প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে: হায়দার আহমেদ খান

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। আর শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কিছু ব্যক্তির অবদান অনস্বীকার্য। এমনই একজন হায়দার আহমেদ খান এফসিএ। দীর্ঘদিন ধরে এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন- ইডিএ’র চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে আজকের বাজার ও এবিটিভি’র সঙ্গে মুক্তভাবে আলোচনা করেছেন তিনি। আলোচনার সম্পাদিত অংশ তারই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

শিক্ষা নিয়ে আমাদের কাজ
আমাদের প্রতিষ্ঠান এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন। এটা একটা এনজিও, লোকাল এনজিও। নেত্রকোনা জেলার সমাজসেবা অধিদপ্তরে আমরা তালিকাভুক্ত। এই জেলার ১৫টা ইউনিয়নে প্রাইমারি এডুকেশনের মান উন্নয়ন ও ছেলে-মেয়েদের শত ভাগ শিক্ষিত করার কাজ করছি। আমরা ২০০৫ সাল থেকে এ লক্ষ্যে কাজ করছি । তবে ইনফরমালি, ব্যক্তিগত পর্যায়ে আরম্ভ হয় ১৯৯৬ সাল থেকে। ওই বছর জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে ফরমাল এডুকেশনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রাইমারি এডুকেশন নিয়ে কাজ আরম্ভ করি। ইডিএ বা এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশনের মাধ্যমে আমি যা করি সেটা হলো, আমার জানা মতে, বাংলাদেশের শিক্ষায় জেলাওয়ারি একটা র‌্যাঙ্কিং আছে । সেই র‌্যাঙ্কিংয়ে নেত্রকোনা জেলার অবস্থান ছিল ৬২তম । আর জেলার ১০টা ইউনিয়নের মধ্যে আমার থানার অবস্থান ছিল সপ্তম । মানি,আমার জম্মভূমি,আমি যে জায়গার মানুষ, সেই এলাকার মানুষের আর্থিক অবস্থা বা সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশ হয় শিক্ষার চিত্রের মাধ্যমে।

আমাদের শুরু যেভাবে…
বাংলাদেশের মোটামুটিভাবে একটি শিক্ষিত জেলার শিক্ষিত একটি থানার প্রতিনিধি আমি। অথচ আমার জন্মভূমির মানুষের শিক্ষার অবস্থা খুবই খারাপ। এমন অপরাধবোধ থেকে আমি প্রথমে ভাবলাম এলাকার মানুষের শিক্ষার উন্নতি নিয়ে কী করা যায়? আমার কাজে সম্পৃক্ত হলেন আমার মা । গ্রামের মানুষের সঙ্গে আমার মায়ের যে সম্পর্ক ছিল সেই সম্পর্কের সম্মানে আর আল্লাহর কাছে মায়ের জন্য শান্তির প্রার্থনা। এই চিন্তা থেকে এলাকার গরিব মানুষের জন্য কিছু করবো বলে ভাবি। মা মারা যান ১৯৯৩ সালে। আর ১৯৯৬ সালে কাজ আরম্ভ করি । এই কাজটা আরম্ভ করার পর আমার এলাকার কিছু শিক্ষিত ছেলে আমার সঙ্গে হাত লাগায়। তারা আমার কাজকে স্বাগত জানায়। এখনো তারা আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করছে। আমরা তখন এই এনজিওটি অর্থাৎ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন নামের সংস্থাটি গঠন করি। এর পর প্রতি বছর প্রাইমারি শাখার কাশ থ্রি,ফোর,ফাইভে আমরা স্কলারশিপ দিই। স্কলারশিপকে আরো জনপ্রিয় করার জন্য, সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি বাড়ানোর জন্য আমরা প্রতি ইউনিয়নে প্রতি কাসে চারটা ছেলে আর চারটা মেয়েকে বৃত্তি দিচ্ছি।

