যারা ফিন্যান্সিংয়ের তেমন সুযোগ পায় না। সেখানে তাদেরকে যদি লিস্টিংয়ের সুযোগ করে দেওয়া যায়। সুতরাং এই নো হাউগুলো আমাদের সাথে আসবে। তারপরে আসবে মনে করেন, বড় একটা জিনিস চায়নাতে করা হয়।

এই যে আমাদের ইনভেস্টরদের ইনফরমেশন একসেস টু কোম্পানি খুব একটা নাই। তো চায়না যেটা করবে তারা একটা ফ্ল্যাটফর্ম ক্রিয়েট করবে যাতে ইনভেস্টররা কোম্পানিগুলোকে ডিরেক্ট কোয়ারি দিতে পারবে। এবং পরবর্তি দু-একদিনের মধ্যে সেসব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিবে।

অববিয়াসলি স্টক মার্কেটে দুইটা জিনিস গুরুত্বপূর্ণ, একটা হলো একসেস টু ইনফরমেশন, আরেকটা হলো ইনভেস্টমেন্ট ডিসিশন। তো একসেস টু ইনফরমেশনের সুযোগটা আমাদের দেশে তেমন একটা নাই। খুবই অল্প সুযোগ আছে। তারপর সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট। চাইনিজ স্টক এক্সচেঞ্জে লাইভ কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এখানে যারা কাজ করবে তারা চাইনিজ স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ পাবে। রিয়েল লাইভ এক্সপেরিয়েন্স হবে। তারা বলে দিয়েছে যে আটটা খাতে তারা উইথ এমাউন্ট তারা সাপোর্ট দিবে। ইনফরমেশনের ওপরে, এটার ওপরে সেটার ওপরে। তো এই বিষয়গুলো তারা নিয়ে আসবে। এভাবে নো হাউটা ডেভেলপ হবে।

এখন আমি আমার কলিগ এহসান সাহেবকে একটু বলার জন্য অনুরোধ করছি, ওনারা ফরেন ট্রেড দেখেন, ব্লুমবার্গ দেখেন, বিদেশিদের মনোভাব বোঝেন। এহসান একটু বলুন।

এহসানুর রহমান: স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশীপ আমাদের জন্য একটা নতুন অধ্যায়। পাকিস্থান মার্কেটে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হয়েছে চায়না। ওখানে কিন্তু শেয়ার মার্কেটটা অলরেডি ডেভেলপ মার্কেট। তারা এক সময় উদীয়মান মার্কেট ছিলেন। এখন তারা ডেভেলপ মার্কেট। ওখানে কিন্তু অনেক প্রোডাক্ট ছিলো। বাংলাদেশ এমন একটা মার্কেট যেখানে ইকুইটি ছাড়া আমাদের বেশি কিছু নাই। আমরা এখন অনেক ধরনের প্রোডাক্ট পাব। চায়না অনেক প্রোডাক্ট নিয়ে কথা বলছে। চায়না এসএমই প্রোডাক্ট নিয়ে কথা বলতেছে। এটা ছোট করে দেখার কোনো বিষয় না। আমি যেটা বলব ইটস নট এ শর্ট টার্ম থিং। এগুলোর জন্য সময় লাগবে। এখনই যে রেজাল্ট পেয়ে যাবেন এমনটা না। নো হাউয়ের পরিবেশ তৈরি হবে। এছাড়া চায়না আমাদের সঙ্গে কাজ করলে ফরেন ইনভেস্টররা অনেক আস্থা পাবে। অনেক ফরেন ইনভেস্টরা যারা বাংলাদেশের কথা চিন্তা করত না তারাও কিন্তু এখন বাংলাদেশে ইনভেস্টমেন্ট করতে আসবে। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশীপে আমরা ফরেনারদের আস্থার দিক দিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাব।

মার্কেটে যদি ভালো ভালো শেয়ার থাকে ফরেনারদের দাওয়াত দিতে হবে না, তারা খুঁজে চলে আসবে। আমাদের মার্কেটে যে সমস্যা সেটা হলো লিস্টিংয়ের পরিমাণটা আমাদের এখানে অনেক কম। আমাদের দেশে অনেক বড় বড় কোম্পানিগুলো শেয়ার মার্কেটে আসতে চায় না। চায়নারা চেষ্টা করবে তাদেরকে আনার জন্য। চায়নারা যখন আসবে তখন তারা চায়বে শেয়ারের দাম বাড়াতে। আর এ জন্য তারা চায়বে বড় বড় কোম্পানিগুলোকে শেয়ার মার্কেটে আনতে। আর মার্কেট যখন ভালো হবে তখন বড় বড় কোম্পানিগুলো অবশ্যই আসবে।

আমাদের দেশের ইকোনোমি হঠাৎ করে বড় হয়েছে। এর ফলে নো হাউয়ের একটা গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে। নো হাউয়ের ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি যে ইকোনোমি বড় হওয়ার সাথে সাথে চায়নারা আমাদের এখানে আসতেছে। তারা আমাদের সঙ্গে ক্যাম্পিং করতেছে। তাদের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতেছি। এগুলোর জন্য তো আসলে একটা সময় দরকার। তারা আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। এর ফলে নো হাউয়ের একটা উন্নতি হচ্ছে।

