ব্যবসায় সফল হতে দরকার সঠিক কনসালটেন্সি

ইউনাটেড ইনভেস্টমেন্ট এন্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ ফখরুদ্দীন, ব্যবসা-জীবনে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে আজকের বাজার ও আজকের বাজার টেলিভিশন এবি টিভির কাছে তুলে ধরেছেন। ব্যবসায় পরামর্শকের ভূমিকা, পুঁজিবাজার, ভ্যাট আইনসহ নানা বিষয়ে আলাপচারিতার সারাংশ তাঁরই বাষায় প্রকাশ করা হলো।

বাংলাদেশের প্রোপটে ব্যবসার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গেলে বলা যায়, বাংলাদেশ অগ্রসর হচ্ছে এবং তা সব ক্ষেত্রেই। আর্থিক খাত, ব্যবসা-বাণিজ্য,উন্নয়ন সব দিক থেকেই আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু তারপরও যে কাক্সিত উন্নতি আমাদের হওয়া দরকার ছিলো, সে পর্যন্ত আমরা যেতে পারছি না। তার অনেক কারণ রয়েছে। এক নম্বর হচ্ছে, আমাদের সমাজে অতি মুনাফার লোভ, দ্বিতীয়ত বিভিন্ন জায়গায় আমাদের দুর্নীতির অতিমাত্রা। তিন নম্বর হলো, সরকারি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা। এবং শেষ কারণ বলবো, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সেক্টরে অসুবিধা। শিল্পের জন্য জায়গা-জমি পাওয়া, ফাইন্যান্স করা এরকম অনেক ঝামেলা আছে।
আমি যদি শিল্প খাত নিয়ে বলতে যাই, হয়তো একটা শিল্প নিয়ে কিছু কথা বলবো, কার কতটুকু ঠিক পছন্দ হবে জানি না। যখন একজন উদ্যোক্তা একটা শিল্প করতে যায়, ব্যবস্থা নেয়, সে কিন্তু লাভের আশায় যায়। একজন উদ্যোক্তা যখন শিল্প করতে যায়, তখন সে অর্থের জন্য ব্যাংকে যায়। তার ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্ট থাকে, তারপর সে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের কাছে যায়। ব্যাংকের কাছে যাওয়ার পর শুরু হয় দীর্ঘসূত্রতা।

যখন তিনি ব্যাংকের কাছে প্রকল্প জমা দেন, তখন যে ইউনিট প্রাইস থাকে, ব্যাংকের কাছ থেকে যখন প্রজেক্ট পাশ হয়ে বেরিয়ে আসে, দেখা দুই-তিন বছর পার হয়ে গেছে। ফলে যখন সে শিল্পের বাস্তবায়ন করলো তখনকার এবং প্রকল্প জমা দেওয়ার সময়ের যে কস্ট, দুই সময়ের মধ্যে খরচের অনেক পার্থক্য হয়ে যায়। এভাবে বলা যায় তিনি প্রথম থেকেই ধাক্কা খেতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত যখন সত্যিই একটা ইন্ড্রাস্ট্রির স্যাংশন হলো, ব্যাংক ইক্যুইটি নিয়ে তাকে ফাইন্যান্স দিলো, তার দরকার হলো দশ কোটি টাকা। ব্যাংক তাকে দেয় চার কোটি, পাঁচ কোটি টাকা। এই যে প্রথম থেকে সে ধাক্কা খায়, তারপরে তার ইচ্ছা অনুযায়ী সে অগ্রসর হতে পারে না। আর দ্বিতীয়ত, সে যখন এগুলো নিয়ে অগ্রসর হয়, তখন বিভিন্ন েেত্র তার ইচ্ছা না থাকলেও কিছু অসাধু পথ তাকে নিতে হয়। এ অবস্থায় প্রজেক্টটা দুর্বল হয়ে উদ্যোক্তা ভীষণ অসুবিধায় পড়ে যান। যেমন, যখন তিনি ওয়ার্কিং কন্টেন্ট পান না, হয়তো একজন ইন্ড্রাস্ট্রি করতে যাচ্ছেন, জায়গা কিনেছেন, ব্যাংককে ৩০ কি ৪০ ভাগ ইক্যুইটি দিচ্ছেন। টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এবং চুড়ান্ত পর্যায়ে তিনি যখন মেশিনারি কিনতে যান, তিন-চার বছর আগের তুলনায় যন্ত্রপাতির দামে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। বিদ্যুতের বিল বাড়ে, গ্যাসের বিল প্রায় দ্বিগুন হয়ে যায়। তখন মূল খরচের সঙ্গে মিলে না বলে উদ্যোক্তার ভীষণ অসুবিধা হয়। তারপর তার চাহিদা মতো এক ব্যাংক থেকে আর্থিক সহায়তা নিবেন, আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নিবেন সেই রাস্তাও আর থাকে না। ব্যাংকগুলোর শর্ত থাকে, ওই ব্যাংকের কিয়ারেন্স লাগবে। সেজন্য দেখা যায় অধিকাংশ প্রজেক্টই অনিচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে ।

বর্তমান অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে করণীয়
একজন এন্টারপ্রেনিয়রের চাহিদা মতো তাকে অর্থায়নে সহযোগিতা করা দরকার। প্রজেক্টের জন্য যে টাকা দরকার, সেই টাকা ফাইন্যান্স করা এবং উদ্যোক্তাকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল যোগান দেওয়া জরুরি। সন্তোষজনকভাবে এটা করতে হবে। বিনিয়োগের েেত্র স্বাধীনতা থাকতে হবে। ইনভেস্টমেন্ট প্রশ্নে যদি উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্যানিক কাজ করে, শিল্পের জন্য তা শুভ হয় না। এসব কারণে দেখা যায় যে আমাদের দেশে এখন আর তেমন কোনো নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে না। এখন পুরো ব্যবসার জগতটাই বিগ হ্যান্ডে, বড় বড় গ্রুপের অধীনে চলে গেছে, তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিভিন্ন অনৈতিক পন্থায় তারা কাজ করছেন। আজকাল ব্যাংকগুলোতে মূলধনের অভাব হচ্ছে, আসলে ব্যাংকগুলো মৃত। কারণ হলো জায়ান্টরা টাকাটা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই যে টাকাটা তারা ঋণ নিচ্ছে ব্যবসা করার জন্য, কিন্তু বিভিন্ন কারণে আসলেই অনেক কারণ আছে, ব্যবসা করতে এসে আটকে যাচ্ছেন। আমার মনে হয়, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপি হবে -এটা কেউ চায় না। আর যে সমস্ত প্রজেক্ট রাজনৈতিকভাবে পাওয়া হয়, সেটা আলাদা ব্যাপার। সেটা সম্পর্কে আমার কোনও বক্তব্য নেই। যারা সত্যিকারভাবে এন্টারপ্রেনিওর হয়ে ইন্ড্রাস্ট্রি করতে চান, তাদের জন্য গভর্নমেন্ট বা ব্যাংকগুলোর উচিৎ আসল ট্যালেন্ট অর্থাৎ সত্যিকারের উদ্যোক্তা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের দরকার সৎ ও যোগ্য উদ্যোক্তা খুঁজে বের করা। তাদেরকে অর্থায়ন করতে হবে। সহযোগিতা করলে তারাই মূল্যবান অনেক কিছু বের করে নিয়ে আসতে পারবে। বর্তমানে শিল্প স্থাপন করার মতো করে বিনিয়োগ হচ্ছে না। নতুন ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে না বা হলেও খুব কম হচ্ছে। তারপরও যদি কেউ বিনিয়োগ করেন, এই টাকাটা ট্যাক্সে ডিকেয়ার আছে কি না বা এরকম বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। সবমিলিয়ে তারাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন, এুণি তাদের একটু ফ্রি হয়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। যেমন, অনেক আগে একসময় ছিলো, আপনারা হয়তো জানেন, যে ব্যক্তি নিজের টাকা নিয়ে ইনভেস্ট করে ইন্ড্রাস্ট্রি করতেন তাকে প্রশ্নই করা হতো না যে, সোর্স অফ ফান্ড বা কোথা থেকে টাকা পাচ্ছেন? এখন কিন্তু প্রতিটা েেত্র জবাবদিহি করতে হয়। আমরা এখন ডেভেলপিং কান্ট্রি। আমরা কিন্তু ডেভেলপড কান্ট্রি না, চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের মানুষ পরিশ্রমী। শ্রমিকরাও অত্যন্ত মেধাবী। উদ্যোক্তারাও উন্নত মেধার অধিকারী। দেশের এখনকার বহু বড় শিল্প-কারখানা দেখবেন যাদের শুরু হয়েছিলো অনেক ছোট পরিসরে। তারা এখন অনেক উপরে উঠে এসেছেন। তাদের মেধা, তাদের সততা দিয়ে তারা উঠে এসেছেন। এটাকে আমাদের স্বীকৃতি দিয়ে কাজ করতে হবে। নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। দেখতে হবে লোকটা সৎ কি না, তার উদ্দেশ্য ভালো আছে কি না। তারপর আপনি তাদের সুযোগ করে দিন। দেখবেন, এদেশে একসময় শিল্প খাতে বিপ্লব ঘটে যাবে। আমাদের দেশের আয়তন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল, ১৭-১৮ কোটি মানুষ, আমাদের আরও অনেক বিনিয়োগ দরকার, কারখানা দরকার।

প্রতি বছর বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকে, বহু প্রতিষ্ঠান থেকে ইয়াং ছেলেমেয়ে বের হচ্ছে, তারা কাজ পাবে না, তারা চাকরি বাকরি পাবে না, কী করবে তারা? তারা তো তখন হতাশ হবে,বিপথে যাবে। আজকে সন্ত্রাসের চিত্র দেখেন, অনেক শিতি ছেলে, ইউনিভার্সিটির ছেলেরা জড়িয়ে পড়ছে। আপনি ইতিহাসটা দেখেন, তাদের পেছনে একটা ইতিহাস আছে, খোঁজ নিয়ে দেখেন। এর থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। বেকার যদি থাকে তবে অলস মস্তিস্কে সে অন্যকিছু চিন্তা করবে। সবাইকে যদি কাজে লাগানো যায়, সবাইকে যদি প্রোডাক্টিভ ওয়েতে আনা যায়, তাহলে আর সন্ত্রাসের মতো ব্যাপারগুলো হবে না।

নতুন ভ্যাট আইন স্থগিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব
ব্যবসায়ীরা প্রায় সবাই ভ্যাট আইনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আমাদের দেশে কিন্তু আমরা ট্যাক্স দিতে চাই না, স্বভাবে আমরা কর বিমুখ। ১৭-১৮ কোটি মানুষের দেশে, কয়জন প্রকৃতপে সরকারকে ট্যাক্স দেয়? আমরা বলি এই যে, আমরা উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবো, কিংবা মধ্যম আয়ের দেশ হবো,সরকারও চেষ্টা করছে; আপ্রাণ চেষ্টা করছে, সদিচ্ছার অভাব নেই। সেজন্য ব্যবসায়ীসহ সবাইকে এই উন্নয়নযাত্রায় অংশ নিতে হবে। প্রত্যেকটা উন্নত দেশেই কিন্তু ট্যাক্সের ব্যাপারে কোনও মাফ নেই। ইন্ডিয়াকে দেখুন,তারা যে নতুন ট্যাক্স ব্যবস্থা ইন্ট্রোডিউস করলো, জিএসটি। এক দেশ, এক কর। আমাদের দেশে সরকার নতুন ভ্যাট ব্যবস্থা সেভাবে চালুর চেষ্টা করেছিলো, এটা বন্ধ হয়ে গেছে হয়তো রাজনৈতিক কারণে, সামনে নির্বাচন রেখে মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য। কিন্তু ট্যাক্স তো দরকার। ভারত জিএসটি কিন্তু উইথড্র করে নাই। ভ্যাট যদি জনগণ দেয়, সবাই যদি ইনভলভ হয়, টাকাটা সরকারের কোষাগারেই যাবে। খেয়াল রাখতে হবে যে, ভ্যাটের নামে বিভিন্ন জায়গায় যিনি ভ্যাট কালেকশন করেন, টাকাটা সরকারের কোষাগারে ঠিকমতো জমা হচ্ছে কি না । ভ্যাট আদায়ের আগে এনবিআরের এই সমতা অর্জন করতে হবে। প্রতিটা দোকানের কেনাকাটায় ভ্যাট সংগ্রহে দেখতে হবে ইসিআর বা ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার মেশিনটা আছে কি না? সেখানে ভ্যাটটা কালেকশন হয়ে সরকারের কোষাগারে জমা হবে কি না? এসব মনিটর করার জন্য লোকবল তৈরি করতে হবে। এটা রাতারাতি হবে না, ইট উইল টেক টাইম। শক্ত ব্যবস্থাপনা ছাড়া জনগণ ভ্যাট দিবে কিন্তু সরকারের ঘরে হয়তো অনেক সময় ওই টাকা জমা হবে না। আগে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আগেই বলেছি করাপশন আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকেছে। এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

