ইভিএম বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতগুলো কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে সে সিদ্ধান্ত জানা যাবে শনিবার (২৪ নভেম্বর)।

নির্বাচনে ৪৮টি সংসদীয় আসনের কিছু কিছু কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোট নেওয়ার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়।

সিটি কর্পোরেশন ও শহরকেন্দ্রিক এ আসনগুলোতে এসব মেশিন ব্যবহার করা হবে। আসনগুলোর ২ থেকে ১০টি কেন্দ্রে এর ব্যবহার হতে পারে।

তবে কতটি আসন ও কত কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হবে, তা নিয়ে খোদ কমিশনারদের মধ্যেই মতপার্থক্য রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) চান, কয়েকটি আসনের ৪ থেকে ৫টি করে কেন্দ্রে এ মেশিন ব্যবহার হোক।

কমিশনাররা কেউ কেউ চান, ৬১ জেলা শহরের আসনগুলোতে আংশিক কেন্দ্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শনিবার বসছে কমিশন সভা। রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্যের মধ্যেই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে।

এদিকে ইভিএম সংগ্রহ ও এর ব্যবহারের ব্যয় মেটাতে আবারও সরকারের কাছে টাকা চেয়েছে ইসি।

মঙ্গলবার এক চিঠিতে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে ১ হাজার ৯৯৮ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে।

ওই চিঠিতে চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত ‘কম বাস্তবায়ন অগ্রগতিসম্পন্ন’ প্রকল্প থেকে পুনঃউপযোজনের মাধ্যমে এ টাকা বরাদ্দ দিতে বলা হয়েছে। ইসি সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট নেয়া হয়েছিল।

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা ইভিএম পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করব। একেবারে সীমিত আকারে ব্যবহার করতে হবে। সংসদ নিবাচনে ইভিএম ব্যবহারে কোনো আইনগত বাধা নেই।

তিনি বলেন, কত আসনে কীভাবে ইভিএম ব্যবহার হবে, সেটা এখনও ঠিক করিনি। শনিবার (আজ) মিটিং হবে, সেদিন এটা পরিষ্কার হবে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার বিষয়ে সিইসি বলেন, বিভিন্ন দল ইভিএমের বিরোধিতা করে। আমি অনুরোধ করব তাদের প্রতিনিধি আমাদের কাছে পাঠান। তারা এটি এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখুক। ইভিএমের টেকনিক্যাল বিষয় পরীক্ষা করুক। তাহলে তাদের সংশয় কেটে যাবে।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

ইসির পক্ষ থেকেও বারবার বলা হয়েছিল, সব দল না চাইলে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না। তবে সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হয়।

সর্বশেষ গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের এক সভায় জাতীয় নির্বাচনের কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়।

ওই সভায় ৪৮ আসনে ব্যবহার করতে গেলে কত মেশিন ও লোকবল প্রয়োজন হবে তার পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। একইভাবে পার্বত্য তিন জেলা বাদে বাকি ৬১ জেলার সদর আসনের (শহর এলাকা) একটি পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়।

কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ওই সভা শেষ হয়। এর আগেই নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে এ সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

ওই কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১১টি সিটি কর্পোরেশন বা সিটি কর্পোরেশনের অংশ রয়েছে এমন আসনের সংখ্যা ৩৫টি। আর ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৮টি (সিটির ৩৫টিসহ) আসন শহর এলাকায় অবস্থিত। এই ৪৮ আসনে কেন্দ্র সংখ্যা কমবেশি ৬ হাজার। এসব আসনের কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত রয়েছে তাদের।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে বা অংশবিশেষে রয়েছে ১৬টি আসন। ঢাকা জেলায় মোট আসন ২০টি। একইভাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এলাকার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে ৬টি আসন, গাজীপুর সিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩টি ও নারায়ণগঞ্জ সিটিতে ২টি আসন রয়েছে। বাকি সিটি কর্পোরেশনগুলোতে একটি করে আসন রয়েছে।

তাদের মতে, সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো এবং ভোটারের শিক্ষার হারও বেশি। এসব এলাকার মানুষও সচেতন।

ইসির ইলেকট্রোরাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ইসির নিজস্ব ৬০০ কর্মকর্তাকে ২৪ ব্যাচে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার বরাবর পাঠানো ইসির এক চিঠিতে সশস্ত্র বাহিনীর ৬৪জন কর্মকর্তা এবং ২১০ জন জেসিও ও অন্যান্য পদবীয় প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।