স্কলারশিপ, আমাদের অনন্যতা
এখন যে ব্যবস্থা আছে সেটা বলছি, চারটা ছেলে, চারটা মেয়ে প্রত্যেক কাসে ৮ জন। সে হিসেবে প্রতি ইউনিয়নে ২৪ জন ধরে আমার ১৫টা ইউনিয়নে আসার কথা ছিল ৩৬০ জন। কিন্তু নতুন বছর যে পরীক্ষা হলো ওই পরীক্ষায় ৩৫০০ ছেলে-মেয়ে অংশ নেয়। সেখান থেকে স্কলারশিপ পেয়েছে ৪১০ জন । সেই ৪১০ জনকে আমরা ১০০০ টাকা করে দিই। প্রতি বছর এককালীন এটা দেওয়া হয় আর সবটাই আমাদের নিজস্ব ফান্ড থেকে। আমরা কোনো ডোনেশন নিই না। যদি কোনো কারণে কোনো উৎসাহী ব্যক্তি ডোনেশন দিতে চান তাহলে আমার একটা কন্ডিশন থাকে। উনি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে আমাদের অনুষ্ঠানে তাঁর ডোনেশনটা দিবেন । কারণ আমরা কারো টাকা আমাদের হাতে নিতে চাইনা । এটি আমার ব্যক্তিগত নীতি। কারণ টাকা পয়সার ব্যাপার। এটাই মানুষকে সবচেয়ে আগে অনৈতিক কাজের দিকে টানে। তাই একটু সাবধান থাকার জন্য এমনটা করি। অনেকের চোখে এটা কিছুটা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু আমি আমার কাজের সুবিধার জন্য এটা করছি।

আমরা বৃত্তি পাওয়া ছেলেমেয়েদের স্টুডিওতে নিয়ে যাই, তাদেরকে কিছু গিফট দেওয়ার চেষ্টা করি। স্কুল এডুকেশন ম্যাটেরিয়াল দিই, টিফিন দিয়ে থাকি। আমরা কবিতা আবৃত্তি, গান, নাটক করে ছেলে-মেয়েদের উৎসাহ দিতে চেষ্টা করি। এক্সট্রা কারিকুলাম কার্যক্রমে তাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমরা এই কাজ করছি। এমন একটি নিবন্ধিত এনজিওয়ের মাধ্যমে আমরা দীর্ঘ দিন সুন্দরভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার ১ শ’ এর মত স্নাতক ডিগ্রিধারী ছেলে- মেয়ে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে।

বৃত্তি, এলাকায় উন্নতির সোপান
বৃত্তি দেওয়ায় এলাকার অনেক ছেলে মেয়ের উন্নতি হচ্ছে। যেমন একটু উল্টো দিক থেকে বলি, আমার থানায় আমরা শিক্ষা তালিকাক্রমে সপ্তম ছিলাম কিন্তু এখন আমরা দ্বিতীয়। আমরা খবর পাচ্ছি অনেক ভালো ভালো স্কুলে ছেলে-মেয়েরা ভর্তি হচ্ছে। তারা আমাকে মোবাইলে মেসেজ দেয়,ফেইসবুকে আমাকে শেয়ার করে। বলে ‘স্যার, আমি অমুক, ওই স্কুলের, অমুক জায়গার। ওই বছরের স্কলারশিপ হোল্ডার’। এসব জেনে ভালো লাগে। মনে হয় একটা ভালো কাজ করছি । আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে যখন স্কুলে স্কুলে প্রোগ্রাম করি, ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বসি অনেক সময় অভিভাবকদের সঙ্গে বসি। এভাবেই তো ওরা আমাদের কাছে থেকে দেখবে, নৈতিকতার ব্যাপারগুলো জানবে। এভাবে বসলে কিন্তু বয়স্কদের চরিত্র বৈশিষ্টগুলোর প্রভাব তাদের উপরও পড়বে। যতটুকু সম্ভব আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি যে মানুষের মত মানুষ হতে হবে। সমাজের সেবা করতে হবে। অন্যের সেবা করতে হবে, মা-বাবার সেবা করতে হবে, যে কাজটা আমি করছি এবং আমার মায়ের সেবা করছি। স্কলারশিপ দেওয়ার পরে আমি তাদের বলি যে এটা তোমার উপার্জন।

উপার্জনের টাকাটা তুমি কি করতে চাও ? অধিকাংশেরই কিন্তু আমি উত্তর পাই, আমি টাকাটা মায়ের হাতে দিবো। এটা কিন্তু একটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। মানে, একটা বাচ্চা যদি প্রথমে বুঝতে পারে তার সব কিছু মাকে, বাবাকে, সমাজকে নির্ভর করে চলে, তার মধ্যে কিন্তু সেলফিস ভাব আসবে না।

