অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন মার্কিন অধ্যাপক রিচার্ড থ্যালার

আজেকর বাজার প্রতিবেদন
মার্কিন অর্থনীতিবিদ রিচার্ড এইচ থ্যালার অর্থনীতিতে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। ২০১৭ সালের জন্য অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী হিসেবে গতকাল সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে তার নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি। আচরণগত অর্থনীতি বা বিহেভিয়ারাল ইকোনমিকসে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ সম্মাননা জিতে নিয়েছেন রিচার্ড থ্যালার। খবর বিবিসি ও ওয়াশিংটন পোস্ট।
বিহেভিয়ারাল ইকোনমিকসের জনকদের অন্যতম হিসেবে বিবেচিত রিচার্ড এইচ থ্যালার ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির ইস্ট অরেঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। অর্থনীতিতে নোবেল বিজেতা হিসেবে তার নাম ঘোষণাকালে রিচার্ড থ্যালারকে জনগণের অর্থনৈতিক আচরণে মনোবিদ্যা প্রয়োগকারীদের মধ্যে অগ্রণী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে নোবেল কমিটি। এ প্রসঙ্গে নোবেল কমিটির ভাষ্য হলো, মানুষ কীভাবে যুক্তিকে অগ্রাহ্য করে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন অধ্যাপক থ্যালার।
কমিটির বক্তব্য অনুযায়ী, রিচার্ড থ্যালারের গবেষণা বিহেভিয়ারাল ইকোনমিকসকে জ্ঞানের প্রান্তিক শাখা থেকে মূলধারার প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা কার্যক্রমে নিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে বিহেভিয়ারাল ইকোনমিকসের প্রায়োগিক গুরুত্বকেও দেখিয়ে দিয়েছে গবেষণাটি।
নিজ ক্ষেত্র সম্পর্কে প্রফেসর থ্যালারের মূল্যায়ন হলো, ‘অর্থনীতির ভালো প্রয়োগ করতে হলে মনে রাখতে হবে, জনগণ মানুষ।’
নোবেল বিজয়ে তার প্রাপ্য অর্থ তিনি কীভাবে ব্যয় করবেন, সেটা জানতে চাইলে রিচার্ড এইচ থ্যালার বলেন, ‘অযৌক্তিকভাবে যতটা সম্ভব, সেভাবেই ব্যয় করার চেষ্টা চালাব আমি।’
বিংশ শতাব্দীতে অর্থনীতির মূলধারা অনেকটা এ ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, মানুষ সবসময়ই যৌক্তিক আচরণ করে। যদিও অর্থনীতিবিদরা পরবর্তীতে বুঝতে পারেন, প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি সত্যি নয়। এর পরও বিষয়টিকে সত্যের কাছাকাছি বলে বিবেচনা করে এসেছেন। অর্থনীতিকে এ ভ্রান্তির নিগড় থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রফেসর থ্যালারের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রয়েছে। তিনি অবশ্য এ কথাও কখনো বলেননি, মানুষ সবসময়ই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়। বরং জনগণকে যেসব বিষয় যুক্তিগ্রাহ্যতার পথ থেকে সরিয়ে দেয়, সেগুলোর ওপরই আলোকপাত করেছেন তিনি। এসব বিষয়ের ভিত্তিতেই বলা যায়, যুক্তিগ্রাহ্যতার পথ থেকে সরে গেলেও মানুষের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আগে থেকেই ধারণা করা সম্ভব।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অর্থনীতির চিরাচরিত ধারা বলছে, মানুষ নিজের প্রয়োজনের তীব্রতার ভিত্তিতেই কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম কমলেও সেখানকার জনগণ এর পেছনে নিজেদের ব্যয় কমায় না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির ক্ষতি হবে জেনেও তারা অতিরিক্ত প্রিমিয়াম গ্যাস কিনে রাখে। সহজ কথায়, নিজস্ব মোট বাজেটের একটা নির্দিষ্ট অংশকে তারা গ্যাস মানি হিসেবেই বরাদ্দ রাখে।
প্রফেসর থ্যালার আরো দেখান, জনগণের মধ্যে নিজের সম্পত্তিকে অতিরিক্ত মূল্যবান বিবেচনার প্রবণতা রয়েছে। এ নিয়ে তার একটি বিখ্যাত পরীক্ষাও রয়েছে, যাতে তিনি ও তার দুই সহকর্মী দৈবচয়নের ভিত্তিতে একটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধেকের কাছে মগ বিতরণ করেন। পরবর্তীতে ক্লাসরুমেই তারা মগের বাজার বসালে সেখানে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা মগ পেয়েছে, তারা এর মূল্য অনুমান করে নিয়েছে অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় দ্বিগুণ।