চায়না অনেক আগে থেকেই অনেক ম্যাচিউড মার্কেট। এক সময় তাদের ছিলো উদীয়মান মার্কেট। পাকিস্থান কিন্তু অনেক আগে থেকেই শক্তিশালী মার্কেট। এখন সেখানে যখন চায়না স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশীপে গিয়েছে অবভাইজলি রাতারাতি হয়তো কিছু হবে না তবে ইমপ্যাক্ট হয়েছে। যখন চায়না স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশীপে পাকিস্থানে গিয়েছে তখন সেখানে ফোর্টি পারসেন্ট ইনভেস্টমেন্ট বেড়েছে। সুতরাং ওদের চেয়ে আমাদের পাওয়ার সম্ভাবনা আরো বেশি। কারণ আমরা একেবারে নতুন। চায়নার সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশীপের ফলে আমাদের পাওয়ার জায়গাটা অনেক বেড়ে যাবে। ওদের মার্কেটে অনেক কিছু আগে থেকেই আছে। আমরা অনেক কিছু নতুন নতুন পাব। নতুন নতুন অনেক কিছু দেখব আমরা। তো সেই জায়গাটাতে আমাদের স্টক মার্কেটের জন্য অনেক ভালো জিনিস।

আমরা প্রথম দিকে লোকাল কোনো পার্টনার খুঁজছিলাম। কিন্তু পাচ্ছিলাম না। অবশেষে চায়না আগ্রহ দেখাল। আমরা মনে করেছিলাম হয়তো চাইনিজ কোনো ব্যাংক আসবে পার্টনার হিসেবে। আমরা খুবই ইমপ্রেসড হলাম যে চায়না স্টক এক্সচেঞ্জই চলে আসল পার্টনার হিসেবে। চায়নারা চারটা একাউন্ট মেনটেইন করে। তাদের একটা একাউন্টেই নাইন হান্ডেড বিলিয়ন ইউএস ডলার রির্জাভ আছে। তাদের নো হাউগুলো সব জায়গায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। তারা শ্রীলংকা, নেপালসহ নানা দেশকে নো হাউয়ের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে আসতেছে। আসলে এটা হয়। আমেরিকা যখন ডেভেলপ হয়েছে তখন তারা তাদের আশেপাশের দেশগুলোকেও ডেভেলপ করছে। ইউরোপেও তা হয়েছে।

আমরা স্বস্তি পাই যে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতি এখন আমাদের সঙ্গে আছে। তারা আমাদের সঙ্গে পার্টনারশীপে কাজ করছে। এটা কোনো ছোট দেশের ইনভেস্টমেন্ট না। বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতি আমাদের সঙ্গে পার্টনারশীপে আছে। যেখানে যাদের অনেক অভিজ্ঞতা আছে। বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ হওয়ার অভিজ্ঞতা। তারা আমাদের সঙ্গে পার্টনারশীপে আছে। এটা আমাদের জন্য অনেক সুখের বিষয়। এখন এই বিষয়গুলোকে যদি আমরা হালকাভাবে দেখি তাহলে হবে না। সামনে আসতেছে আমাদের আইসিবিকে সরকার এখন দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করার সুযোগ দিয়েছে। তো সামনে তো দেখতেছি অনেক ভালো ভালো জিনিস আছে। আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অবশ্যই আমাদের বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ভালো শেয়ারের দিকে নজর দিতে হবে। আমরা ভালো করব। আমাদের ভালো না করার কোনো কারণ নেই।

আমাদের ছোট্ট একটা দেশ। জনবহুল একটা দেশ। আমাদের ক্রয় ক্ষমতা দিন দিন বাড়তেছে। অর্থনীতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে আমরা কিন্তু খুব ভালো করব। আগে বলা হতো পার ক্যাপিটা ইনকাম। এখন বলা হয় পার ক্যাপিটা ইনকাম ইন পার স্কয়ার কিলোমিটার। আমরা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এখন সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আছি। আমাদের জায়গার সর্বোত্তম ব্যবহার করছি। সুতরাং আমাদের অনেকগুলো ভালো জিনিস আছে। হয়তো রিসেন্টলি কিছু ম্যাক্রো জায়গাতে কিছু সমস্যা হয়েছে।

আমার মনে হয়, দেশ এগুলো খুব তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠবে এবং আমরা অনেক এগিয়ে যাব। আমাদের অর্থনীতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক বিজ্ঞ লোক চলে আসবে। অনেক পার্টনার চলে আসবে। অনেক ইনভেস্টমেন্ট চলে আসবে। আমার মনে হয় না যে, সব কিছু মিলিয়ে আমরা পিছিয়ে থাকব। আমরা এগিয়ে যাব।

শেরীফ এম এ রহমান
সিইও
ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড।

রাসেল/