রোবটিক অটোমেশনের যাত্রা শুরু বাংলাদেশে

রোবট কথাটি শুনলে আমাদের কল্পনায় প্রথমেই আসে একটা যন্ত্র বা মেশিন যেটা ব্যাটারি বা Electricity তে চলে। অল্প কিছুদিন আগেই আমরা দেখেছিলাম রোবট Sofia কে, পৃথিবীজুড়ে অনেক সাড়া জাগিয়েছিল। কিন্তু না, আমরা বলছি অন্য এক ধরনের রোবট এর কথা, যেটা হচ্ছে সফটওয়্যার রোবট। এটা আসলে একধরনের সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যার আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence. এই বুদ্ধিমত্তা থাকার ফলে রোবটিক Software কে কিছু কিছু কাজ শেখানো সম্ভব। একবার ভালভাবে শেখানো হয়ে গেলে রোবট কাজগুলো নির্ভুলভাবে এবং খুব দ্রুত সম্পাদন করতে পারে। আর এই রোবট ব্যাবহার করে যখন প্রচলিত মেনুয়াল কাজগুলো অটোমেট করা হয়, সেটাকেই বলা হয় রোবটিক Process অটোমেশন. গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। ইনফোসাপেক্স, প্রযুক্তি ভিত্তিক কোম্পানী বাংলাদেশ এই প্রথম রোবটিক প্রযুক্তি Robo2Mation নিয়ে এলো।

বর্তমান সরকারের জনপ্রিয় স্লোগান, “ডিজিটাল বাংলাদেশ”কে বাস্তব রূপ দিতে দারুনভাবে সহায়তা করবে এই সফটয়্যার রোবট. সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন অনেক কাজ রয়েছে যা টেবিল থেকে টেবিলে অনুমোদনের জন্য প্রচুর সময় ব্যয় হয়। অতিরিক্ত সময় নেয়ার কারনে অনেক সময় নানারকম জটিলতার সৃষ্টি হয়। এসব জটিলতা একদিকে যেমন সংশ্লিষ্ট সবার বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়, তেমনি এর আর্থিক ক্ষতিও আছে। বিশেষভাবে সরকারি অফিসে সার্ভিস নিতে আসা জনসাধারনের অনেক ভোগান্তি হয়ে থাকে। বেসরকারি ব্যংক, বীমা, টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর

কাস্টমার সার্ভিসেও ম্যানুয়াল কাজের জন্য কাস্টমারদের প্রচুর ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে রোবট ব্যবহার করে অনেক কাজই স্বয়ংক্রিয়ভাবে অতি দ্রুত ও সুষ্টুভাবে করানো সম্ভব।
রোবটিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করা অনেক সহজতর হবে। রোবট দূর্নীতি, পক্ষপাতিত্ত্ব বা স্বজনপ্রীতি বোঝেনা, তাকে প্রলোভন দেখিয়ে প্রভাবিত করা যায় না। সময়ের কাজ সময়ে করে ফেলাই রোবট এর একমাত্র লক্ষ্য। এছাড়া রোবট এর সব কাজের ডিজিটাল লগ থাকে যা পরবর্তিতে অডিট করা যাবে। ফলে অহেতুক দোষারোপ করে দ্বায়িত্য এড়িয়ে যাবার সুযোগ থাকছে না।
রোবট এর সঠিক ব্যাবহার করে সাধারন কাজগুলো ৯০% পর্যন্ত দ্রুততর করা সম্ভব হবে। সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোবটিক অটোমেশন বাস্তবায়ন করা হলে যুগান্তকারি উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। দীর্ঘক্ষন লাইনে দাঁড়িয়ে আর সার্ভিসের জন্য অপেক্ষা করতে হবেনা গ্রাহককে, দক্ষ Assistant এর মত পাশে থেকে সেবা প্রতিনিধির কাজকে অনেক সহজ ও দ্রুততর করে দেবে ডিজিটাল রোবট. টেবিল থেকে টেবিলে না ঘুরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিভিন্ন অনুমোদনের কাজ সম্পন্ন করা যাবে অল্প সময়ের মধ্যেই।
এছাড়াও রোবটিক অটোমেশন এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের করণিক ভূলের পরিমাণ উল্যেখযোগ্য হারে কমানো যাবে। বিশেষকরে ম্যানুয়াল ডাটা এন্ট্রির কাজে যখন হরহামেশাই ভূল লক্ষ করা যায়, রোবট সেই ভূল গুলো নিমেষে সংশোধন করে দিতে পারবে। আমাদের তৈরি রোবট ব্যাবহার করে দেখা গেছে ক্ষেত্রবিশেষে ১০০ ভাগ পর্যন্ত নির্ভূলতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

যেহেতু রোবট এর খাবার, ঘুম বা বিশ্রামের প্রয়োজন নেই, ২৪ ঘন্টা একটানা কাজ করে যেতে তার কোনও অসুবিধা হয় না। সুতরাং অতিরিক্ত কাজের জন্য ওভারটাইমের প্রেশার না দিয়ে রোবট কে কাজে লাগিয়ে দেয়া হলে কর্মীরা সঠিক সময়ে বাড়ি ফিরতে পারবে এবং এতে কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সমতা ফিরে আসবে।
রোবটিক অটোমেশন শুধু প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নয়, বরং দেশের জন্যও অনেক সুফল বয়ে আনবে। ডিজিটাল রোবট রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে বাংলাদেশ।