অলসতা দূর করবেন যেভাবে

বেশিরভাগ মানুষ কাজে আলসেমি/অলসতা করতে পছন্দ করে। আজ করি কাল করি করে আর সেকাজ করা হয় না। কিন্তু এই অলসতা শরীরের জন্য খারাপ। কারণ এই আলসেমি মানুষের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি করে। সম্প্রতি আলসেমি দূর করার আটটি নিয়মের কথা বলা হয় বিবিসির এক প্রতিবেদনে।সেগুলোই তুলে ধরা হলো:

ফেলে রাখা কাজে ইতিবাচক কী আছে দেখুন

অনেকেই ব্যর্থতার ভয়ে কাজ ফেলে রাখেন। শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুসচিয়া সিরোইস বলছেন, আলস্য বা সময় ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা সমস্যা নয়। আপনি যদি উদ্বিগ্ন হন এই ভেবে যে, আপনি ব্যর্থ হবেন—তাহলে কাজ ফেলে রাখার যুক্তি তৈরি হবে। এটা একটা বাজে চক্র তৈরি করতে পারে: বিলম্ব করার কারণে কাজ করার সময় কমে যাচ্ছে, যা ব্যর্থতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এবং তা আপনাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তাই কাজের মধ্যে ইতিবাচক কী আছে তা খুঁজে বের করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করে দিন।

মোটিভেশনে ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে

ক্রীড়া মনোবিদ ইয়ান টেইলরের মতে—মানুষ অনেক সময় মনে করে ইচ্ছাশক্তিই সব কিছু; কিন্তু এটি সঠিক নয়। ইচ্ছাশক্তি বা আত্মনিয়ন্ত্রণ এক ধরনের মোটিভেশন; কিন্তু এটিই সর্বোত্তম এবং শেষ কথা নয়। ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর না করে নিজের খারাপ দিকটিকে উপেক্ষা করাই শ্রেয় বলে মনে করেন ইয়ান টেইলর। বরং খারাপ দিকটিকে উপেক্ষা করাকেই অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে হবে, যা হবে লক্ষ্য অর্জনের একটি অংশ।

অগ্রিম পরিকল্পনা

আপনি যদি বুঝতে পারেন যে, আলসেমি করার একটি প্রবণতা তৈরি হচ্ছে আপনার মধ্যে তাহলে মানসিকভাবে একটি কৌশল নিন। কেউ যদি আপনাকে কোনো সপ্তাহান্তে কোনো মিটিং-এর কথা বলে আপনি বরং বলুন মিটিংটি আজ সন্ধ্যাতেই সেরে ফেলা যাক। আমেরিকান মনোবিদ পিটার গলউইটজার এ কৌশলের ওপর ৯৪টি সমীক্ষা পর্যালোচনা করেন। তার মতে, যারা কৌশলটি অনুসরণ করে তারা লক্ষ্য অর্জনে অন্যদের চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি দৃঢ় থাকে।

ভবিষ্যতের জন্য অধিকতর বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে উত্সাহিত করুন

অনেকেই মনে করি, ভবিষ্যতে আমরা অনেক সময় পাব। এখন কাজটি রেখে দেওয়া যাক। আমরা ভাবি আমরা সামনে আরো গোছানো, আরো অ্যাকটিভ হব কিংবা এমন জীবনযাপন করব সেখানে কোনো ভুলত্রুটি থাকবে না।

চাপ কমান

আলসেমি দূর করতে যে কোনো কাজের চাপ কমিয়ে ফেলতে হবে। যতটা সম্ভব কাজকে সহজভাবে দেখতে হবে। সকালে দৌড়ানোর পরিকল্পনা থাকলে আগেই পোশাক ঠিক করে রাখুন। কাজের পরিকল্পনা আগের রাতেই টেবিলে চূড়ান্ত করে রাখুন। আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখলে কাজে চাপ কমে যাবে। ফলে আলসেমি করার প্রবণতাও কমে যাবে।

নিজেকে পুরস্কৃত করুন

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাইটলিনের নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাত্ক্ষণিক পুরস্কার কঠোর পরিশ্রম করতে উদ্বুদ্ধ করে। জটিল কাজ ফেলে রাখা থেকেই আলসেমি শুরু হয়। তাই এর পালটা ব্যবস্থা হতে পারে যথাসময়ে কাজের পুরস্কার। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে—জিমে ব্যায়াম করার সময় অডিও বুকস দিলে তা ভালো কাজ করে। অর্থাত্ সেই তাত্ক্ষণিক পুরস্কার।

নিজের প্রতি সদয় হোন

হাতে থাকা কাজ ঝুলিয়ে রাখলে অনেক সময় নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগে পড়া ঝালিয়ে নিতে পারেনি তাদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে—যারা আলসেমিজনিত কারণে নিজেকে ক্ষমা করে দেয় তারা পরবর্তীতে ভালো করে। মাথায় রাখতে হবে কাজ যত দ্রুত শেষ হবে তত দ্রুত আনন্দ লাভ করা যাবে।

নিজের সম্পর্কে কথা বলুন

আপনি যে ভাষা ব্যবহার করেন সেটিও একটি ভিন্নতা তৈরি করতে পারে। ইয়ান টেইলর মনে করেন, এটা কাজ করে কারণ এটা আপনার ও আপনার আচরণের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি করে।

আজকের বাজার/মিথিলা