বাংলাদেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্নতা দুর্যোগ মোকাবেলা করে ধরে রেখেছে

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, সুপার সাইক্লোন আম্পান ও সাম্প্রতিক বন্যা মোকাবেলা করে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্নতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিখাতের বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ওয়েবিনার ‘বিয়ন্ড দ্যা প্যানডেমিক’ এর দ্বাদশ পর্বে উপস্থিত আলোচকরা তাদের বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।

রাত সাড়ে ৮ টায় শুরু হওয়া এই ওয়েবিনার আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, করোনা মহামারিতে সারাদেশের মানুষ একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, নানা ভাবে মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে, সামাজিক ভাবে বিপযস্ত। এরই মাঝে দেশে বন্যার ভয়বহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যার ভয়বহতায় যাতে কৃষিখাত ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, এ জন্য আমরা বন্যাক্রান্ত প্রায় ৩৩টা জেলার কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তা, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সাথে আলোচনা, পর্যালোচনা করেছি, দিক নির্দেশনা দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার সংকটে জাতির উদ্দ্যেশে যতগুলো ভাষণ দিয়েছেন, ভিডিও কনফারেন্স করেছেন প্রতিটি জায়গায় তিনি কৃষিতে স্বাস্থ্যের পরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন ‘এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবেনা। যে পরিস্থিতি, যে ভয়াবহতা এখন কোনো ভাবেই খাদ্য সংকট রাখা যাবে না।’ আমরা এটা বিবেচনায় নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ ভাবে চেষ্টা করেছি। তিনি আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গ সংগঠনকে কাজ করতে নির্দেশ দেন।’

প্রফেসর এমিরেটাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাবেক উপাচার্য ড. এম এ সাত্তার মন্ডল বলেন, এতোকিছুর মধ্যেও ভালো খবর হলো আমাদের কৃষিতে উৎপাদন ব্যবস্থাতে একটা লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তনটা হলো ১ কোটি ৬৫ লক্ষ কৃষক পরিবার যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঙ্গিকে চাষাবাদ করতো সেটা এখনো আক্ষরিক অর্থে আছে। কিন্তু কার্যত একটি ঘটনা ঘটে গেছে। যে ব্যক্তি পর্যায় থেকে একটি সার্ভিস প্রোভাইডার বা মার্কেট-লেড একটি উৎপাদন ব্যবস্থা কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এসেছে। যা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় এবং এটা বানিজ্যিক কৃষির সাথে খুব সংগতিপূর্ণ।

বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয় তখন আপনারা দেখবেন বঙ্গবন্ধু কিন্তু কৃষির উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এছাড়া ১৯৭৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী জাতির পিতা এই সবুজ চত্বরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে কৃষিকে আরো উন্নত করার জন্য এবং কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা আরো এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৃষি গ্যাজুয়েটদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা প্রদান করেন। সেই থেকে কৃষি গতি পেয়েছে এবং দূর্বার গতিতে এগিয়ে গিয়েছে।’

বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি ও সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান বলেন, মৎসের ব্যাপারে প্রথম দেখি এই যে কোভিড-১৯ সারাবিশ্বকে যেটাকে আক্রান্ত করেছে বাংলাদেশও সেটি থেকে বাদ পড়েনি এবং এই মহামারীতে কি ক্ষতিটা হয়েছে আমরা একটু যদি বিশ্লেষন করি এটার কিন্তু একটা ইতিবাচক প্রভাবও আছে। যেহেতু মৎস যে সমস্ত জায়গায় বিচরন করে যে প্রজনন কেন্দ্র সে মাছ গুলো যেহেতু যে হ্যাচারীর মালিক আছেন। তারা তুলে আনতে পারেন নাই। যেহেতু সাপ্লাই চেইনটা ভালো ছিলো না, সেখানে মৎস প্রজনন টা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই ভাবে যদি উন্মুক্ত জলাশয়ের গুলো বলা হয়, সেখানে কিন্তু শিল্পকারখানা বন্ধ থাকা বা বেপরোয়া ভাবে যে মাছ ধরে ফেলা বা পোনা মাছ ধরে ফেলা এগুলো এবার হয় নাই।’

আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় এসেছে এক ব্যাপক পরিবর্তন। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা দ্বিগুন পরিমান বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চারগুন। এখন আমরা খাদ্য উৎপাদনে সয়ংসম্পূর্ন শুধু তাই নই বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়। আমি আরও বলি বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে প্রথম , মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, পাট উৎপাদনে তৃতীয়, ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজী উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম আম উৎপাদনে সপ্তম। এখন আমরা খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ন। সরকারের ধারবাহিকতা আছে বলেই খাদ্য উৎপাদন খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান।

ওয়েবিনারটি আওয়ামী লীগের সামাজিক মাধ্যম ছাড়াও বিজয় টিভির পর্দায় ও ফেসবুক পেইজ, বিডিনিউজ২৪, সমকাল, ইত্তেফাক, ভোরের কাগজ, যুগান্তর, বাংলানিউজ২৪, জাগোনিউজ২৪, বার্তা২৪, সারা বাংলা, বাংলাদেশ জার্নাল এবং চ্যানেল আই’র ফেসবুক পেইজে প্রচারিত হয়। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান