‘বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আরো সংস্কার দরকার’

মাহবুব এইচ মজুমদার : আমাদের দেশের পুঁজিবাজার এখনও যথেষ্ট ম্যাচিউরড বাজার না। আর বাজার ব্যবস্থাপনায় সংকটের কথা বলতে গেলে সেটির কোনো শেষ নেই। নিয়ইয়র্কের পুঁজিবাজারেও অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি এখনও অবধি বিদ্যমান। বোম্বে স্টকেও প্রায়ই সমস্যা হচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত যেভাবে ডেভেলপ করছে, আমাদের বাজারকেও সেভাবে আপডেট করে নিতে হবে।

পারফেক্ট বাজার পৃথিবীর কোথাও এখনও অবধি গড়ে ওঠেনি। কারণ এখানে মনস্তাত্ত্বিক অনেক বিষয় জড়িত থাকে। সে কারণেই এখনই পারফেক্ট মার্কেট আমরা পাবনা। তবে খেয়াল করতে হবে বৈশ্বিক যে ডেভেলপমেন্টগুলো হচ্ছে সেটি আমাদের মার্কেটে আছে কিনা। আসলে পৃথিবীর কোথাও পারফেক্ট বাজারের অস্তিত্বই নেই।

কেবল ইকুইটি বেইস দিয়ে একটা মার্কেট বছরের পর বছর চলতে পারেনা, চলতে পারে সাময়িকভাবে। মার্কেটে বিভিন্ন ধরণের প্রোডাক্টের ভ্যারাইটিস, ফিক্সড ইনকামের ভেহিকেল বা বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্টগুলো আসতে হবে। আমাদের মার্কেটে সেটি এখনও স্থবির হয়ে আছে বলেই আমরা দেখতে পাচ্ছি। ইকুইটি ছাড়া আর কোানো কিছুই আসছে না এ বাজারে, সেটা একটি বড় লস। আইটি সক্ষমতা অনেকদূর এগিয়েছে ঠিকই, তবে সেটি পর্যাপ্ত নয়। এটি আরো অনেক উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।

এক্সটেনসিভ বিজনেস রিপোর্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা এক্সবিআরএল-এ এটি একটি ডাটাবেজের মত, যেটি সর্বদা আপডেট হবে, গতিশীল ও ডায়নামিক থাকবে। কিন্তু আমাদের দেশে সেটি এখনও অনুপস্থিত। যদিও এ বিষয়ে নজর দিয়ে বারবার চেষ্টা করেও রেগুলেটররা পিছিয়ে আছেন।

বাজারে সবচেয়ে বেশি সমস্যা যেটা তা হলো, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যতদ্রুত আগানো উচিৎ ছিল ব্যুরোক্রেসির কারণেই হোক, ফান্ডের স্বল্পতার কারণেই হোক বা নীতিগত কারণেই হোক সেভাবে আগানো যাচ্ছেনা। আর সেটাই বাজার ব্যস্থাপনার অন্যতম দূর্বলতা। তাই গতিশীলতা যতটা থাকা দরকার ছিলো তা আজও আসেনি।

বৈশিক নানা পরিবর্তনের প্রভাব পৃথিবীর অন্যান্য বাজারে যতটা দ্রুত ইতিবাচক পরিবর্তন আনে আমাদের দেশে তা মূলত হচ্ছেনা। আমাদের বাংলাদেশে যেসব ফ্যাক্টরগুলো পুঁজিবাজারে প্রভাব ফেলতে পারে সেগুলোকে সংশ্লিষ্ট সকলকে আমলে নিতে হবে। সবাইকে তা বুঝতে হবে। সকলকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।

যারা নীতি নির্ধারণী পলিসিতে থাকেন তাদেরকে আরো অনেক গতিশীল করার জন্য, নজরদারির জন্য উর্ধ্বতন আর কেউ থাকে না। তাই রেগুলেটর যারা রয়েছেন তাদের নিজেদেরকেই গতিশীলতার বিষয়টা বুঝতে হবে। আসলে আমাদের দেশের নীতি নির্ধারক ও রেগুলেটরদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। বিএসইসির সাথে সেন্ট্রাল ব্যাংক, এনবিআর, ইন্সুরেন্স অথরিটিসহ অনেকের সাথে সমন্বয়হীনতা এ বাজারে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সংকট কাটাতে সবার অংশগ্রহন প্রয়োজন।

বুড বিল্ডিং মুক্তবাজার অর্তনীতি বা পুজিবাজারের জন্য প্রয়োজনীয় একটি টুলস। যেটির কার্যকারিতা সঠিক না হলে এ বাজারে ভালো কোম্পানি আসবে না। আর বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন না বরং কারচুপির শিকার হবেন। এখানে কিছু সংশোধনী হয়েছে। আরো কিছু সংশোধনী আনা জরুরি বলেই আমি মনে করি।

এখনকার সিস্টেমে বিডিং প্রাইস দেখা যায়। এটা বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্বিকতায় একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আশংকা রাখে। স্ক্রিন এখানে প্রভাবিত করে। ৭২ ঘন্টা যে বিডিংটা হয় সেটা সেশনের শেষে গিয়ে কত টাকা প্রাইসিং হলো বা কে কত করে শেয়ার পেল তা দেখতে দেয়া চলবে না। বিডিং দেখানো যাবে না কখনই। দেখা গেলে কারচুপি হতে পারে। দেখতে হবে শুধুমাত্র বিডিংয়ের কারণেই বিড করা চলবে না। ৭২ ঘণ্ট বিডিংয়ের শেষে কোন কোম্পানীর শেয়ার কত মূল্যের হলো স্ক্রিন থেকে মুছে না দিলে কোম্পানীর শেয়ারহোল্ডাররা লোকসানে পড়তে পারেন। তাহলে তো সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অপরদিকে কোম্পানী লাভবান হলেই তো বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন।

মাহবুব এইচ মজুমদার
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড