বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ

পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে সম্প্রতি ভারত থেকে আমদানিকৃত পাথরবোঝাই গাড়িতে অবৈধভাবে আনা মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়। এ ঘটনার জের ধরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দরের ইয়ার্ডেই আমদানিকৃত পাথর আনলোডের নির্দেশ জারি করে। এ সিদ্ধান্তের পর গত এক সপ্তাহ বাংলাবান্ধা দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছে বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশন ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে পাথর আমদানিনির্ভর স্থলবন্দরটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম। একই সঙ্গে দৈনিক প্রায় ১৫ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কাস্টমস আইনে আমদানিকৃত পণ্য বন্দরের ইয়ার্ডেই রাখার কথা বলা রয়েছে। কিন্তু জায়গাস্বল্পতার কারণে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পাথর শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নির্ধারিত সীমানার মধ্যে আনলোড করে আসছেন।
গত ৩১ অক্টোবর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পাথরবোঝাই একটি ট্রাকের মধ্যে মিথ্যা ঘোষণায় ২০ টন মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ (গাড়ির স্প্রিং) নিয়ে আসে আমদানিকারক রোজা ইন্টারন্যাশনাল (সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট তাসনিন এন্টারপ্রাইজ)। বিষয়টি টের পেয়ে ওইদিনই গভীর রাতে চালানটি আটক করেন বিজিবির টহলরত সদস্যরা। এরপর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত পাথরসহ যাবতীয় পণ্য বন্দরের ইয়ার্ডেই আনলোড করার নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশনা ব্যবসার অনেক ক্ষতি করবে দাবি করে গত শনিবার থেকে পাথর আমদানি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।
আমদানিকারকরা জানান, বন্দরের অভ্যন্তরে পাথর আনলোড করে কাস্টমসের যাচাই-বাছাই শেষে আবার লোড করে নির্ধারিত স্থানে পাথর স্থানান্তরে পরিবহন খরচসহ অবকাঠামোগত সমস্যা বাড়বে। ফলে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়বেন। এছাড়া প্রতিদিন যে পরিমাণ পাথর আমদানি করা হয়, সে পরিমাণ পাথর রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা বন্দর ইয়ার্ডে নেই। এ কারণে কাস্টমসের শর্ত মানতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই বন্দরের বাইরে পণ্য আনলোডের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এর সুযোগ নিয়ে কিছু ব্যবসায়ী অসদুপায় অবলম্বন করছেন। এ কারণে বন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করাসহ আমদানিকৃত সব পণ্য বন্দরের ইয়ার্ডে আনলোড করার শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবলা বলেন, আমরা আইনের প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সব শর্ত আমরা মেনে নিতে রাজি আছি। কিন্তু আমাদের বিষয়টিও তো তাদের দেখতে হবে। এক হাজার টন পাথর আমদানি করে আমাদের ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। এখন যদি ইয়ার্ডেই পাথর লোড-আনলোড করতে হয়, তাহলে আমাদের লাভ তো দূরে থাক, লোকসান গুনতে হবে। আমি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে ভেহিকল স্ক্যানার আনার অনুরোধ করছি। আগামীকাল এ ব্যাপারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আবার বৈঠকে বসব আমরা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আ ক ম বজলুর রশীদ বলেন, আমরা তো কাউকে পাথর আমদানি করতে নিষেধ করিনি। আমরা কেবল বন্দরের ইয়ার্ডের মধ্যেই পণ্য আনলোড করতে বলেছি। এতে তারা যদি আমদানি বন্ধ করে দেয়, আমাদের কিছু করার নেই। সরকারের রাজস্ব হারানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পণ্য আমদানি হলে সরকার রাজস্ব পাবে, আমদানি না হলে পাবে নাÑ এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।
আজকের বাজার : সালি / ১৫ নভেম্বর ২০১৭