সামাজিক সেবা আমাদেরও আছে
আমাদের দেশের আয়তন মাত্র ৫৫ হাজার বর্গমাইল । লোক সংখ্যা ১৬ কোটি। রাজধানী ঢাকা শহরে এখন দুই কোটির মতো মানুষ বসবাস করে। ইউরোপের একেকটা দেশের লোক সংখ্যাই কিন্তু এক কোটি থেকে দেড় কোটি। অনেক দেশে ৬০ লাখ, ৭০ লাখ। দেশের এত বড় একটা পপুলেশন সরকার ম্যানেজ করছে এটা কম কথা নয়। আগে ঢাকা শহরে এত হাইরাইজ বিল্ডিং ছিলো না, এখন প্রচুর হাইরাইজ বিল্ডিং হয়ে গেছে। গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের যোগান দিতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। সবকিছু সবাইকে গভর্নমেন্ট কিভাবে দিবে? তারপরও সরকার তো সার্ভিস দিচ্ছে। আমরা যে ঢাকা শহরে আছি, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ পাচ্ছি, ট্রান্সপোর্ট ফ্যাসিলিটি পাচ্ছি তো।

আমাদের দেশে সামাজিক সেবা উন্নত বিশ্বের মতো অতটা নেই, কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান, ওখানে প্রায় বিনে পয়সায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। এত বড় একটা হাসপাতাল, এত মানুষ, কিভাবে রোগীদের ম্যানেজ করছে, চিকিৎসা করছে, দেখলে আসলেই অবাক হয়ে যেতে হয়। আমাদের চিকিৎসক- সেবকরা করছেন, সীমাবদ্ধতার ভেতরে থেকেও কাজ করছেন তারা। অতএব দোষ দিলে হবে না, আমাদের সীমাবদ্ধতা বুঝতে হবে। সরকারের উদ্দেশ্য বুঝতে হবে, তাহলে আমরা সঠিক রাস্তায় যাবো। আমরা খালি কথায় কথায় সমালোচনা করি, সমালোচনা করাটা খুব সোজা। সরকারি দলে থাকেন, বিরোধী দলে থাকেন, আজকে যিনি বিরোধী দলে আছেন, গতকাল উনি সরকারি দলে ছিলেন। যে কাজটা ওনাদের সময়ে করা এই যে প্রথম ভ্যাট প্রবর্তন হয়েছে, তখনও কিন্তু অনেক সমালোচনা হয়েছিলো। প্রত্যেকটি দেশেই নানা প্রকল্পের জন্য কনসালটেন্ট আছে। আমাদের দেশে এই কনসালটেন্সি সার্ভিসটা খুব লিমিটেড এবং কেউই পয়সা খরচ করে এই সার্ভিসটা নিতে চায় না । একজন কনসালট্যান্ট এই অভিজ্ঞ লোকগুলো যখন কাজ করেন, তারা যখন একটা প্রোজেক্ট তৈরি করেন কিংবা একটা উপদেশ দেন, এটা ফ্রি কোথাও নেই। আমাদের অভ্যাসের একটা অংশ হলো আমরা শুধু ফ্রি চাই। একটা প্রোজেক্ট যখন ব্যাংকে সাবমিট করবে, ভালো কনসালট্যান্টের পরামর্শ দরকার এবং তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দেয়া দরকার। আমাদের এখানে অনেক সময় একটা প্রোজেক্ট কপি করে আরেক জায়গায় তা জমা দেওয়ার উদাহরণ আছে। যথাযথভাবে তারা এটা করে না, এতে অনেক সময় তারা ব্যাকফুটে চলে যান। কিন্তু যারা সত্যিকারের অভিজ্ঞ কনসালট্যান্টের সাহায্য নিয়ে একটা প্রজেক্ট তৈরি করেন কিংবা প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করে সাবমিট করেন, তারা কিন্তু সহজে ফেল করেন না, বরং সাফল্যের দিকে এগিয়ে যায়।

