বিদায়ী বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল ব্যাংকিং খাত

এস এম জাকির হোসাইন: বিদায়ী অর্থ বছের অনেকগুলো আলোচিত ঘটনার মধ্যে ব্যাংকিং খাত ছিল উল্লেখযোগ্য। নামে-বেনামে ইচ্ছেমতো অর্থ তুলে নেওয়ার প্রতিযোগিতা বিদায়ী অর্থ বছর ছিল আলোচনার তুঙ্গে । বেড়েছে খেলাপী ঋণ তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অনিয়মও । এমন অবস্থায় ব্যাংক খাতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা
দেশে সরকারি-বেসরকারি-বিদেশি মিলে মোট ৫৭টি ব্যাংক রয়েছে। আর্থিক অবস্থার অবনতি হওয়া ১৩টি ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ব্যাংক আটটি। এমনকি দুই বছর ধরে এই ১৩ ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি । বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিস্থিতি কয়েক বছর ধরে খারাপ। এছাড়াও বেসরকারি খাতের একাধিক ব্যাংকের মালিকানা বদল নিয়েও নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ছাড়াও প্রায় এক যুগ আগে বিলুপ্ত হওয়া ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের দুর্নীতির বোঝা এখনো টেনে চলেছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। যার কারনে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সেগুলো চালু রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো যেখানে ভালো চলছে না, সেখানে নতুনভাবে বেসরকারি ব্যাংক অনুমোদনের তোড়জোড় চলছে।
বিদায়ী বছরে এসে দেশের ব্যাংক খাত যেন নাজুক হয়ে পড়েছে। ৪৮টি ব্যাংকের মধ্যে ১৩টির আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। প্রায় সব ব্যাংকেই যেন সুশাসনের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ।

খেলাপি ঋণে প্রভিশন ও মূলধন সংকট
বছরের শুরু থেকে ব্যাংকিং খাতে লাগামহীনভাবে বাড়ে খেলাপি ঋণ। নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) ও মূলধন ঘাটতিতে পড়ে সরকারি-বেসরকারি বেশকিছু ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা, যা ১৬ ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা।
সরকারি ও বেসরকারি খাতের সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েেেছ। সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক। বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও নতুন করে যুক্ত হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। মোট ঘাটতির সিংহভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের। সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ৪২১ কোটি টাকা ঘাটতিতে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকে।
প্রভিশন ঘাটতির পাশাপাশি মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে আটটি ব্যাংক। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে আট ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে তিনটি রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংক, তিনটি রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিশেষায়িত ব্যাংক এবং তিনটি বেসরকারি খাতের ব্যাংক রয়েছে। নতুন করে যোগ হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংক।
বেসরকারি ব্যাংকে পরিবর্তন আতঙ্ক
বছরের শুরুতেই বেসরকারি খাতের অন্যতম ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। গত বছরের শুরুতে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংক এবং অক্টোবরে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়। ব্যাংক তিনটির শেয়ার বিক্রি করে মালিকানায় পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ এখন ব্যাংক তিনটির মালিক।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় আরমাডা স্পিনিং মিলের পক্ষে পরিচালক হিসেবে আরাস্তু খান যোগ দেন। এরপরই চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ার ও ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল মান্নান পদত্যাগ করেন। কমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আরাস্তু খান চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। আবদুল হামিদ মিঞাকে নতুন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
২ জুন ব্যাংকটির ৩৩তম বার্ষিক সাধারণ সভায় নতুন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য নতুন নতুন কোম্পানি তৈরি করে ব্যাংকটির পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়।
এদিকে পর্ষদ পরিবর্তনের পর থেকে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় ইসলামী ব্যাংকে। এরপর থেকে ব্যাংকটির শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন বিদেশি উদ্যোক্তারা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটিতে বিদেশিদের হাতে ছিল মোট শেয়ারের ৭১ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। কমে গেছে আয় ও আমানতের প্রবৃদ্ধি।
চলতি বছরের অক্টোবরে কুয়েত ফাইন্যান্স হাউজ আট কোটি ৪৫ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮২টি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে এস আলম গ্রুপের কাছে। গ্রুপটির হাতে বেসরকারি খাতের আরো বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কর্তৃত্ব রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক্সিম ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ছাড়া সবকটিই এখন চট্টগ্রামের এ গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে।
এদিকে চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর ইসলামী ব্যাংকের কায়দায় পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আনা হয় বেসরকারি খাতের সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল)। এ পরিবর্তনেও জড়িত ছিলেন এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান রেজাউল হক, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুল হক, এমডি শহীদ হোসেনকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ। নতুন এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি কাজী ওসমান আলীকে। এছাড়া নির্বাহী কমিটির নতুন চেয়ারম্যান করা হয় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদকে। তিনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের জামাতা। এসব কারণে বেসরকারি ব্যাংকে পরিবর্তন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্ঠা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম আজকের বাজারকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিদায়ী অর্থ বছর আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে গেছে ব্যাংকিং খাত। যা ছিল অপ্রত্যাশিত। ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম আর সুশাসনের অভাবের মূলে দায়ী রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার পেছনে দায়ী মালিক পক্ষের কর্তিত, ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অসম প্রতিযোগিতা আর কেন্দ্রিয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রন জোড়দার না থাকা। অনিয়ম বন্ধে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং প্রয়োজনে আইন মন্ত্রণালয়কে একসাথে কাজ করার জরুরি বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। একই সাথে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রন আরও জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।
অনিয়ম থাকা সত্ত্বেও শাস্তি হয়নি
অনিয়ম হলেও শাস্তি না হওয়ায় বাড়ছে অপকর্ম। প্রায় চার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির নেপথ্যে থেকেও ধরাছোঁয়ার বাইরে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় কেউই কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি তার বিরুদ্ধে। অনিয়মের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদেই দায় সারছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর এসব কারণে আর্থিক খাতে বাড়ছে অনিয়ম-দুর্নীতি আর নানা কেলেঙ্কারি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ
বছরজুড়ে ব্যাংকগুলোর পর্ষদ পরিবর্তন ও অনিয়মে প্রায় নিশ্চুপ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে নানা অনিয়মের ঘটনায় বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপও নিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের পর্ষদ পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে বাধ্য হন ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও এনআরবি কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসাত আলী।
সর্বশেষ ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম শামীমকেও সরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও অনিয়মের অভিযোগে অপসারণ করা হয় এনআরবিসির এমডি দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে। সুশাসনের অভাব, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও প্রভিশন ঘাটতিসহ বিভিন্ন কারণে এবার এবি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতামতের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স পাওয়া চতুর্থ প্রজন্মের নতুন নয়টি ব্যাংকের নানা অনিয়ম ও আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ে জড়িয়ে পড়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। পরিচালকদের ঋণ ভাগাভাগিতে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় লাভ তো দূরের কথা মূলধনই খেয়ে ফেলছেন তারা। এরপরও নতুন করে আরো তিনটি ব্যাংক অনুমোদনের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্ঠা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম আজকের বাজারকে বলেন, দেশের অর্থনীতির কাঠামো অনেক ছোট। তার তুলনায় আগে থেকেই ৫৭টি ব্যাংক অনেকে বেশি। এর উপর ফের নতুন করে রাজনৈতিক বিবেচনায় আবার কোন ব্যাংক দেয়ার পক্ষে মত নেই এই অর্থনীতিবিদের। । কিন্তু দেশের আর্থিক কাঠামো এতই ছোট যে,এখানে আর একটি ব্যাংকও কোন ভাবেই অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি করবে না।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম আর জালিয়াতির যে রীতি চালু হয়েছে নতুন ব্যাংক এলে তার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত হবে। আর রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন করে ব্যাংকের অনুমোদন দিলে অনিয়ম আর সুশাসনের চরম অভাব দেখা দিবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাই এসব প্রতিরোধে রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংক না দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
মালিকদের চাপে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন
মালিকদের চাপে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ সংশোধনী চূড়ান্ত হলে কয়েকটি পরিবারের কাছে ব্যাংকের মালিকানা চলে যাবে। কারণ আইন সংশোধন করে ব্যাংকের পর্ষদে একই পরিবার থেকে চারজন এবং একটানা নয় বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ রাখা হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকে এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক থাকলে ব্যাংকে সুশাসনের ঘাটতি দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা।

জাতীয় সংসদে আলোচনায় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, ব্যাংক খাতে এক লাখ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ। বেশির ভাগ পরিচালক তা ভাগাভাগি করে নিয়ে গেছেন। পুরো ব্যাংক খাত জিম্মি হয়ে আছে ব্যাংকের মালিক-পরিচালকদের কাছে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ সংসদে বলেন, ব্যাংক খাতে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকে এক পরিবার থেকে চার পরিচালক দেয়ার নিয়ম হচ্ছে, ব্যাংকগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালকও নেই। এভাবে চললে ব্যাংকগুলো মুদির দোকান হয়ে যাবে।
ব্যাংকিং খাতের নাজুক অবস্থার বিষয়টি স্বীকার করে সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বলা হচ্ছে এ খাতে অযথা ভর্তুকি দিচ্ছি। ব্যাংকিং খাতে কোনো ধরনের বিপর্যয় হলে তা সারাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ব্যাংকিং খাতে যখনই কোনো অসুবিধা হয় তখনই পদক্ষেপ নিয়ে থাকি আমরা।
আজকের বাজার: সালি / ০১ জানুয়ারি ২০১৮