সাতক্ষীরায় সরিষা ফুল থেকে ৫০০টন মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা

সাতক্ষীরায় বিস্তৃত সরিষা খেত থেকে সরিষা ফুলের মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌয়ালরা।

জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা থেকে চলতি বছর প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় দশ কোটি টাকা।

আর উৎপাদিত এসব মধু জাপান, ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র আরও জানায়, সরিষা খেত থেকে মধু আহরণের ফলে একদিকে মৌয়ালরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে, অপরদিকে সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণের সময় মৌ-মাছির পরাগায়নের কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ ফলনও পাবে সরিষা চাষিরা। এর ফলে সরিষা খেতের পাশেই বাক্স বসিয়ে মধু আহরণে আগ্রহী হচ্ছে মৌয়ালসহ সরিষা চাষিরাও।

সাতক্ষীরা জেলায় চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া সরিষা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। আর এসব সরিষা খেতের পাশে বাক্স পদ্ধতিতে সরিষা ফুলের মধু আহরণ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

সাতক্ষীরার শতাধিক মধু উৎপাদনকারী খামারী (প্রতিষ্ঠান ) এ বছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা ফুলের মধু আহরণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব খামারে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে।

প্রতিবছর ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সরিষা ফুলের মধু আহরণ করা হয় বলে জানায় মধু খামারীরা।

সাতক্ষীরার মধু খামার মালিক মোশাররফ হোসেন জানান, সাতক্ষীরা জেলায় চলতি সরিষা মৌসুমে সরিষা ফুল থেকে ৫০০ মেট্রিক টন মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বিক্রি করে এ বছর আয় হবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। আর উৎপাদিত এসব মধু জাপান, ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে।

তিনি জানান, মধু খামারীদেরকে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেয়া হলে এই সেক্টর গার্মেন্স বা চিংড়ি শিল্পের চেয়ে বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

এই মধু খামারী আরও বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় দেড় হাজার মধু খামারী রয়েছে। যারা সারা বছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে মধু আহরণ করে থাকে। প্রতিবছর নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সরিষা ফুলের মধু আহরণ শুরু হয়। জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে। সরিষা ফুলের মধু আহরণ শেষ হলে শুরু হয় জিরা ও ধনিয়া ফুল থেকে মধু আহরণের মৌসুম। চলে প্রায় দুই মাস। জিরা ও ধনিয়া মৌসুমের পর পহেলা এপ্রিল থেকে শুরু হয় সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ মৌসুম। অর্থাৎ সারা বছর ধরেই মধু আহরণ কার্যক্রম চলে।

মধু চাষীদের দাবি, তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেয়া হলে এই সেক্টর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আরো বেশি ভূমিকা রাখবে। মধু শিল্পে বিপুল সংখ্যক মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে নতুন এক মাত্রা যোগ হবে।

সাতক্ষীরা কৃষিসম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আমজাদ হোসেন জানান, সরিষার ফুল থেকে যখন মৌমাছি মধু আহরণ করে তখন পরাগায়নের সৃষ্টি হয়। যার ফলে সরিষার ফলন ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বেশি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

তিনি আরও বলেন, আগে সরিষা চাষীদের মধ্যে এনিয়ে ভ্রান্ত ধারণা ছিল, কিন্তু এখন সেই ধারণা পাল্টে গেছে। এক সময় সরিষা ফুলের মধু আহরণে সরিষা চাষীরা বিরোধিতা করলেও এখন আর করে না। বরং তারাও এখন মধু আহরণে সরিষা ক্ষেতের পাশে বাক্স স্থাপন করছে। এখন চাষীরাও জানে মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে যখন মধু সংগ্রহ করে তখন পরাগায়ণ হয়। ফলে সরিষার ফলন বেশি হয়। বর্তমানে সরিষা চাষিরা বেশি ফলনের আশায় মধু আহরণে সহযোগিতা করছে। আর এ ব্যাপারে কৃষকদের আরো সচেতন করতে কৃষি কর্মকর্তারাও ভূমিকা রাখছে। তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