প্রসঙ্গ পুঁজিবাজার
আমি শেয়ার মার্কেটের সাথে অনেক আগে থেকে আছি। যখন ১৯৯৬ সালে মার্কেটটা বুম হলো সেসময় যে ঘটনা হয়, সেখানে আমি ইনভলভ ছিলাম। অনেক কিছু দেখেছি অত্যন্ত কাছে থেকে। তখন আমি স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এ দেশে যে বিদেশি বিনিয়োগ আসলো, তার পেছনে আমাদের অনেক অবদান আছে।
১৯৯৬ সালে যখন মার্কেটের উত্থান হলো, কিভাবে হলো এটার অনেক ইতিহাস আছে। তারপরে ২০১০ সালে, আপনারা অনেকেই বলেন ধস, আমি ধস বলি না। ২০১০ সালে প্রাইসটা অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছিলো এবং এর পর মার্কেট সংশোধন হয়েছে। প্রাইসটা যে বেড়ে গেলো এর কারণ আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটের ডেপথটা খুব বেশি না। আমাদের ইস্যু অত্যন্ত কম। ভালো ইফেক্টিভ ইস্যু কম। অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে, মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানি আছে, তারা কিন্তু কেউ মার্কেটে আসতে চায় না। তারা মার্কেট থেকে দূরে থাকে। এইখানে যারা পেশাজীবী আছেন, চাকুরীজীবী আছেন, রিটায়ার্ড পার্সন, তাদের যে টাকাটা আছে, তারা ওখান থেকে কিছু আয় করতে চান। এই আয় কীভাবে করবেন তারা? এভাবে আয় করতে এসে তারা কিন্তু প্রাইস হাইকের জন্য সাফার করবেন। এখানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছেন। যেহেতু এই মার্কেটের ডেপথ কম, শ্যালো ড্রাফট কম, এখানে বাজারে অনেক কারসাজি খুব সহজেই করা যায়। অতীতে এরকম হয়েছে। ১৯৯৬-এর পরে মার্কেটটা অত্যন্ত নিচে নেমে গিয়েছিলো। তারপর আস্তে আস্তে ২০১০ এ এসে আবার উপরে উঠেছে। ২০১০ সালে এটা অনেক উপরে ওঠলো। তারপরে কারেকশন হয়েছে।

এই যে উপরে গেছে মার্কেটটা, আমি তখন বলেছি সামনে অ্যালার্মিং সিচুয়েশন। আমাদের দেশের ইনভেস্টরদের মার্কেট সম্পর্কে নলেজ কম। অন্যান্য উন্নত দেশে পুঁজিবাজারে কম্পিউটারের সামনে মানুষ বসে থাকে না। তারা বাইরে থেকে অনলাইনে ট্রেড করেন, নিজের মেশিনে বসে ট্রেড করেন। তারা কোনো হাউজের সাথে যুক্ত থাকেন, সেখানে সরাসরি ট্রেড করেন। আমাদের এখানে ট্রেডার থাকেন, ট্রেডারের শিাগত যোগ্যতা সাধারণত ইন্টারমিডিয়েট বা গ্র্যাজুয়েট। তার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেন, আচ্ছা কোনটার দাম বাড়বে? এখন ওই লোকটা যে মেশিনে আছে, সে কিন্তু এক্সপার্ট না। তার কাজ করতে করতে কিছু একটা আইডিয়া হয়েছে। ওই যে, একটু আগে বললাম এ দেশে কিন্তু কনসালটেন্ট সার্ভিসটা গ্রো করেনি, কেউ পয়সা দিয়ে সার্ভিস কিনতে চান না। আমাদের গভর্নমেন্টের উচিত এই সেক্টরে কিছু করা, যারা মানুষকে অ্যাডভাইস করতে পারবে। অফিস লাগবে, লোকে যাবে, কোন ইস্যুগুলি ভালো, কোন ইস্যুগুলি খারাপ, কোনটা ইনভেস্ট পেলে লাভ হতে পারে – এই আইডিয়া সার্ভিসটা এভাবে আমাদের এখানে নেই, এটাকে ইন্ট্রোডিউস করা উচিত।

দ্বিতীয়ত, না বুঝেই ইনভেস্ট করা। ক্যাপিটাল মার্কেটের অনেকগুলো থিওরি আছে। এই থিওরিটাকে আমরা ফলো করিনি। এখনও পর্যন্ত করি না। মার্কেট অনেকদিন পরে রাতারাতি উপরের দিকে যাওয়াটা একটা শুভ লক্ষ্মণ না। ধীরে ধীরে যাবে। এটা যদি হঠাৎ রাতারাতি সিঙ্গেল ডিজিট থেকে ডবল ডিজিটে চলে যায়, সেটা খুব ভালো জিনিস না। কিংবা আমাদের এখানে যখন দাম বাড়ে, হয়তো একটা বন্ধ ইন্ড্রাস্ট্রি, আপনি দেখবেন যে সেটারও দাম বেড়ে যায়। দাম যখন বাড়ে, আমাদের ইনভেস্টররা কিন্তু ওইটার পেছনে দৌঁড়ান এবং আল্টিমেটলি তারা লস খান। কারণ ওইটার তো লিমিট আছে। এবং ওইটাতে ইনভেস্ট যখনই করবে, যেহেতু এটা উপরের দিকে যায়, পরে তো ওটা কারেকশন হবেই। এটা ২০১০ সালের মতো হওয়া উচিত না। যেভাবে দাম বাড়ছে তা ঠিক নয় সময় নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অগ্রসর হওয়া উচিত এবং সেটা প্রথম থেকেই। যারা মার্কেট রেগুলেটর, তাদের এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। দেখতে হবে মাত্রাতিরিক্তভাবে কোনো ইস্যুরই অযৌক্তিকভাবে দাম যেন না বাড়ে। যখনই অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়তে যাবে সঙ্গে সঙ্গেই সতর্কমূলক কিছু করা উচিত যাতে ইনভেস্টররা আগে থেকেই সাবধান হতে পারেন।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ কৌশল
শেয়ারমার্কেটে ইনভেস্টমেন্টের প্রথম থিওরি হলো, যিনি টাকা ইনভেস্ট করবেন টাকাটা তার নিজের টাকা হতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যেন কেউ ইনভেস্ট না করেন। যদি কারো ১০০ টাকা থাকে, সেখান থেকে ৬০ টাকা ইনভেস্ট করে ৪০ টাকা আলাদা করে রাখতে হবে। ইনভেস্ট করার আগে তাকে স্টাডি করতে হবে, কোন সেক্টরগুলো দেশে ভালো ব্যবসা করছে, কোন সেক্টরগুলোর রিপোর্ট ভালো আছে, কোন সেক্টরের পি.ই. বা প্রাইস ইরডেক্স কতটা ভালো আছে -এসব দেখে-শুনে তাকে ইনভেস্ট করতে হবে। কারও কথা শুনে, গুজবে বা হুজুগে এইটার দাম বাড়বে, এইটা কেনেন – এইভাবে যেন কেউ ইনভেস্ট না করেন। এভাবে যারা ইনভেস্ট করবেন, তারা অবশ্যই তিগ্রস্ত হবেন।

মোহম্মদ ফখরুদ্দীন
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইউনাটেড ইনভেস্টমেন্ট এন্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড