অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩৬ রানের জয় পেয়েছে ভারত

জিততে হলে অস্ট্রেলিয়াকে গড়তে হতো বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়ার নতুন রেকর্ড। একটা সময় সেটা সম্ভব বলেও মনে হচ্ছিল। তবে বড় লক্ষ্য তাড়ার চাপটা ঠিক সামলাতে পারেনি অ্যারন ফিঞ্চের দল। গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছে ভারত।

রোববার অস্ট্রেলিয়াকে করতে হতো ৩৫৩ রান। লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের দুজনই ছুঁয়েছেন পঞ্চাশ। প্রথম তিনটি জুটিও ছাড়িয়েছে পঞ্চাশ। তবে কোনোটাই সেঞ্চুরিতে যেতে পারেনি। কেউ খেলতে পারেননি বড় ইনিংসও। অস্ট্রেলিয়াও যেতে পারেন লক্ষ্যের কাছে। শেষ বলে অলআউট হওয়ার আগে তাদের ইনিংস থামে ৩১৬ রানে। ৩৬ রানের জয় পেয়েছে বিরাট কোহলির দল।

ওভালে ভারতের জয়ের নায়ক শিখর ধাওয়ান। বিশ্বকাপে তার তৃতীয় সেঞ্চুরিতে করা ১১৭, কোহলির ৮২, রোহিত শর্মার ৫৭, হার্দিক পান্ডিয়া এবং মহেন্দ্র সিং ধোনির দুটি ঝোড়ো ইনিংসে ৫ উইকেটে ভারত তুলেছিল ৩৫২ রান। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ এটি। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার ৩১২ রান।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভারতের দুই ওপেনার শুরুটা করেছিলেন দেখেশুনে। রোহিত আউট হতে পারতেন ২ রানেই। তবে স্কয়ার লেগে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রোহিতের ক্যাচটা হাতে জমাতে পারেননি নাথান কোল্টার-নাইল।

পঞ্চম ওভারে আসে ভারতের প্রথম বাউন্ডারি। প্রথম ১০ ওভারে তারা তুলতে পারে ৪১ রান। এরপরই রোহিত-ধাওয়ান বাড়ান রান তোলার গতি। পরের ১০ ওভারে আসে ৭০ রান। জীবন পাওয়া রোহিত তুলে নেন ফিফটি। তার আগেই পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলেন ধাওয়ান। রোহিত অবশ্য ফিফটির পর ইনিংস বড় করতে পারেননি। তাকে ফিরিয়ে ১২৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন কোল্টার-নাইল।

৭০ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ৫৭ রান করার পথেই চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে ২ হাজার রান ছাড়িয়ে যান রোহিত। তার ৩৭ ইনিংসে ২ হাজার রান যেকোনো দলের বিপক্ষেই সবচেয়ে দ্রুততম।

ধাওয়ান এরপর অধিনায়ক কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে চালিয়ে গেছেন। ৯৫ বলে ছুঁয়েছেন তিন অঙ্ক। এটি তার ১৭তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চতুর্থ, বিশ্বকাপে তৃতীয়। তিনটি সেঞ্চুরি আছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও। ওভালেও পাঁচ ইনিংসে ধাওয়ানের সেঞ্চুরি হলো তিনটি।

সেঞ্চুরির পর আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছিলেন ধাওয়ান। তাকে থামান মিচেল স্টার্ক। তাতে ভাঙে ৯৩ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। ১০৯ বলে ৬ চারে ধাওয়ান সাজান ১১৭ রানের অসাধারণ ইনিংসটি।

রাহুল ও ধোনির আগে চার নম্বরে নামা পান্ডিয়া ফিরতে পারতেন মুখোমুখি প্রথম বলেই। তবে উইকেটের পেছনে তার ক্যাচ ফেলেন উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারি। শূন্য রানে জীবন পাওয়া পান্ডিয়া তোলেন ঝড়। ২৭ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় করেন ৪৮। কোহলির সঙ্গে পান্ডিয়ার ৮১ রানের জুটি মাত্র ৫৫ বলে।

ধাওয়ানের পর কোহলিও তার ৪২তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেয়ে যাবেন বলে মনে হচ্ছিল একটা সময়। শেষ দিকে অবশ্য খুব বেশি স্ট্রাইক পাননি ভারত অধিনায়ক। বেশিরভাগ বল খেলেছেন আগের অধিনায়ক ধোনি। শেষ ওভারে ফেরার আগে ১৪ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ধোনি খেলেন ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংস।

শেষ বলের আগের বলে আউট হওয়ার আগে ৭৭ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় কোহলি সাজান ৮২ রানের ইনিংসটি। শেষ বলে চার হাঁকিয়ে ভারতকে সাড়ে তিন শর ঠিকানায় নিয়ে যান লোকেশ রাহুল। ৩ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় রাহুল করেন ১১ রান।

মার্কাস স্টয়নিস ৬২ রানে নেন সর্বোচ্চ ২ উইকেট। স্টার্ক ৭৪ রানে, কামিন্স ৫৫ রানে ও কোল্টার-নাইল ৬৩ রানে নেন একটি করে উইকেট।

লক্ষ্য তাড়ায় ৬১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন ফিঞ্চ ও ওয়ার্নার। তবে এই জুটিতে তারা খেলে ফেলেন ৭৯ বল। ৩৫ বলে ৩৬ রান করা ফিঞ্চের রান আউটে ভাঙে জুটি। আর ওয়ার্নার শুরু থেকেই রানের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ফিফটি করতে খেলেন ৭৭ বল! ৮৪ বলে ৫৬ রান করে তিনি থামেন যুজবেন্দ্র চাহালের বলে।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে স্টিভেন স্মিথ ও উসমান খাজার ব্যাটে ভালোই এগোচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। ৩৬ ওভারে পেরিয়েছিল দলীয় দুইশ। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ১৪ ওভারে দরকার ছিল ১৫২ রান। পরের ওভারেই জাসপ্রিত বুমরাহকে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন খাজা (৪২)।

স্মিথ এরপরও চালিয়ে গেছেন। তবে স্মিথ ৭০ বলে ৬৯ রান করে ফিরতেই ছোটখাটো একটা ধস নামে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে। সাত বলের মধ্যেই সাজঘরে ফেরেন তিন ব্যাটসম্যান। ভুবনেশ্বর কুমারের তিন বলের মধ্যে ফেরেন স্মিথ ও মার্কাস স্টয়নিস। স্মিথের উইকেটটা ভারত পেয়েছে অবশ্য রিভিউ নিয়ে। পরের ওভারে চাহালের শিকার ২৫ বলে ২৮ রান করা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তাতে ৩ উইকেটে ২৩৮ থেকে স্কোর হয়ে যায় ৬ উইকেটে ২৪৪!

এরপর আর পেরে ওঠেনি অস্ট্রেলিয়া। উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ক্যারির ৩৫ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের ইনিংসটি পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পারে শুধু। ভুবনেশ্বর ৫০ রানে ও বুমরাহ ৬১ রানে নেন ৩টি করে উইকেট।

আজকের বাজার/এমএইচ