সকল ক্ষেত্রেই ইন্স্যুরেন্সের পরিধি বাড়াতে হবে

করোনাকালীন সময়ে ইন্স্যুরেন্স খাতের অবস্থা সর্ম্পকে যদি বলি, তাহলে প্রথমেই বলতে হবে, ইন্স্যুরেন্স খাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা খাত। আপনারা জানেন যে, এখন সারাবিশ্ব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, বাংলাদেশও তার মধ্যে পড়ে গেছে। বাংলাদেশের সব খাতগুলোতে এখন করুন অবস্থা। বিশেষ করে এখন আমরা যারা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে আছি, তাদের অবস্থানটাও সেরকম। আপনারা জানেন যে সারাবিশ্বে লকডাউন। কোনো দেশের সাথে কোনো দেশের যোগাযোগ হচ্ছে না। কোনো দেশের সাথে কোনো দেশের বিমান চলাচল হচ্ছে না বা কোনো যাতায়াত হচ্ছে না। সেই ক্ষেত্রে আমাদের ইন্স্যুরেন্সের যে ব্যবসা, সবগুলোই এখন অনেক কমে গেছে।

আমাদের ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের কথা বলতে গেলে ৩০ শতাংশ ব্যবসা হচ্ছে, ৭০ শতাংশ ব্যবসা হচ্ছে না। কারণ আপনারাও সেটা বুঝতে পারছেন। যেখানে সকল ক্ষেত্রে স্থবিরতা আছে, সেখানে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবসার করার কোন সুযোগ নাই। ইন্ডাস্ট্রি বলেন, গার্মেন্টস বলেন, যে কোন প্রতিষ্ঠানের কথাই বলেন না কেন, কেউ এখন এলসি খুলছে না এবং এলসি ওপেন করছে না। কারণ অনেকের ফ্যাক্টরি বন্ধ তাদের সবকিছু বন্ধ। এই অবস্থায় যদি কেউ কোনো রকমের বিদেশ থেকে কাঁচা মাল মাল নিয়ে আসে, যদি ফ্যাক্টরি না চালাতে পারে, ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। বিধায় মূলত ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা হচ্ছে না এবং আমরা খুব কঠিন অবস্থার মধ্যে আছি।

করোনাকালীন সময়ে আমাদেরকে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা বলতে হলে শুরুতেই বলা দরকার যে, ইন্স্যুরেন্স সেক্টরটা অনেক গুরুত্বপূর্ন। এই সময়ে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি। আমি আমার কথা বলি, কথার কথা, যেখানে আমাদের দশ টাকা খরচ হতো প্রতিমাসে, সেখানে আমাদের দশ টাকাই খরচ হচ্ছে, খরচ কিন্তু আমাদের কমে নাই। সেক্ষেত্রে ইনকাম কিন্তু আমার কমে গেছে। বেতন ভাতাদি, ঘর ভাড়াসহ অনান্য খরচ নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। আর আয় কিন্তু সে অনুসারে হচ্ছে না। তাহলে আমি এখন অনেক অনেক আর্থিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। এটাই এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জে।

করোনা মোকাবেলায় এখন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের দুটি দিক। একটি হলো অফিস ম্যানেজ করা, আরেকটি হলো বিজনেস ম্যানেজ করা। এ ব্যাপারে যদি বলি, আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কথা বলতে পারি। সেটা হলো, আমার হিউম্যান রিসোর্সকে এমনভাবে সেট করছি যে, সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসে আসতে হবে। প্রথমেই অফিসে ঢোকার সময় টেস্ট করছি মেশিন দিয়ে। তারপর সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করবে এবং তারা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবে। আপনারা তো জানেনই যে, আমাদের গ্রাহক ভিত্তিক ব্যবসা। গ্রাহক যদি অফিসে আসে, তাহলে সে গ্রাহক কার কাছে যাবে, যদি ইমারজেন্সি হয় তাহলে ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছি। না হলে, আমাদের সংশ্লিষ্ট অফিসার এসে গ্রাহকের সাথে কথা বলছে। এভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা অফিস ম্যানেজ করছি। আরেকটি কথা সেটা হলো, আমরা কিন্তু সব অফিসারদের অফিসে আনছি না। ফিফটি পার্সেন্ট অফিসার অফিসে আসে, আবার একদিন পর অন্য অফিসাররা আসে। এটা আমরা পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসে আসার ব্যবস্থা করেছি। এভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে অফিসে আসতে হবে, অফিসের কাজ করতে হবে। যত দিন করোনার প্রাদুর্ভাব থাকবে।

