পোল্ট্রি শিল্প দ্বিগুণ চান অর্থমন্ত্রী

তিন বছরের মধ্যে দেশের পোল্ট্রি শিল্পে মাংস ও ডিমের উৎপাদন দ্বিগুণ করাতে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সম্প্রতি রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাজেটপূর্ব এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। জবাবে ব্যবসায়ীরাও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। পোল্ট্রি ফিডের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সভায় বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) পক্ষ থেকে মোট পাঁচটি দাবি তোলা হয়। এগুলো হলো- পোল্ট্রি খাদ্যের উপকরণ আমদানিতে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার, সয়াবিন মিল আমদানির উপর থেকে ১০ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক মওকুফ, ভেজিটেবল প্রোটিন হিসেবে ব্যবহৃত ডিডিজিএস এসআরও তে অন্তর্ভুক্তিকরণ, আমদানিকৃত পণ্যের এইচএস কোডজনিত জটিলতা নিরসন এবং কাঁচামাল আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের ওপর থেকে সব ধরনের পরোক্ষ কর প্রত্যাহার এবং আয়কর কমানো।
বিপিআইসিসির পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এর কেন্দ্রীয় নেতা শামসুল আরেফিন খালেদ অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে পোল্ট্রি খাতের কর অব্যাহতি সুবিধা তুলে নেওয়া হয়। ফলে ‘অত্যন্ত স্পর্শকাতর’ এ শিল্পে হঠাৎ করেই বড় ধরনের ধাক্কা লাগে, বেড়ে যায় উৎপাদন খরচ।

‘আপনি লক্ষ করেছেন- মাত্র কিছুকাল আগেও মুরগির বাচ্চা, ডিম, মাংস, ফিড প্রভৃতি মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানি করতে হত। এগুলো এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। ফলে সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু পোল্ট্রি ফিডে ব্যবহৃত অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল যেমন- ভুট্টা, সয়াবিন মিল, ভেজিটেবল প্রোটিন প্রভৃতির সিংহভাগ এখনও আমদানি নির্ভর। পোল্ট্রি ফিডের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে সামগ্রিকভাবে ডিম, একদিনের মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে উৎপাদন খরচ বাড়লে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে ডিম ও মুরগির মাংস কেনার পরিমাণ কমে যাওয়ার এবং ফলশ্রুতিতে সরকারের পুষ্টি নিরাপত্তা ও ভিশন-২০২১ লক্ষ্যমাত্রা, এমনকি এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বিঘœ কিংবা বিলম্ব ঘটার শঙ্কা বাড়বে- যা কখনই কাম্য নয়।’

পরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্রিডার্সরা অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন উপকরণের উপর বিভিন্ন রকমের ট্যাক্স রয়েছে। তালিকাটা তিনি এখনো পাননি। এনবিআরের লোকজন পেয়েছে, তারাই ফিক্সেশন করবে। আমি এই অঙ্গীকার করতে পারি, যে সব ম্যাটারিয়ালসের যেগুলোর অন্য ব্যবহার আছে, সেখানে একটু অসুবিধা নাই। যেখানে অন্য ব্যবহার নাই, সেটা জিরো হবে। পোল্ট্রি শিল্পের দিশারিরা এখানে আছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, আমি গত ৮ বছর এই শিল্পকে লালনপালন করেছি। যখন মড়ক হল, তখন আমি এগুলো ধ্বংস করেছি। পরে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি। এই সময়ে মোটামুটিভাবে তারা যা চেয়েছেন, তা পেয়েছেন।’

এ সময় অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চান, এই শিল্প দ্বিগুণ করতে কত সময় লাগবে।
জবাবে বিপিআইসিসির সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে এই শিল্পকে দ্বিগুণ করা সম্ভব।

এরপর অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনি বলেছেন, পোল্ট্রিতে দ্বিগুণ ২০২১ সালে হবে। এটা ভালো। কিন্তু আরও কম সময়ে চাই। তিন বছরে এটা করতে হবে। কারণ মাংস ও ডিম উৎপাদন করে পোল্ট্রি। চূড়ান্ত রোগীরাও এই মাংস খেতে পারে। যেমন এই মুহূর্তে আমি সুগারের সমস্যায় ভুগছি। সেখানে খাওয়া দাওয়ায় ভয়ঙ্কর বিধি-নিষেধ। সেখানে মুরগির মাংস মাছ ডিমে কোনো নিষেধ নাই। এজন্য আমি পোল্ট্রির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। পোল্ট্রিতে যেমন হয়েছে, কেন আমাদের গো সম্পদে তেমন উন্নয়ন হয়নি? আমার সহকর্মী বিশেষভাবে নজর দিচ্ছেন। গাভীর জন্য এখন ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। এটা মৎস্য থেকে এক শতাংশ কম। আমি আশা করছি, শীঘ্রই গাভীতে বিপ্লব হবে। আমি ৩৫ বছর আগে মন্ত্রী ছিলাম। তখন দুধের ঘাটতি ছিল ৮০ শতাংশ। এখন সেটাই হয়ে আছে। অথচ গাভীর একটু উন্নয়ন হলে এখানে উন্নয়ন করা সম্ভব। এটা সবচেয়ে খারাপ। এত খারাপ অবস্থা অন্য কোনো খাতে নেই।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেন, পোল্ট্রি না থাকলে আমাদের মুরগির মাংস আমদানি করে খেতে হত। কর অব্যাহতি সুবিধা তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন আজকে তারা কর অব্যাহতি চাচ্ছেন। তাদের প্রস্তাব খুবই যৌক্তিক। কারণ আমাদের ডিম ও মাংসের যোগান এমনিতেই কম। কর দিয়ে দাম বাড়িয়ে দিলে মানুষ আরও বেশি অনাগ্রহী হয়ে যাবে। এটা গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খালেদা ইসলাম বলেন, খাদ্য একটা সংস্কৃতির বিষয়। আমাদের এখানে পোল্ট্রি যখন আসল, তখন মানুষ মনে করত, এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো দিয়ে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় না। এটা সত্য না। এরপরও এই বিশ্বাস দূর করতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানুষ মাছ মাংস ডিম দুধ থেকে প্রোটিন পায়। মাছ, দুধ, গরু ও খাসির মাংসের দাম তুলনামূলকভাবে ডিম ও মুরগির মাংসের চেয়ে বেশি। তাই মুরগির মাংস ও ডিম দিয়েই আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়।

এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, আমাদের খাদ্য সংস্কৃতি এমন হয়ে গেছে যে, সকালে সবাই নাস্তায় ডিমের দিকে ছোটে। আর দুপুরে-রাতে চিকেনের দিকে। এখন আমরা আর মাছে ভাতে বাঙালি নই, যেন মুরগি ডিমে বাঙালি হয়ে গেছি। আমরা বলছি, কয়েকটি সেক্টরে যেন ভ্যাট মওকুফ রাখতে। এটাও একটা।