মাশরুম চাষে শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবুলের সাফল্য

মাশরুম চাষ করে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব, এটি প্রমাণ করেছেন মাগুরা সদর উপজেলার বড়খড়ি গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবুল আখতার। প্রতিবন্ধীতাকে জয় করে মাশরুম চাষের জন্য আজ তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন গোটা দেশ জুড়ে। মাশরুম বাবুল হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত।

২০০৭ সালে মাত্র ১শ’টি বীজ নিয়ে ছোট্ট একটি কুড়ে ঘরে মাশরুম চাষ শুরু করেন তিনি। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ তিনি একটি অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন। বাবুলের নিজ গ্রাম বড়খড়ির প্রতিটি বাড়িতেই মাশরুম চাষ হচ্ছে। এ চাষের মাধ্যমে দরিদ্র অনেক পরিবারই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের উৎপাদিত মাশরুম কিনে নেন বাবুল আক্তার নিজেই। বড়খড়িও এখন মাশরুমের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মাশরুম চাষের আগে বাবুল আখতার যশোর হর্টিকালচার থেকে এ চাষের উপরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ২০০৮ সালে মূলত তিনি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ শুরু করেন।

ড্রিম মাশরুম সেন্টার নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই তিনি দেশীয় বাজার তৈরিসহ পার্শ্ববর্তী ভারতেও মাশরুম বিক্রি করছেন। ২০১৩ সালের পর থেকে আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। মাশরুম যেমন তাকে বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে তেমনি তাকে করছে আর্থিকভাবে স্ববলম্বী। তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৩ শতাধিক নারী পুরুষ কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাটন, ঋষি (গ্যানডন) ও ওয়েস্টার জাতের মাশরুম তার এখানে চাষ করা হয়। বাটন জাতের মাশরুম প্রতি কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা, ঋষি জাতের মাশরুম ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা কেজি এবং ওয়েস্টার জাতের মাশরুম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশী- বিদেশী পদ্ধতির ব্যবহার করে তিনি মাশরুম চাষ করছেন।

মাশরুম চাষের জন্য প্রয়োজন হয় কাঠের গুড়া, ধানের তুষ, গামের ভূষি, ভুট্টারগুড়াসহ নানা উপকরণ। প্যাকেট থেকে বীজ বের হতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৩৫ দিন। এটি পরিপূর্ণ হয় প্রায় ৩ মাস পর। প্রক্রিয়াজাতকরণের পর এটিকে বাজারজাত করা হয়।

বড়খড়ি গ্রামে বাবুল আখতারের ড্রিম মাশরুম সেন্টারে গিয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, মাশরুশ চাষে সাফল্যের জন্য ২০১৮ সালে জাতীয় বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক ও জাতীয় কৃষি পদক পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে এ পদক তুলে দেন। তিনি আরো জানান, আমার দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবকই মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছেন এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে। স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগে মাশরুম চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করার পাশাশপাশি আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। বাবুল আখতার আরো জানান, প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রিম মাশরুম সেন্টারের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ মানসমৃদ্ধ গবেষণাগার তৈরির পাশাপাশি আরো নতুনভাবে মাশরুম চাষের বিষয়ে কাজ করছি। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/এমএইচ