অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবা দিবে ‘প্লেক্সাসডি’

বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়তে সরকারি বেসরকারি প্রায় সব জায়গাতেই অনলাইনে সেবা-পরিসেবা চালু হয়েছে। মোবাইল ফোনের ব্যবহারও এখন হাতে হাতে। প্রয়োজনীয় সব কিছুই মেলে ইন্টারনেটের দুনিয়ায়। দেশের অধিকাংশ সুবিধা ডিজিটাল হলেও অনেক পিছিয়ে স্বাস্থ্যখাতের ডিজিটালাইজেশন। যেখানে উন্নত বিশ্বে রোগীদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট থেকে শুরু করে চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিচালিত হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও চিকিৎসা খাতের আমূল পরিবর্তনে বিপ্লব ঘটাতে চায়‘প্লেক্সাসডি’(PlexusD)নামের একটি অনলাইনভিত্তিক সেবা। প্লেক্সাসডির অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট আপনাকে আরও চমকপ্রদ কয়েকটি সেবা দিবে। যেমন, স্মার্ট অ্যাপয়েন্টমেন্ট, ই-প্রেস্ক্রিপশন, ডিজিটাল রশিদের ব্যবস্থা, অনলাইন রিপোর্ট, ফলোআপ মনে করিয়ে দেয়া, অনলাইনে স্টোরেজের সুবিধা।

বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশে রোগীর সংখ্যা যেমন অনেক ঠিক তার বিপরীতে মাথাপিছু চিকিৎসকের সংখ্যাও অতি নগণ্য। বিএমডিসি থেকে সনদপ্রাপ্ত(সরকারি-বেসরকারি)চিকিৎসকের সম্মিলিত অনুপাতে একজন চিকিৎসকের বিপরীতে সেবাপ্রার্থী ১ হাজার ৮৪৭ জন। এমনও দেখা যায় অধিক রোগীর চাপে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেকেই গাফিলতির স্বীকার হচ্ছেন। এই সমস্যাগুলো বিবেচনা করেই ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার একটি উদ্যোগ হিসেবে প্লেক্সাসডির যাত্রা শুরু বলে জানান প্লেক্সাসডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম মাহমুদ। এক কথায় বলতে গেলে প্লেক্সাসডি এমন একটি অনলাইন প্লাটফর্ম যেখানে একজন চিকিৎসা সেবা প্রার্থী সব ধরণের স্বাস্থ্য সেবা পেতে পারেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্লেক্সাসডি অনলাইন স্টোরেজ নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহার করে। যার মাধ্যমে একজন রোগী তার সমস্ত মেডিকেল ডাটা ক্লাউডে আপলোড করতে পারেন এবং পরবর্তীতে যখন তিনি আবারও স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন তখন এই ডাটাগুলো সামনে হাজির করা যাবে। এতে খুব সহজেই পুরো মেডিকেল ইতিহাস বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।

এই ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মানুষের হাতের মুঠোয় মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ে এসেছে প্লেক্সাসডি। এই অ্যাপটির মাধ্যমে একজন সেবাপ্রার্থী চিকিৎসা সেবায় যে কোনো ধরণের কাজ করে নিতে পারে। অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট থেকে শুরু করে পেমেন্ট, রোগীর মেডিকেল ইতিহাসের ডাটা আপলোড, প্রেসক্রিপশন নেওয়া ইত্যাদি কাজ অনায়াসে করতে পারবেন যে কেউ। একজন সেবাপ্রার্থী সহজেই তার পছন্দের চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন প্লেক্সাসডির অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। ই- অ্যাপয়েন্টমেন্টের মাধ্যমে উপযোগী চিকিৎসক নির্বাচন করে সেবাপ্রার্থী যখন চিকিৎসকের চেম্বারে যাবে তখন সেখানে একজন প্রতিনিধি রোগীর সকল মেডিকেল ডাটা সফটওয়্যারে প্রদান করবে যা সাথে সাথেই অনলাইন ক্লাউডে আপলোড হয়ে যাবে।

প্লেক্সাসডি প্রেসক্রিপশন তৈরিতে নিয়ে এসেছে পরিবর্তন যা আগের থেকে আরও নির্ভুল এবং প্রস্তুত করতে আগের থেকে কম সময় নেয়। এই সফটওয়্যারটি রোগীর পূর্বের মেডিকেল ইতিহাস বিবেচনা করে ক্রস-চেক করবে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দিবে যে তার জন্যে যে ওষুধ প্রেসক্রিপশনে দেয়া হয়েছে তা ঠিকঠাক আছে কি না। এক্ষেত্রে ভুল ওষুধ দেয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালে রিপোর্ট নেয়ার জন্য একজন রোগীকে পুনরায় ফিরে আসতে হবে না। ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপের মাধ্যমে রিপোর্ট পৌঁছে যাবে আপনার কাছে। এমনকি আপনার রিপোর্ট আপনার চিকিৎসকের কাছে একইভাবে পৌঁছে যাবে যাতে পরবর্তীতে কোনো নির্দেশনা দেয়ার প্রয়োজন হলে তিনি যেন দিতে পারেন। চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে যেসব ওষুধ দেন, রোগীদের মধ্যে অনেকেই তা নির্ধারিত সময়ে খেতে ভুলে যান। যাদের ক্ষেত্রে প্রায়ই এমনটা হয়, তাদের সময়মত ওষুধ খেতে আর কোন চিন্তা নেই। প্লেক্সাসডি আপনাকে ওষুধ খাওয়ার সময় মনে করিয়ে দিবে। আপনার যদি এমন কোনো অসুখ হয়ে থাকে যার জন্য আপনাকে বারবার চিকিৎসকের কাছে যেতে হয় সেক্ষেত্রে প্লেক্সাসডি অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিবে। তাছাড়া আপনার সকল সাক্ষাতের তথ্য সংগ্রহ করে রাখবে যা ফলোআপের সময় দরকার হয়।

প্লেক্সাসডির সহ-প্রতিষ্ঠাতা শেখ রিজভী ও সারোয়ার জাহান বলেন,‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সর্বোচ্চ নির্ভুলভাবে সেবা প্রদান করার জন্য। অনেক সময় ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাই প্লেক্সাসডি নিশ্চিত করছে এইচআইপিএএ(HIPAA)এর ১৯৯৬ সালের পলিসি অনুযায়ী ব্যবহারকারীর তথ্য গোপনীয় করার। যা শুধুমাত্র ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে পারবে। চিকিৎসক অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় থেকে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সেই তথ্যগুলো দেখতে পারবেন।’সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান