অভিনেত্রী থেকে রাজনৈতিক নেত্রী জয়ললিতা

৭৫ দিন লড়াই করে চলে গেলেন ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। ৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে এগারোটায় চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

সমকালীন প্রজন্ম তাকে বরাবর দেখেছে গাঢ় রঙিন শাড়িতে। ১৯৪৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া এক নারী ভারতের দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুতে আম্মা হিসাবেই পরিচিত। তিনি জয়ললিতা।

তিনি আজ নেই। সোমবার স্থানীয় সময় রাতে ৬৮ বছর বয়সে প্রয়াণ হল তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা জয়রামনের।

সিনেমা থেকে রাজনীতিতে আসা এই নারীর ছিলো বহু হৃদয়ের বুকে ঝড় তোলা সৌন্দর্য। যে রূপের কাঙাল ছিল দক্ষিণের ভারত। ছিপছিপে শরীর, চোখে কামনার আগুন! ব্যস, পুড়ে ছারখার দক্ষিণ ভারত।

শুরুটা হয়েছিল ১৫ বছরে। কন্নড় সিনেমায় নেমেছিলেন তিনি। তারপর ১৯৬০ এর দশকে তামিল সিনেমার একেবারে প্রথম সারির নায়িকা হয়েই সাম্রাজ্য স্থাপন করেন।

কড়া রাজনৈতিক জীবনে অনেকটাই ঢাকা পড়ে যায় তার অভিনয় জীবন। রাজনীতিতে আসার আগে রূপালি পর্দার অতি জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন জয়ললিতা। ৬০-৭০ দশকে পর্দা দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন প্রতিভাবান এই অভিনেত্রী। ১৪০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন জয়ললিতা, যার মধ্যে ৬০টি তামিল ছায়াছবি রয়েছে।
১৯৬১ সালে ইংরাজি নাটক এপিসেল দিয়ে অভিনয় জীবনের শুরু জয়ললিতার। জয়ললিতার প্রথম তামিল ছবির নাম ভেন্নিরা আদাই। ১৯৬৫ সালে এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। ১৯৫১ সাল থেকে শুরু করে এটাই প্রথম ছবি যা শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ছিল। নাবালিকা হওয়ায় নিজের ছবিই দেখতে পারেননি তখন তিনি।

একাধিক বক্স অফিস হিট ছায়াছবিতে অভিনয় করেছেন জয়ললিতা। তার মধ্যে অন্যতম আইরাথিল ওরুভান, কুডি ইরুন্থা কোভিল, গল্লাটা কল্যানাম, আদিমাই পেন, অলি ভিল্লাকু, দেইভা মগন।

জয়ললিতার মা সন্ধ্যা তার বাড়ির অমতে অভিনয় করতে গিয়েছিলেন। তিনি সফল হননি। ফলে মেয়ের উপর ছিল মায়ের ইচ্ছেপূরণের ভার। কিন্তু ছোটবেলায় কয়েকটি ছবিতে শিশু চরিত্রে অভিনয় করার পরই তিনি বুঝতে পারেন মায়ের রাস্তায় তিনি হাঁটবেন না। হয় আইনজীবী, না হয় আইএএস অফিসার হওয়ার ইচ্ছে ছিল জয়ললিতার। কিন্তু বাধ সেধেছিল মায়ের স্বপ্ন। পরিবারের আর্থিক দুরবস্থাও তাকে স্টুডিও পাড়ার ক্যারিয়ার বেছে নিতে বাধ্য করেছিল।

খুব অল্প বয়স থেকে পিয়ানো বাজাতে শিখেছিলেন জয়ললিতা। মোহিনীআট্টম, মণিপুরী ও কত্থকের তালিমও নিয়েছিলেন। ১৯৬০ সাল। মাত্র ১২ বছর বয়সে চেন্নাইতে জয়ললিতার নাচের স্টেজ পারফরম্যান্স দেখেন জনপ্রিয় তামিল অভিনেতা শিবাজি গণেশন। তখনই তিনি বলেছিলেন, ‘এই মেয়ে বড় হয়ে জনপ্রিয় তারকা হবে’। জয়াকে অভিনেত্রী বানানোর ইচ্ছাও প্রকাশ করেন শিবাজি গণেশন।

শিশু অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় শুরু জয়ললিতার। প্রথম ছবিতে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ৩ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন তিনি।

১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় জয়ললিতার ‘মানুসুলু মমথালু’। এক রাতের মধ্যে তারকা হয়ে যান তিনি। এর পরই তামিল সুপারস্টার এম জি রামাচন্দ্রনের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পান জয়ললিতা।