বেসরকারি উদ্যোগে দেশে প্রথম ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন

ধান নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে নানা ধরনের উত্তেজনা দেখা যায়। একদিকে কৃষক তাদের উত্তোলিত ধানের যথাযথ দাম পাচ্ছে না। অন্যদিকে শহরের মানুষ বলছে, দেশে এত কম দামে ধান বিক্রি হওয়া সত্বেও তাদেরকে চাল কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। এই ধরণের একটা উত্তেজনা দেশ জুড়েই চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসিআই এগ্রিবিজনেস বাজারে নতুন দুই ধরণের ধানের জাত নিয়ে এসেছে। যদিও গত ১৮-১৯ বছর যাবৎ ধান প্রাইভেট সেক্টর রিলিজ করছে। তবে সেগুলো ছিলো হাইব্রিড ধান। আর নতুন এই ধানের জাত দুটো বাংলাদেশে চাষাবাদ হওয়া ধানের থেকে ভিন্ন। এগুলো ইমব্রিড ধানের জাত।

বাংলাদেশে সাধারণত যে ধরণের ধান চাষাবাদ হচ্ছে, তা হলো হাইব্রিড ধান। ইমব্রিড ধানের জাত নিয়ে বাংলাদেশ এতদিন গবেষণা বা রিলিজ করতে পারেনি। কিন্তু এই প্রথমবারের মত বাংলাদেশে এসিআই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্যে বোরো সিজনের জন্য বিএইউ-১ নামের একটা বিজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিজ্ঞান অনুষদের সাহায্যে আমন সিজনের জন্য আরেকটি বিজ রিলিজ করেছে। এই দুটো ধান আমরা রিলিজ করলাম সরকারের বিজ প্রত্যায়ন বিভাগের মাধ্যমে। আমি বলব, এটা একটা বিরাট ডায়নামিক উদ্যোগ। আর এখানে সরকারও প্রসংসা পাওয়ার যোগ্য। কেননা, একটা নতুন আইন তৈরি করে, প্রাইভেট সেক্টরকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

একদিকে প্রাইভেট সেক্টর হিসেবে এসিআই এতবড় একটা উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের দায়িত্বের পরিচয় দিয়েছে। এত বছর যাবৎ বলা হতো যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে পারে না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সেটাও হয়ে গেলো। পাশাপাশি আমাদের দেশের সরকারি যে নিয়ম কানুনগুলো ছিলো সেগুলোকে বদলে প্রাইভেট সেক্টরকে এখানে স্বীকৃতি দেওয়া একটা বড় সাফল্যের বিষয় দেশের জন্য। আমি মনে করি, আজকের এই সাফল্য শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, এটা বিশ্বের জন্যও একটা চমক।

বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে কাজ করে। তারা রিসার্চ করে নতুন কিছুর উদ্ভাবন করে। কিন্তু আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করে না বলে নেতিবাচক গুঞ্জন রয়েছে। সেক্ষেত্রে এবার প্রাইভেট সেক্টর হিসেবে এসিআই’র উদ্যোগে নতুন এই জাতের ধান রিলিজ হওয়ার পিছনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়।

ইমব্রিড জাতের ধানের বিশেষত্ব:
বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিরি) নিজেদের বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় ও আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) সহয়তায় প্রায় ৮০-৯০ টি জাতের ধান রিলিজ করেছে। এগুলোর যথেষ্ট ভালো সাফল্য আছে। এদেশের যতগুলো ধানের জাত আছে, তার সবগুলোই বিরি থেকে এসেছে। আর ইমব্রিড জাতের ধানও বিরি থেকেই এসেছে। একইসঙ্গে ধানের জাত উদ্ভাবনে আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে এসিআই’র সঙ্গে ইরি একাধারে গত ৪ বছরেরও বেশী সময় ধরে কাজ করছে। ফলে তাদের (ইরির) বিজ্ঞানীদের প্লান ও আমাদের এখানে যেসব বিজ্ঞানীরা কাজ করেন, তাদের প্লান মিলে একটা সুন্দর জাত উৎপাদিত হলো। এটা উল্লেখ্য যে, আমাদের এখানে যিনি প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে রয়েছেন তিনি হলেন বিরি থেকে অবসর নেওয়া বিজ্ঞানী ড. সালাম। সুতরাং ধানের নতুন জাত দুটো রিলিজের এই ধরণাটা আমরা একাধারে ইরি থেকে যেমন পেয়েছি, বিরি থেকেও তেমন পেয়েছি। পাশাপাশি আমাদেরও দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে এত তাড়াতাড়ি আমরা ধানের জাত দুটোকে উৎপাদন করতে পেরেছি।

ধানের নতুন এই জাত দুটো, অন্যান্য জাতের থেকে কিছুটা ভিন্ন ধরণের। আমাদের দেশে ধানের জাতের গুনগত মান নির্নয়ে তিনটা বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হয়। প্রথমেই দেখতে হয় যে, এটা কত দিনে উৎপাদন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রচলিত জাতগুলো থেকে নতুন জাত দুটো খুব অল্প সময়ে হারভেস্ট করা যাবে। এখানে কৃষকের লাভ হবে এই যে, কৃষক ঝড়-বন্যায় পড়বে না। দ্বিতীয়ত, আমনের ক্ষেত্রে যেহেতু সূর্যের আলো কমে যায় এবং উৎপাদনও কম হয়, সেহেতু ধান উৎপাদনে সময়টা কম লাগলে ফলন ভালো পাওয়া যবে। যার কারণে ভালো জাত খুবই জরুরী। সেক্ষেত্রে বোরো বা আমন সিজনের জন্য আমরা যে নতুন উদ্ভাবিত ধান দিয়েছি, তা ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করি।

তারপর তৃতীয় দিকটা হলো, ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আমরা জানি যে, দুটো ভালো জাতের ধান বেশ কয়েক বছর যাবৎ মাঠে আছে। এগুলোতে অনেক ফলন হচ্ছে। এসব জায়গাতে আমরা আমন সিজনের জন্য যে ধানের জাতটা এনেছি, সেটার গুনগত মান প্রমানিত। ফলে কৃষকের ভয় পেতে হবে না। তারা খুব সহজেই ফসলটাকে ঘরে আনতে পারবে। এই তিনটি কারণে ধানের জাতগুলো খুব সুপ্রিয় হবে। এবং কৃষকরা এটাকে পছন্দ করবে বলে আমি মনে করি। কেননা, উৎপাদন বেশী হওয়ায় তাদের খরচ কমে যাবে এবং কোয়ালিটি ভালো হওয়ায় তারা দামও বেশী পাবে। আর যেহেতু রোগ পতিরোধ ক্ষমতা পরিক্ষিত, সেহেতু ফলস নষ্ট হওয়ার ভয়টা তাদেরকে করতে হবে না।

কৃষকের কাছে নতুন জাতের ধান পৌঁছাবে কিভাবে?
কৃষকের কাছে নতুন জাত দুটো পৌঁছানোটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এতবছর সরকারি রিচার্স ইনস্টিটিউশন বা ইউনিভার্সিটির প্রচেষ্টায় যেসব ধানের জাত উৎপাদন হতো, তা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সাহায্যে গ্রাম পর্যায়ে প্রচারণা চালানো হতো। এখন আমরা তো প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করছি। আমরা মনে করি, আমাদের কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কাজই হলো বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য টেকনোলজি নিয়ে যাওয়া। এটা যেখান থেকেই (বিরি, প্রাইভেট সেক্টর, ইউনিভার্সিটি, বিদেশ থেকে) রিলিজ হোক না কেন, এটার প্রচারণা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উদ্যোগেই হওয়া উচিত। যেহেতু এই জাত দুটো ভালো রিকমান্ডেশন পেয়েছে এবং সিড বোর্ডের সাহায্যে রিলিজ হয়েছে, সেহেতু আমাদের দাবি হলো এটাকে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সাহায্যে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। অফিসিয়াল সবার ট্রেনিং করাতে হবে। যারা ডাউন দ্যা লাইন কাজ করছে তাদেরকে প্রাক্টিক্যালি দেখাতে হবে।

