হরিণা ও চাকা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে প্রথম বারের মতো গবেষণা কার্যক্রম শুরু

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা দেশীয় প্রজাতির লবণাক্ত পানির হরিণা ও চাকা চিংড়ির পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদের লক্ষ্যে দেশে প্রথমবারের মতো গবেষণা কার্যক্রম শুরু করছেন।
ইনস্টিটিউটের খুলনার পাইকগাছাস্থ লোনা পানিকেন্দ্রে হরিণা চিংড়ি এবং বাগেরহাটের চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রে চাকা চিংড়ির গবেষণা কাজ শুরু হয়েছে।
বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ আজ বাসস’কে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদশেরে বাগদা ও গলদা চিংড়ি (বড় চিংড়ি) বাজারজাতকরণে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হওয়ার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের চিংড়ি রপ্তানির অবস্থান শক্তিশালী করার লক্ষে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিএফআরআই-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাসস’কে বলেন, বহুজাতিক বাজারে চাহিদা থাকায় হরিণা ও চাকা চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে সম্ভাবনাময়। এ ছাড়াও হরিণা চিংড়ি দ্রুত বাজারজাত করা যায় এবং এটি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বাজার মূল্য অধিক। হরিণা চিংড়ির অক্সিজেনের চাহিদা খুব কম এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর দৈহিক বৃদ্ধিও যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ে। হরিণা চিংড়ি বছরে দুইবার ডিম দেয়। তিন মাসেই বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয়ে যায় যা অন্যান্য বাণিজ্যিক চিংড়ি প্রজাতির থেকে কম সময়।
বিএফআরআই খুলনার পাইকগাছাস্থ লোনা পানি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সৈয়দ লুৎফর রহমান আজ বলেন, হরিণা চিংড়ির চাষের জন্য চলতি বছরের মার্চে ইনস্টিটিউটের খুলনা পাইকগাছাস্থ লোনাপানি কেন্দ্রের ৯টি পুকুর (১০০০ মি.২ প্রতিটি) নেয়া হয়।
তিনি জানান, পুকুরের এক কোণায় ২ শতাংশ (প্রায়) জায়গায় নাইলন নেট দিয়ে ঘিরে নার্সারী তৈরী করা হয়। নার্সারীতে পোনা ছাড়ার ২ সপ্তাহ পর নার্সারীর নাইলন নেট উঠিয়ে পোনাগুলোকে পুকুরের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া হয়। নব্বই দিন পর প্রতিটি হরিণার ওজন হয় গড়ে ১১ গ্রাম এবং বাঁচার হার ছিল ৮০ ভাগ। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় ২ হাজার ৫৭৪ কেজি।
লুৎফর রহমান বলেন, চাষ থেকে উৎপাদিত হরিণা হতে মা চিংড়ি তৈরি করা হবে এবং পরবর্তীতে হ্যাচারীতে পোষ্টলার্ভি (চিংড়ির পোনা) উৎপাদনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে।
বিএফআরআই চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র, বাগেরহাটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এখানে ‘চাকা চিংড়ির প্রজননবিদ্যা, পোনা উৎপাদন ও প্রতিপালন’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকল্প বর্তমানে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি ১১ মার্চ থেকে এখানে এই গবেষণা কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে বলেন, চাকা চিংড়ির পোনা উৎপাদন ও প্রতিপালনের জন্য কেন্দ্রের গবেষণা পুকুরে শতকে ২ হাজার ২০০টি হারে পোনা মজুদ করা হয়েছে।
কামাল উদ্দিন জানান, গবেষণায় ৯০ দিনে চাকা চিংড়ির গড় ওজন ১৩ গ্রাম পাওয়া গেছে। বর্তমানে এখানে চাকা চিংড়ির পোনার প্রতিপালন চলমান রয়েছে। এখান থেকে চাকা চিংড়ির ব্রুড নির্বাচন করা হবে এবং পরবর্তীতে হ্যাচারীতে পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যে গবেষণা পরিচালিত হবে বলে জানান তিনি।
গবেষণায় সফলতার বিষয়ে আশা প্রকাশ করে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা হরিণা ও চাকা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করতে পারলে ‘ভেনামী’র (ছোট আকৃতির চিংড়ি) বিকল্প হিসেবে স্থান দখল ও বাজার তৈরী করতে পারবো।
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, চিংড়ি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পদ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে চিংড়ি দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস্য। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বড় চিংড়ির (গলদা-বাগদা) চাহিদা কমে যাওয়ায় ছোট আকারের চিংড়ির প্রসার বেড়েছে। এ অবস্থায় দেশীয় প্রজাতির হরিণা চিংড়ি ও চাকা চিংড়ি একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

সূত্র – বাসস