রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করুন: নিরাপত্তা পরিষদ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদার সাথে ফেরার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যরা।

তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও এর অপব্যবহারের অভিযোগের স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময়) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য জাতিসংঘের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) এক বৈঠকে এসব কথা বলা হয়। বৈঠকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট ইস্যু নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে বৈঠক করে নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠকে মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টাইন স্ক্রানের বার্গেন পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বিশেষ দূতের সহযোগিতা ও জাতিসংঘের সাথে মিয়ানমারের অংশীদারিত্ব দৃঢ় করতে জোরালো সমর্থন প্রকাশ করেন নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যরা।

এছাড়াও তারা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআর এর সহকারী হাই কমিশনার ভল্কার টার্ক এবং ইউএনডিপি এর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বয়ক ও কান্ট্রি অফিস লায়াসনের পরিচালক ক্লেইর ভ্যান ডের ভায়েরেনের বক্তব্য শুনেন।

রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতি এবং জাতিসংঘের প্রয়োজনীর প্রবেশাধিকার বিষয়ে তারা বিস্তারিত বিবরণী তুলে ধরেন।

ইউএনএইচসিআর-ইউএনডিপি এর মধ্যকার সমঝোতা চুক্তি এবং মিয়ানমার-বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তি ও ব্যবস্থাপনাসমূহ বাস্তবায়নে সহায়তা করতে অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা।

তারা মিয়ানমার সরকারের ৩১ মে তারিখে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের এই বৈঠকটি ছিল নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে একটি একান্ত আলোচনা (ক্লোজ ডোর কনসাল্টেশন)।

নিরাপত্তা পরিষদ মূলত গত দুই মাসে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতের কথা শুনেছে।

কূটনৈতিক সূত্রমতে, আগামী মাসের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যের সভাপতিত্বে নিরাপত্তা পরিষদের একটি উন্মুক্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।

রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী ও টেকসই সমাধানের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যথাযথ পদক্ষেপ চায় বাংলাদেশ।

কূটনৈতিক সূত্র মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার তাগিদ দিলেও মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্থায়ীভাবে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি।

সম্প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করতে আসা জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গারা জাতিগত নিধনের শিকার এবং বিশ্ব তাদের রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।

গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধনের’ শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তাদের মাঠ পর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদন আগামী সেপ্টেম্বরে জেনেভার মানবাধিকার পরিষদের নিকট জমা দিবে।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর, ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের মার্চে মানবাধিকার পরিষদে তাদের আপডেট তথ্য মৌখিকভাবে জানানো হয়।

গত ১৪-১৬ জুলাই জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টাইন স্ক্রানের বার্গেনের প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করেন।

সফরকালে তিনি বলেন, এই চলমান সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন। পাশাপাশি মিয়ানমারে অপরাধের জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কর্মকর্তারা জানান, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রেখে মিয়ানমারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন, তাদের জীবনযাপন সুবিধা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আগামী ৮ আগস্ট মিয়ানমার যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।

আরএম/