আমাদের সমাজের একটা বড় ক্রাইসিস যে, একটা আত্মকেন্দ্রিক সমাজের দিকে যাচ্ছি বলে আমার মনে হচ্ছে। যদি সব কিছু আমি একা খেতে চাই, সব কিছু কেবলই আমার মনে করতে চাই,আমি কারো সঙ্গে শেয়ার করতে চাই না, তাহলে কিন্তু ক্রাইসিসটা বাড়তেই থাকবে। আমরা সমাজবদ্ধ জীব, আমি যদি পাঁচটা মানুষের সঙ্গে চলি, এই মানুষের সুখ-দু:খ-শান্তি-আনন্দ শেয়ার করি তাহলে কিন্তু আমাদের মাঝে ‘একা আমাকেই সব পেতে হবে, এই চেয়ারে আমাকেই বসতে হবে, এ কাজটা আমাকেই পেতে হবে’ – এরকম হওয়ার কথা নয়।

চিন্তার রকমফের
একেক মানুষের একেক চিন্তা। আমার চিন্তাটা হলো এরকম যে আমি যদি একটা বাচ্চাকে নৈতিক দিকটা সম্পর্কে বলতে পারি, তাকে যদি শিখাতে পারি, তাহলে কিন্তু তার ভিতরে আত্মস্বার্থ জিনিসটা এতোটা আসবে না। তখন সে সমাজকে চেনার চেষ্টা করবে, সমাজের সঙ্গে শেয়ার করবে, পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করবে। এভাবে অনেক কিছুই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এ জিনিসটাই আমি বোঝাতে চেষ্টা করি। তাদেরকে বলি যে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। তারাও পাল্টা বলে যে মানুষের মতো মানুষ হতে হলে কী করতে হবে? আমার উত্তর থাকে সত্য কথা বলতে হবে, ভালো কাজ করতে হবে, দেশের উপকার করতে হবে। নিজের উপকার করলেই দেশের উপকার। আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যদি আমি যথাযথভাবে পালন করি তাহলে তো দেশের উপকার।

শিক্ষার জন্য মাত্র ১২ বছর কাজ করুক সরকার
আমাদের মাঝে ক্রাইসিস চলছে, আমাদের ভিতরে অনিশ্চয়তা কাজ করছে যে আমি কিছু পাবো না, আমি কিছু করতে পারব না। আমি নিজে সরকারি চাকরি করেছি, তখন আমরা চিন্তা করতাম যে আমাকে পাওয়ার আগে কিছু দিতে তো হবে। আমার এ কনসেপ্টটা যদি মাথায় থাকে যে আমার দায়িত্বটা আগে পালন করব তারপর আমরটা আসবে, এ জিনিসটারই এখন ক্রাইসিসে আছে।

আমি যদি চাকরি করি বেতন পাবো তো এক মাস পরে, আমেরিকান সিস্টমে যদি বলি তাও তো সাত দিন পরে, প্রতিদিন যদি পায় তাও পাবে বিকেলে কাজের শেষে। সবাই, সবাই না তরুণদের একটা অংশ আমি সবাইকে স্বার্থপর বলবো না। সমাজে কিন্তু অনেক ভালো মানুষও আছে। আমার এলাকায় বিশ^াস করবেন কি না! আমরা যে শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি আমাদের কমিটিতে ঢোকার জন্য তদবির হয়। একজন ঢুকতে পারলে নিজেকে হ্যাপী মনে করে। আমার কমিটির সভায় যদি হালকা রিফ্রেসমেন্টের ব্যবস্থা থাকে পরের মিটিং-এ কিন্তু বলে ফেলে আমি আর মিটিং-এ আসবো না। আপনি ভালো কাজ করলে ভালো লোকের সংখ্যা অনেক পাবেন।

সমস্যা হলো মিডিয়ার কারণে হোক আর সামাজিক অবস্থানের কারণে হোক প্রভাবশালীরাই কিন্তু লাইম লাইটে চলে আসে। যারা ডোমিনেট করে তারা বিভিন্ন কারণে পাওয়ারফুল। আপনি যদি মানবসম্পদ গড়তে পারেন তাহলে কাজ হয়ে যাবে। বাংলাদেশে সরকারের হিসাব মতে ১৬ কোটি উপরে মানুষ এ দেশে। এর মধ্যে বড় অংশ তরুণ বয়সী, জনসংখ্যার ৪০ ভাগ যুবক, এই যুবক সম্প্রদায়টাকে কাজে লাগাতে হবে। ৫ম শ্রেণী পাস করার পর একটা বড় অংশ ইংরেজি-বাংলা পড়তে পারে না। তো এরা কি পরবর্তী শিক্ষা স্তরে ঢুকবে না? কাসে সে কোনো কথা না বলে সময় পার করবে? আর আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটাও এমন হয়ে গেছে যে ছেলে-মেয়েরা শুধু পাশ করে বের হয়ে যাচ্ছে। সমস্যাটা কিন্তু ওই জায়গায়। আপনি কাজের শিক্ষাটা দিতে পারছেন না, না দিতে পারার কারণে ছেলেমেয়েরা ফাঁকিঝুকি শিখে যাচ্ছে। অনিয়মের জন্য কিন্তু সমাজ না, কেউ অনিয়মটাকে সার্পোট দেয়না, কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়মগুলোই শক্তি পায়। একটা জাতির জন্য ১১-১২ বছর সাপোর্ট দিন। এর পর আর দরকার নেই। অর্থমন্ত্রী বলছেন, আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে, উন্নয়নের মহাসড়কে যদি উঠতে হয়, উঠতে পারি তাহলে আমাদের ক্রাইসিস থাকবে না। তখন এমনিতেই সলভ্ হয়ে যাবে আমার দৃষ্টিতে এডুকেশন, হেল্থ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ।শিক্ষায় ১২ বছরের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। কোনোটা সরাসরি কোনোটা ইনডাইরেক্টলি। প্রাইমারি শিক্ষা ডাইরেক্টলি আর সেকেন্ডারি অ্যান্ড হায়ার সেকেন্ডারি ইনডাইরেক্টলি সরকারকে কন্ট্রোল করতে হবে; কোনো অবস্থাতেই যেন কম্প্রোমাইজ না হয় ।

এ দেশের যুবকরা কেন শ্রমিক হয়ে বিদেশ যাবে?
বাংলাদেশে শ্রমিকের চাকরি পাওয়া কষ্টকর । মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশর সরকারের মধ্যে কম খরচে শ্রমিক পাঠানোর একটি চুক্তি হয়েছে। এটা ভালো দিক, কিন্তু এখানে আমি একটা ইস্যু নিয়ে বলতে চাই। সেটা হলো, আমার ছেলেরা শ্রমিক হয়ে বিদেশে চাকরি করবে এতে আমি দ্বিমত পোষণ করি। কারণ তাদের কি পারিবারিক জীবন নেই? ২৫-৩০ বছরের একটি ছেলে বিদেশে চাকরি করে দেশে ফিরছে। সে দেশে এসে না করতে পারে বিয়ে না ওখানে সংসার করতে পারে! এটা কি চিন্তা করে সমাজপতিরা ? ৩৬ হাজার টাকা দিয়ে বিদেশ লোক পাঠিয়ে বাহবা বাহবা নেন তাঁরা, এটা কিন্তু ঠিক না। মানবসম্পদ উন্নয়নের বিভিন্ন সেক্টর আছে, এসব খাতের উন্নতি যথেষ্ট কম। সরকারের কিন্তু লক্ষ্য দারিদ্র বিমোচন, সেখানে বাস্তবতা কী? লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে কি ? অবশ্যই না।

২০১৫ সাল পর্যন্ত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল ছিলো, আপনি এচিভ করতে পারেননি? এক ভাগও না। আপনার তো কথা ছিলো ১০০ ভাগ শিক্ষিত করা, আপনি কি পেরেছেন ? শিক্ষিত হয়েছে জনগণ ? যা হয়েছে সব জাল, ভুল তথ্যে ভরা। সরকারের উপর আমাদের আস্থা খুব কম। অনেক ক্ষেত্রে অনেক সমালোচনা হয়। যেমন আমি ছোট্ট একটি উদাহরণ দিই, জিডিপি বাড়ছে ৬-৭ ভাগ। অর্থনীতির একটি ধারণা আছে, অর্থনীতিতে যদি ৬ ভাগ গ্রোথ হয় তাহলে ওই সমাজে কত ভাগ জব ক্রিয়েট হয়? এটার কিন্তু একটি ম্যাচিং পয়েন্ট আছে। জব ক্রিয়েশনের ব্যাপারে আমরা চরমভাবে পিছনে পড়ে আছি, তাহলে আমার উন্নতির প্রভাবটা কোথায়? সরকারের কথায় যদি ৬/৭ ভাগ গ্রোথ হয় তাহলে আমাদের লোকজন বেকার কেন? ৬৫ লাখ মানুষ ভূমিহীন হয় ‘ বিকজ অব হেলথ’। ছোট্ট একটি উদাহরণ দিই, আমাদের গ্রামের বিবাহিত যুবতি মায়েরা কয়জন গাইনি ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন ? দারিদ্র বিমোচনের সঙ্গে এগুলো সম্পৃক্ত। আমি গ্রামের দরিদ্র মানুষ। আমার টাকার ক্রাইসিস। আমার খাবারের ক্রাইসিস। আমার সন্তানকে আমি কাজে পাঠাবো স্কুলে পাঠাবো না, আগে পেটের ক্ষুধা। এই জিনিস বুঝতে হবে। ক্ষুধা প্রোটেকট করার পর স্বাস্থ্যটাকে প্রোটেক্ট করে তারপর স্কুলে পাঠানোর জন্য রাস্তাটা খুলতে হবে । তাহলে আপনাআপনি লোকজন চলে আসবে ।

বাল্য বিবাহ আইন দিয়ে বন্ধ হবে না
আমি অনেকদিন আগে একটি কথা বলেছিলাম যে বাল্য বিবাহ আপনি বন্ধ করতে পারবেন না । যদি মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি না করেন । একটা বস্তির বাবা তার ঘরে যদি একটি যুবতি মেয়ে থাকে সে রাতে ঘুমোতে পারবে ? ভাঙা বেড়া থাকলে ? কোন বাবা পারবে ? তো এই বাবা কি চিন্তা করবে না তার মেয়টাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য? এটা কিসের জন্য? ক্রাইসিসের জন্য। এই পরিবেশটাকে তো আপনাকে পরিবর্তন করতে হবে । খালি আইন করলেই হবে ? আইন তো অনেক আছে । আইন করলেই তো এটা বাস্তবে প্রয়োগ করা যায় না । বাস্তবে প্রয়োগ করতে হলে অবস্থা বিবেচনা করে করতে হবে ।

আমি ২০১২ সালে অর্থমন্ত্রীকে বলেছিলাম, বাজেট আইনটা এখন যে পর্যায়ে আছে আপনি যদি এ পর্যায়ে প্রয়োগ করতে চান তাহলে দেশের ১৬ কোটি মানুষ অপরাধী হবে, আপনি ১৬ কোটি মানুষকে জেলখানায় ভরতে পারবেন ? ১৬ কোটি লোকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন ? সুতরাং বাজেটটাই হতে হবে অন্যরকম । আপনি যে বাজেট পেশ করেছেন এটা তো এখন অর্থনীতির সঙ্গে ম্যাচ করে না, জনগণ আপনাকে ভ্যাট দিবে। ভ্যাট দেওয়ার পর জনগণ আরও গরিব হবে। গরিব হলে সে তার সন্তানকে পড়াতে পারবে না। ভ্যাট আইনটা বাংলাদেশর জন্য কোন অবস্থাতেই প্রয়োগযোগ্য না, অবশ্য এটা আমার দৃষ্টিতে। গ্রামের প্রতিটি ইউনিয়নে প্রচুর ট্রেড লাইসেন্স আছে। বাংলাদেশর অর্থনীতিতে ভ্যাটের মত অপ্রত্যক্ষ করের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। আপনি শুধু নিবেন, কিছু দিবেন না তা তো হয় না।

আজকের বাজার : এসএ/ডিএইচ/আরআর/ ১৪ জুন ২০১৭