‘শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে থাকবে বসুন্ধরা খাতা’

এম নাসিমুল হাই : বসুন্ধরা গ্রুপ দেশ ও মানুষের কল্যাণে ১৯৮৭ সাল থেকে এর যাত্রা শুরু করে। বসুন্ধরা গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা পেপার মিলস। ১৯৯৩ সালে এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দেশের শিক্ষার্থী, বোদ্ধা, যারা শিক্ষার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে। এবং দেশের জনগণের কাছে আমাদের অন্যতম একটি প্রোডাক্ট বসুন্ধরা টিস্যু পৌঁছে দিয়েছি। দেশের জনগণের কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে এখন দেখা দিয়েছে বসুন্ধরা টিস্যু।

এক সময় মানুষ যে রুমালের ব্যবহার করতো তা কিন্তু হাইজনিক বা স্বাস্থ্যসম্মত না। এখন স্বাস্থ্যসম্মত টিস্যু ব্যবহার করে মানুষ নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারছে। এবং খুব অল্প আয় আসে এবং অল্প খরচ। এটা কিন্তু বসুন্ধরা টিস্যু বসুন্ধরা পেপার মিলসের প্রোডাক্ট।

আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, বাংলাদেশের বেশীরভাগ শিক্ষার্থীদের হাতে বসুন্ধরা খাতা পৌঁছে দেওয়ার। আপনারা জানেন, একজন শিক্ষার্থীর, যদিও ডিজিটালের যুগ এখন সারা বিশ্ব বলছে, বাংলাদেশ এখনো ডিজিটাল যুগে পৌঁছানোর জন্য অনেক দূর পথ এগোতে হবে। সুতরাং আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে খাতা একটি অতান্ত প্রয়োজনীয় জিনিস। তাদের লেখার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ। এবং বসুন্ধরা পেপার মিলস তার প্রোডাক্টের একটি বড় অংশ এই খাতা হিসেবে মার্কেটে দিচ্ছে। এই খাতার মধ্যে যতগুলো খাতা হতে পারে সবগুলো খাতা আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে সাশ্রয়ী দামে দিচ্ছি। এই কারণে যে, আমরা জানি বাংলাদেশের বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ক্রয়-ক্ষমতা, তারা যে সমস্ত পরিবার থেকে আসছে তাদের অভিবাকদের ক্রয় ক্ষমতা অতান্ত সীমিত। এভাবে আমরা সীমিত আয়ের মানুষও যাতে খাতা ক্রয় করতে পারে সেভাবে বিভিন্ন পরিসরে খাতা গুলো আমরা দিচ্ছি।

আপনারা জানেন, বসুন্ধরা পেপার মিলস আরো অনেকগুলো প্রোডাক্ট তৈরি করে। যেমন স্যানিটারি নেপকিন, সাদা কাগজ, বিশেষ করে অপসেট পেপার। প্রিন্টিং পেপারস, বিডি পেপারস এবং আমার আরো এনেছি ডায়াপারস। এক সময় আমরা ইমপোর্ট করা পেপারের উপর নির্ভর করতাম। যদিও আমাদের দেশীয় পণ্য ছিল। সেগুলো শুধুমাত্র প্রিন্টিং হাউজ গুলোতে ব্যবহার করা হত। এবং শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতেন। কিন্তু আমাদের যে অন্যান্য, বিশেষ করে অফিসে বিদেশি পণ্য, বিদেশী কাগজ ব্যবহার করা হত। সেগুলো অনেক দামি ছিল।

এছাড়া বাংলাদেশের কোনো কাগজ ফটোকপির কাজ করতো না। আমরা বসুন্ধরা পেপারস সেই পেপার গুলো নিয়ে এসেছি। যা আন্তর্জাতিক মানের অফসেট পেপার। এই পেপারগুলো বিভিন্ন সাইজে আমরা মার্কেটে দিচ্ছি। এর ফলে বাংলাদেশের ব্যবহারকারিরা বিদেশী কাগজের উপর যে নির্ভরতা তা অনেক কমে গেছে। এর ফলে আমাদের ইমপোর্টে যে ফরেন কারেন্সি চলে যেত সেটা কমে গেছে। এবং এ দেশীয় পণ্য ব্যবহার করার ফলে আমাদের মধ্যে মানে ভোক্তাদের মধ্যে দেশের প্রতি তাদের যে দায়িত্ব তাও কিন্তু বসুন্ধরা গ্রুপ জাগিয়ে তুলতে পেরেছে। আমি আশা করি এ ব্যাপারে সবাই আমার সঙ্গে একমত হবেন।