আর আমারা এসিআই হাউসে যে কমুনিকেশন টুলস ইন্টিলিজেন্ট ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম (আডিএসএস) করেছি, এই আইডিএসএস এর সাহায্যে স্যাটেলাইট ইমেজিং করে, তথ্য কৃষকের কাছে দিতে পারছি। যেটাকে ডিজিটাল এগ্রিকালচার বলা হচ্ছে। এর ফলে আমরা ৭০ মিলিয়ন কৃষকের কাছে খুব দ্রুতই খবর পৌঁছে দিতে পারি। সুতরাং এই ধানের সুযোগ সুবিধা কি, এটা কিভাবে লাগাতে হবে, এর জন্য কি কি ইনপুট দিতে হবে এবং কোন কোন এলাকায় লাগালে ভালো ফল পাওয়া যাবে, তা কৃষককে জানাতে পারবো। পাশাপাশি কৃষকের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা যাচ্ছে। অর্থাৎ এই ফসলি অ্যাপসটির মাধ্যমেই ধানের জাতটি খুব দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছে যাবে। আমাদের ফসলি অ্যাপসটির টার্গেট মূলত কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের অফিসার, আমাদের মাঠ পর্যায়ের ডিলার ও বড় বড় খামারিরা। এক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে এই যে, কৃষকের যখন যে পরামর্শ দরকার হবে তা খুব দ্রুতই এই ফসলি অ্যাপসটির মাধ্যমে প্রমোট করতে পারবো।

নতুন জাতের ধান চাষের প্রক্রিয়া কৃষকদেরকে কিভাবে শেখানো যাবে:
ধান যেহেতু আমাদের দেশের খুবই পুরানো একটা ফসল এবং এটা চাষাবাদে কৃষকরা অভ্যস্ত, সেহেতু নতুন জাতের ধান চাষাবাদেও খুব একটা পার্থক্য হবে না। প্রচলিত ধান চাষের পন্থায় চাষাবাদ করলেই হবে। সেচ পদ্ধতি একই থাকবে। সার ব্যবহারেও কোন পার্থক্য নেই। এদেশের কৃষকরা যেটাতে অভ্যস্ত সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই এটার উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে কৃষকরা খুব স্বাচ্ছন্দভাবেই এই ধান চাষাবাদ করে বেশী ফলন ও ভালো দাম পেতে পারে।

বেসরকারি উদ্যোক্তা হিসেবে নতুন জাত উদ্ভাবনে আমাদের স্বার্থ:
কৃষি সেক্টরে এশিয়ার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ইরি ৩ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনকে দিয়েছে। এক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি হলো আমাদের রিসার্চ ফিল্ড, ল্যাবরেটরি, বিজ্ঞানিদের ট্রেনিং ও জার্মপ্লাজম সংগ্রহ এবং গ্রীন হাউস, এই সবকিছুর উন্নতি। পাশাপাশি বাংলাদেশে উৎপাদিত ধানের জাতগুলো নিয়ে গবেষণা করতে গত ৪-৫ বছর যাবৎ অনেক খরচ হয়েছে। যেটা আমাদের জন্য খুবই ব্যয়বহুল। প্রাইভেট কোম্পানি বা উদ্যোক্তা হিসেবে আমরা একটা বড় অঙ্কের টাকা ব্রান্ডিং করি বিজ উৎপাদনের জন্য। কিন্তু কৃষক যদি তা না নিয়ে, তার প্রতিবেশির থেকে হারভেস্টেড ফসল কিনে বিজ হিসেবে ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, ফসল কখনো বিজ হিসেবে ব্যবহার হতে পারে না। বিজকে বিজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। আস্তে আস্তে অনেক কৃষক এসব বিষয় বুঝেছে।

এখন বাংলাদেশের প্রায় সোয়া লাখ থেকে দেড় লাখ টন সিড, বিএডিসি এবং প্রাইভেট সেক্টরের সাহায্যে যাচ্ছে। যারা ভালো ফসল পেতে চাইবে তারা কিন্তু আমাদের প্যাকেটজাত করা সিড-ই সংগ্রহ করবে। আরেকটা দিক হলো, কেউ বিকল্প পন্থায় আমাদের সিড বিক্রি করতে পারবে না। কেননা, এটা তো তাদের প্রোডাক্ট নয়। অর্থাৎ অন্য কেউ ব্রান্ডিংও করতে পারবে না এবং বিক্রিও করতে পারবে না। অন্য কেউ বিক্রি করলে আমরা ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টের মাধ্যমে তা ধরে ফেলতে পারবো। কোন প্রাইভেট কোম্পানি এত বড় রিস্ক নিবে আমার মনে হয় না। তবে এক্ষেত্রে আমরা এসিআই অবশ্যই চেষ্টা করবো কৃষকের যতটা চাহিদা থাকবে তা পূরণ করার জন্য।

অন্যান্য কোম্পানিগুলোর এই ধরনের উদ্যোগ আছে কিনা:
এধরণের সিডের ক্ষেত্রে দু’একটা কোম্পানি কেবলমাত্র উদ্যোগ নিয়েছে। অনেক আগেও হয়তো উদ্যোগ নিয়ে ছিলো। কিন্তু কতটা উন্নতি করতে পেরেছে তা আমার জানা নেই। তবে এ প্রর্যন্ত কেবলমাত্র কারো রেজিস্টেশন হয়নি। এই প্রথম আমাদেরই দুটো সিডের এপ্লিকেশন পড়েছিলো এবং আমরাই প্রথম রেজিস্টেশন পেলাম। পাইপলাইনে আমাদের প্রায় ৩৫ হাজার ট্রেড আছে। এর মানে হলো, ভবিষ্যতে এখান থেকে আমরা আরও ভালো ভালো অনেক জাত পেয়ে যাবো। যেটা হবে এদেশের কৃষকের সম্পদ। এটা দিয়ে আমরা দেশের মানুষকে যথেষ্ট সাপোর্ট দিতে পারবো বলে মনে করি।

অনেকের ধারনা এই যে, এদেশে বেশী ধান হওয়ার জন্য হয়তো দাম কমে যাচ্ছে। তবে আমার মনে হয়, ধান যতই হোক না কেন, আমরা যতটুকু খাই কেবল ততটুকুই উৎপাদন করি। কেননা, আমাদের দেশের কৃষকরা কিন্তু কেবল নিজের জন্য অর্থাৎ পরিবার কিংবা পতিবেশিদের কাছে বিক্রি করার জন্যই ধান উৎপাদন করে।

আমরা মনে করি, উৎপাদন বেড়ে গেলেই কৃষকরা অনেক অল্প জায়গাতে অধিক ফলন পাবে। ফলে বাকি জায়গাতে তারা ভুট্টা, সবজি এবং ডাল জাতীয় খাবার চাষাবাদ করতে পারবে। তখন আর বিদেশ থেকে আমাদের এসব আমদানি করতে পারতে হবে না।

ধানের নতুন জাতে কৃষকের লাভ:
উৎপাদিত নতুন জাতের ধান চাষে কৃষক বাড়তি ফলন পাবে। তারপর যেহেতু এটা চিকন চাল, সেহেতু ভালো দামে বিক্রি করা যাবে। ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকায় কৃষকের ভয়টা কমে যাবে। পাশাপাশি কৃষক ৭-১০ দিন আগেই ধানটা ঘরে তুলতে পারবে। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে ধানটা খুব সহজে রক্ষা পাবে। আমি মনে করি, একটা ভালো জাতের ধান পাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকের যে চাওয়া ছিলো, তা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। তাছাড়া এটা রপ্তানিযোগ্যও হবে বলে আমার ধারনা।

ড. এফ এইচ আনসারী
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী, এসিআই এগ্রিবিজনেস