বিজনেস ম্যানেজমেন্টের কথা যদি বলি, সেটা হলো যে, বিজনেস থাকলেই না ম্যানেজমেন্ট। বিজনেস না থাকলে ম্যানেজমেন্ট হবে কিভাবে। বিজনেস তো এখন কমে গেছে, ম্যানেজমেন্ট তো কম হবেই। এখনতো সকল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিজনেস কমে গেছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের মিটিং হচ্ছে না। গ্রাহকদের সাথে সাক্ষাৎ হচ্ছে না, বিজনেস সংক্রান্ত ব্যাপারে, সেগুলো স্থগিত হয়ে গেছে। গ্রাহক আমাদের কাছে আসতে পারছে না। সবকিছু এখন করোনা ভাইরাসের উপর নির্ভর করছে। সেটা হলো করোনাভাইরাস যদি স্বাভাবিক হয়ে যায়, তাহলে হয়তোবা আমরা আশা করি যে, আবার সেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবো।

বিজনেস অপারেশন সম্পর্কে আরো যদি বলি, আমাদের এখন সবকিছুই অনলাইন। আমাদের সকল শাখা এখন অনলাইনে। যেকোনো শাখা থেকে যেকোনো গ্রাহক ইন্স্যুরেন্স করাতে পারবেন। কেউ যদি চট্টগ্রামের ব্যবসা ঢাকায় করতে চায়, তারাও করাতে পারবে, যেহেতু সকল শাখা অনলাইনের আওতায়। অতএব বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে আমাদের ইন্স্যুরেন্স করাতে পারবে।

এবারের বাজেট সম্পর্কে যদি বলি, ২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে আমি স্বাগত জানাই। গতানুগতিক এই বাজেটে আমাদের ইন্স্যুরেন্সের জন্য তেমন কিছু নাই। প্রতি বছরের মতোই যা হয়, এবারও তাই আছে। আমাদের যদি কোম্পানির ট্যাক্স কমিয়ে দিতো, তাহলে আমরা বেশ উপকৃত হতাম।

ইন্সুরেন্স খাত উন্নয়ন ব্যাপারে যদি বলি, এই খাত উন্নয়নের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশেতো অগণিত ফ্ল্যাট, প্রত্যেকটি বিল্ডিং বা ফ্ল্যাট যদি ইন্স্যুরেন্স করা বাধ্যতামূলক হতো, তাহলে অর্থনৈতিক সুবিধা হতো। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আরো উন্নত হতো। প্রতিটি ফ্লাট যদি ইন্ডিভিজুয়াল ইন্স্যুরেন্স করানো হতো, তাহলে ইন্স্যুরেন্স কভারেজগুলো বাড়তো। তারপরে মনে করেন যে, কৃষি খাতে যে ইন্স্যুরেন্স হয়, এ খাতের ইন্স্যুরেন্সগুলো আরো বাড়াতে হবে। তারপরে যে কেউ একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলবে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার সাথে সাথে সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ইন্স্যুরেন্স করাতে হবে। সেটা যেখানেই হোক, জয়েনস্টক কোম্পানি বা অন্য কোনো রেজিস্ট্রেশন করা কোম্পানি হোক, কিংবা সিটি কর্পোরেশনের রেজিস্ট্রার্ড হোক, তখনই যদি ইন্স্যুরেন্সগুলো করানো হয়, তাহলে এই খাতের পরিধি বাড়বে। সর্বোপরি ইন্স্যুরেন্সের পরিধি যতো বাড়বে, ততো অর্থনৈতিক সচলতা আসবে। ততো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো উপকৃত হবে। ততো বাংলাদেশ সরকার উপকৃত হবে। আমাদের ইন্স্যুরেন্সের যে পেনিট্রেশন আছে, সেটাও বাড়বে। পেনিট্রেশন বাড়লে আমাদের সামনে বাংলাদেশ সরকারের যে এসডিজি আছে, সে লক্ষ্যমাত্রা পূরনে সহায়ক হবে।

তালুকদার মো: জাকারিয়া হোসেন
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কো: লি: