শ্রীলংকায় ৫ জানুয়ারি আগাম নির্বাচন

In this photograph taken on November 5, 2018, Sri Lanka's President Maithripala Sirisena waves to supporters at a rally in Colombo. - President Maithripala Sirisena sacked Sri Lanka's parliament on November 9, 2018, hours after his party announced he did not have a majority to get his prime minister nominee through the legislature, a minister said. (Photo by LAKRUWAN WANNIARACHCHI / AFP)

শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথিলা সিরিসেনা দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন।

শুক্রবার (৯ নভেম্বর) দিবাগত রাতে সই করা এক প্রজ্ঞাপনে ২২৫ আসনের পার্লামেন্ট ভেঙে দেন সিরিসেনা।

এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বছর দুই আগেই আগাম নির্বাচনের পথ পরিষ্কার করেন তিনি। আগামী ৫ জানুয়ারি এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এতে নতুন মোড় নিয়েছে শ্রীলংকায় সাংবিধানিক সংকট। প্রেসিডেন্টের এ পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক জুয়া’র নতুন চাল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সিরিসেনার এ সিদ্ধান্তকেও অবৈধ বলে অভিহিত করেছে রনিল বিক্রমাসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)।

তবে এ নির্বাচনে ইতিমধ্যে লড়াইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সাবেক ইউএনপি এমপি রাজনাথ সেনা ও ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্ট (ইউএনএফ)।

টানা ১৫ দিন ধরে ক্ষমতার দখলে হম্বিতম্বি ও শক্তি প্রদর্শনের পর অবশেষে শুক্রবার দুপুরে সিরিসেনার দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম পার্টি (ইউপিএফএ) স্বীকার করে, পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে জিততে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছেন না মাহিন্দা রাজাপাকসে।

এ স্বীকারোক্তির পর রাজনৈতিক খেলায় ফেরার সম্ভাবনা দেখা দেয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দাঁত কামড়ে অপেক্ষায় থাকা বিক্রমাসিংহের। কিন্তু সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিলেন সিরিসেনা।

শেষ খেলা দেখালেন তিনি। দলের স্বীকারোক্তির ৪-৫ ঘণ্টা আগে আইন জারি করে পুলিশ বিভাগকে নিজের হাতে নিলেন। স্বীকারোক্তির মাত্র এক ঘণ্টা পরই মাঝরাতে ভেঙে দিলেন পার্লামেন্ট।

সিরিসেনা যখন দেখলেন, এত চেষ্টার পরও ১৪ নভেম্বরের পার্লামেন্ট অধিবেশনে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপির সমর্থন পাচ্ছে না, তখনই নতুন চাল দিলেন তিনি।

পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া সম্পর্কিত এক ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন সিরিসেনা। এর ২ ঘণ্টা পর আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন তিনি। ৫ জানুয়ারি হবে এ নির্বাচন।

নিজের পছন্দের প্রার্থী যাতে প্রয়োজনীয় সমর্থন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, সে জন্যই পার্লামেন্ট ভেঙে আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।

সিরিসেনা এক ঘোষণায় বলেন, ৫ জানুয়ারি জাতীয় ওই নির্বাচনের পর ১৭ জানুয়ারি নতুন পার্লামেন্ট বসবে।

বিক্রমাসিংহেকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেই জায়গায় রাজপাকসেকে বসাতে শুরু থেকেই নানা বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছে সিরিসেনার দল।

কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা প্রমাণে বিক্রমাসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) বারবার অধিবেশন ডাকার আহ্বান জানালেও সময়ক্ষেপণ করেন প্রেসিডেন্ট।

এ সুযোগে রাজাপাকসে দল ভারি করতে চেষ্টা করেন। অঢেল টাকা দিয়ে কেনার চেষ্টা করেন বিরোধী দলের এমপিদের।

গত সপ্তাহে কয়েকজন এমপি দাবি করেছেন, একেকজনকে আড়াই থেকে পাঁচ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। এভাবে দলে ভিড়িয়েছেন প্রায় আটজনকে। কিন্তু ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে ১১৩ এমপির ভোট দরকার।

ইউপিএফএর এক মুখপাত্র কেহেলিয়া রামবুকওয়েলা জানান, নির্দিষ্ট সংখ্যায় পৌঁছতে রাজাপাকসের এখনও ৮টি ভোট প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের ১০৪ বা ১০৫টি এমপি রয়েছেন।’

তবে এদিন এক জনসভায় সিরিসেনা বলেছেন, ‘১১৩ এমপি আমরা নিশ্চিত করে ফেলেছি। এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।’

পার্লামেন্টে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে সিরিসেনা ও রাজাপাকসের শেষ ভরসা ছিল তামিলরা। যাদের এক সময় নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছেন ক্ষমতার লোভে লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে সেই তামিলদেরই ‘রাজনৈতিক ঘুঁটি’ বানানোর চেষ্টা করেন রাজাপাকসে।

২০০৯ সালে তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযানে আটক করা হয় গোষ্ঠীর দুই শতাধিক সদস্যকে। প্রস্তাব দেন, তাকে সমর্থন দিলে মুক্ত করে দেয়া হবে তামিল বন্দিদের।

কিন্তু সমর্থনের বিনিময়ে বন্দিমুক্তির এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন তারা। এতে দমে যাননি রাজপাকসে।

এরপর তামিলদের জোট তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সকে (টিএনএ) দলে টানার চেষ্টা করেন তিনি। নতুন প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান সিরিসেনাও।

কিন্তু গণহত্যার শিকার তামিলরা মরে গেলেও আর রাজাপাকসের ছাতার তলায় আসবে না। শুক্রবার সিরিসেনার সেই প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছে টিএনএ।