অনিশ্চয়তার মুখে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন

উৎপাদনমুখী ও বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। তবে দেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এবার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সদ্য পাস হওয়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে অনিশ্চয়তার কারণে মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। বলা যায়- অনেক কঠিন হবে।

অনিশ্চয়তার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের বাজেটে এমনিতেই ১ লাখ কোটি টাকার উপরে ঘাটতি ধরা হয়েছে। ভ্যাট আইন স্থগিত হওয়ার কারণে ১ লাখ ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, “মন্ত্রী মহোদয় বাজেট পাশের সময় এ ব্যাপারে কিছু জানাননি। তাই এত ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আবার মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে যদি ঘাটতি পূরণ করা হয়, তাতেও সংকট দেখা দিতে পারে।”

এবারের মুদ্রানীতিকে যথেষ্ট নমনীয় হতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, মুদ্রানীতিকে যথেষ্ট নমনীয় হতে হবে। এটাকে সংকুলানমূলক বলা যেতে পারে। ফলে যখন যে পরিস্থিতির উদ্ভব হবে, সেটাকে সেভাবে সামাল দিতে হবে।

“মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্যই হলো মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি ঠিক রাখা। এবারের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে এটিকে ধরে রাখা যাবে কি-না বা এটি অতিক্রম হবে কি-না, সেটি দেখার বিষয় আছে। আমার মনে হয়, মুদ্রানীতি যতো সাবধানতার সঙ্গেই করা হোক না কেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ বলেন, মুদ্রানীতিতে কতগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে; রেমিটেন্স কমে যাচ্ছে; চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক। এসবের প্রেক্ষিতে কিভাবে রপ্তানি বাড়ানো যায়; রেমিটেন্স বাড়ানো যায়- সেদিকে নজর দিতে হবে। অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হলো- আমাদেরকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে; কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংককে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের দিকে নজর দিতে হবে। বিনিময় হারের ব্যাপারে একটু চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। টাকার অবমূল্যায়ন হবে কি-না সেটাও দেখার বিষয় আছে।

ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ বলেন, চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবেলা করা হবে এবং বেসরকারি খাতকে কিভাবে আরও উজ্জীবিত করা হবে, তা মুদ্রানীতিতে স্বাভাবিকভাবেই তুলে ধরতে হবে। এটা না হলে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছাবে না। এটা হলো মুদ্রানীতির আসল বিষয়। এর বাইরে ব্যাংকিং সুপারভিশন এবং মনিটরিং বাড়াতে হবে; ব্যাংকে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। যদিও এটা মুদ্রানীতির অংশ না, তবুও এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংককে নজর দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, মুদ্রানীতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। মুদ্রানীতির কৌশল প্রণয়নে চলতি জুলাই মাসের শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সাবেক গভর্নর এবং অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদসহ আরও অনেকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী ৬ মাসের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে সেক্ষেত্রে গুণগত বিনিয়োগের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কেননা, ব্যাংকে আমানতের সুদহার দেশের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন কম। ব্যাংকেও পর্যাপ্ত বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগমুখী করার উদ্যোগ নেয়া হবে আগামী ৬ মাসের মুদ্রানীতিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মুদ্রানীতি প্রণয়ন নিয়ে আমাদের অনেক কাজ করতে হচ্ছে। চলতি জুলাই মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত মুদ্রানীতিতে বিভিন্ন ধরনের সংযোজন বিয়োজন হবে। এরপরে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের যে কোনোদিন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে।

প্রসঙ্গত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়াস থেকে প্রতি ৬ মাসের আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র: অর্থসূচক

আজকের বাজার:এলকে/ এলকে/ ১১ জুলাই ২০১৭