এছাড়া আমরা যে ডায়াপার নিয়ে এসেছি। এর আগে ১০০% ডায়াপার বিদেশ থেকে আমদানি করা হত। আমরা এখন সেটা দেশে উৎপাদন শুরু করেছি। বিশেষ করে যে বাচ্চাদের ডায়াপারস আমরা মার্কেটে নিয়ে এসেছি। এবং তা বিদেশী জিনিসের চাইতে প্রায় অর্ধেক মূল্যে তা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া আমরা বাজারে বয়স্কদের জন্যও ডায়াপার নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে তা ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া আমরা দেখেছি যে, অপারেশন থিয়েটারে যে পেপারস গুলো ব্যবহার করা হত, সেগুলো কিন্তু বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। গ্লাভ্সগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো।

এখন বসুন্ধরা পেপারস গ্লাভ্স উৎপাদন করছে। হাসপাতালের অপারেশন থিযয়েটার-ওটিতে যে কাগজ ব্যবহার করা হয়, সেটাও কিন্তু আমরা উৎপাদন শুরু করেছি। এছাড়াও আমরা আমাদের বাই প্রোডাক্টগুলোকে যতো দ্রুত সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে কার্বন জিরো পর্যায়ে আনার চেষ্টা করছি। যাতে বাতাসের ওজন স্তরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয়। এবং এই কার্বনগুলোকে পুনরায় ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। এ জন্য আমরা দেশের বাইরে থেকে টেকনোলজি এনেছি। সেটা এখন বাংলাদেশে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বাজারে ন্যাপকিন বা টিস্যু যেটা দেখছেন তা বিদেশ থেকে আমরা ১০০% আমদানি করতাম। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত। তারাও কিন্তু এতো ভালো মানের টিস্যু উৎপাদন করতে সক্ষম হয়নি। এখন ভারতে আমরা আমাদের পণ্য রপ্তানি করতে পারছি। কারণ আমাদের মান আন্তর্জাতিক মানের।

এক সময় দেশের ফাইভ স্টার হোটেলগুলো তাদের কাস্টমারদের জন্য দেশের বাহীর থেকে টিস্যু আমদানি করতো। কিন্তু এখন আমরা তাদের বসুন্ধরা টিস্যু সাপ্লাই করছি। এছাড়া ফাইভ স্টার হোটেলগুলোতে প্রোডাক্ট পরিচিত করা এতো সহজ না, যদি না প্রোডাক্ট আন্তর্জাতিক মানের না হয়। এখানে আমরা সেই মান অর্জন করতে পেরেছি বলেই তাদেরকে সাপ্লাই দিতে পারছি। এর মাধ্যমে আমরা বিদেশ নির্ভরশীলতা কমিয়েছি।

বাংলাদেশের মানুষ এখন ঘরে ঘরে বসুন্ধরা টিস্যু ব্যবহার করে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরা টিস্যু ব্যবহার করছে। বিশেষ করে লেবার শ্রেণির মানুষ যারা একসময় লুঙ্গি বা গামছা দিয়ে শরীর ও মুখ পরিস্কার করার চেষ্টা করতো এখন তারা টিস্যু ব্যবহার করছে। এটা সম্ভব হয়েছে কম দামের কারণে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, না এটা ভালো, দাম কম। এটা যখন বিদেশী ছিল তখন সাধারণ মানুষ সেটা ব্যবহার করতে পারতো না।

আমাদের গ্রুপের নামটা হচ্ছে বসুন্ধরা। সেই কারণে আমরা যখন কোনো ব্র্যান্ড নিয়ে আসছি, সেই নামেই দিচ্ছি। যেহুতু এই ব্র্যান্ডটি এখন সবার ঘরে ঘরে পরিচিত একটি নাম। এছাড়া আমাদের অন্য প্রোডাক্টও আছে। যেমন সিমেন্ট ‘বসুন্ধরা সিমেন্ট’। এছাড়া আমরা সিমেন্ট মার্কেটে এসেছিলাম কিং ব্র্যান্ড সিমেন্ট নামে। সুতরাং আমাদের অন্য প্রোডাক্টও আছে অন্য নামে। এর কারণ হল, এখন যদি আমরা অন্য কোনো নামে বাজারে প্রোডাক্ট আনি সেটা কিন্তু ক্রেতাদের জন্য আবার নতুন করে পরিচয় দিতে হবে যে, এটি আমাদের প্রোডাক্ট। কিন্তু যখন আমরা বলি, বসুন্ধরা টিস্যু। তখন ক্রেতা ধরে নেয়, আচ্ছা বসুন্ধরা প্রোডাক্ট। এর মাধ্যমে আমরা কোয়ালিটি নিশ্চিত করছি, এর ফলে ফ্রন্ট নেম হয়ে গেছে বসুন্ধরা। এখন এই ফ্রন্ট নামের কারণে ক্রেতাদের আমাদের উপর বিশ্বাস আছে যে এটি বসুন্ধরা।

বসুন্ধরা ইউনিট-১। যেটা আগে পরিচিত ছিল বসুন্ধরা পেপার মিল। যে পেপার মিলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত হয়েছে বসুন্ধরা নিউজ প্রিন্ট মিল্স লিমিটেড, বসুন্ধরা টিস্যু লিমিটেড। এই তিনটিকে আমরা একসঙ্গে করে ২০১০ সালে বসুন্ধরা পেপারস মিলস নামে চালাচ্ছি। যদিও এক একটি ইউনিট, ইউনিট-১, ইউনিট-২ ও ইউনিট-৩ বিশ্ব মানের ইউনিট হওয়ার যোগ্যতা রাখে। তারপরেও আমরা এক নামে নিয়ে এসেছি বসুন্ধরা পেপার মিলস নামে। ইউনিট-১ এ আমরা উৎপাদন করছি সাদা কাগজ ও অপসেট পেপার। ইউনিট-২ এ আসে নিউজ প্রিন্ট ও অন্যান্য প্রোডাক্ট। এবং ইউনিট-৩ থেকে আসে আমাদের টিস্যু ও ডায়াপার ও অন্যান্য প্রোডাক্ট।

বর্তমানে আমরা বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের ২৩টি দেশে আমাদের প্রোডাক্ট রপ্তানি করি। আমাদের লক্ষ্য, বিশ্বের ৫০ টি দেশে আমাদের পণ্য রপ্তানি করা। আপনারা জানেন, বিদেশে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ থেকে প্রোডাক্ট যাওয়ার জন্য অনেকগুলো বাধা অতিক্রম করতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রোডাক্টের মান ছাড়াও অনেক কম্প­ায়েন্স মেইন্টেইন করতে হয়। যদি একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়, তাহলে দেশীয় রেগুলেটরদের মাধ্যমে কোম্পানির অনেক কম্প­ায়েন্স সম্পন্ন করতে হয়। ফলে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ বিয়টি আর নতুন করে তারা দেখে না, শুধু কোয়ালিটিটা তখন মেইন্টেইন করতে হয়।

বসুন্ধরা গ্রুপের স্লোগান হচ্ছে, ‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে’। আমাদের একটি ইউনিট আছে, মেঘনা সিমেন্ট। যা পুঁজিবাজারে আছে ১৯৯৪ সাল থেকে। ১৯৯৭ সাল থেকে যখন আমরা পেপার মিলস চালু করেছি। তার পর থেকে আস্থার সঙ্গে আমরা আমদের পণ্য ক্রেতাদের ব্যবহার করতে শিখিয়েছি। তারা আমাদের উপর বিশ্বাস রাখে। তারা যখন বসুন্ধরার কোনো প্রোডাক্ট কেনে, সেখানে আস্থার জায়গা থেকেই কেনে। তারা জানে বসুন্ধরা তাদের কোয়ালিটি রক্ষা করে। এছাড়া আমাদের অন্য প্রোডাক্ট বসুন্ধরা এলপি গ্যাস যা অনেক সুনামের সঙ্গে বাজারজাত হচ্ছে। ক্রেতারা সন্তুষ্ট। এ বিষয়ে ক্রেতাদের কোনো রকম অভিযোগ নেই।

এছাড়া বাজারে আমাদের বসুন্ধরা ফুডস আছে। আটা, ময়দা, সুজি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ অনেক আস্থার সঙ্গে এসব কিনে খাচ্ছে। আমরা পুঁজিবাজারে আসার অন্যতম কারণ হচ্ছে, শেয়ারিং উইথ ইনভেস্টর। আমরা তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছি। যদি হতে পারি তাহলে আমরা বিদেশে রপ্তানি করার ক্ষেত্রে অনেক সহজভাবে রপ্তানি করতে পারবো। বিশ্বের অনেক দেশে যেখানে আমরা তালিকাভুক্ত। সেখানে অনেক অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে তারা বাজারজাত করতে দেয় না। তাদের প্রোডাক্ট নিতে দেয় না।

আমাদের দেশ থেকে সাদা কাগজ ও টিস্যু পেপার বেশি রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়াও আর্ট পেপারও রপ্তানি করার প্রক্রিয়া চলছে। আপনারা শুনে খুশি হবেন, চীনের মতো দেশ বাংলাদেশের প্রায় বড় একটি অংশ (আমদানির) চীন থেকে আসে। বসুন্ধরা পেপারে প্রোডাক্ট আমরা চীনে রপ্তানি করি। চীনও বাংলাদেশ থেকে সাদা কাগজ ও টিস্যু আমদানি করে আর সেটা বসুন্ধরা পেপারস মিলসের প্রোডাক্ট।

বাজারে অনেক প্রতিযোগিতা আছে। আমি এভাবে বলি, বাজারে এখন যদি সাদা কাগজ ধরেন তাহলে ৬০% আমরা সাপ্লাই করছি। অন্যদিকে টিস্যু পেপার ৮০% আমরা সাপ্লাই করছি। দেশে অনেক কোম্পানি আছে সাদা কাগজ ও টিস্যু পেপারের। কিন্তু আমি ওইভাবে বলবো না। শুধু এটুকু বলি, বিশ্বমানের অর্জন করতে হলে তাদের অনেক দূর যেতে হবে।

এম নাসিমুল হাই
কোম্পানি সেক্রেটারি ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর
বসুন্ধরা গ্রুপ।