আইনজীবীর সহকারী হত্যা মামলায় ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড

ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবীর সহকারী মোবারক হোসেন ভূঁইয়া হত্যা মামলায় একই পরিবারের আটজনসহ ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মনির কামাল এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার গোথালিয়া ভূইয়াবাড়ীর মৃত হাজী সাইদুর রহমানের ৬ ছেলে মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া ওরফে মহুব (৫৭), মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া ওরফে বাদল ভূঁইয়া (৫৪), আফজল ভূঁইয়া (৫২), এমদাদুল হক ওরফে সিকরিত ভূঁইয়া (৪৩), নয়ন ভূঁইয়া (৩২), ভুলন ভূঁইয়া ওরফে ভুলু (৩০), এমদাদুল হকের স্ত্রী সুলতানা আক্তার (৩৮), মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেন দিলিপ (২৮)।

এছাড়া একই এলাকার নবুরিয়া গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন (৫২), আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজা মিয়ার ছেলে শিপন মিয়া (২৬), একই থানাধীন মইতপুরের কাজী জজ মিয়ার স্ত্রী নিলুফা আক্তার (৫৭), একই গ্রামের পরেশ সন্যাসীর ছেলে বিধান সন্যাসী (২৫)।

মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

এদের মধ্যে বিধান সন্যাস, দেলোয়ার হোসেন, নিলুফা আক্তার ও সুলতানা আক্তার পলাতক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সাজাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

পলাতক দুই আসামি তাছলিমা আক্তার এবং শামীন ওরফে ফয়সাল বিন রুহুলকে এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

জয়নাল আবেদীন ওরফে ফালুর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের ছোট ভাই এবং মামলার বাদী মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া। উচ্চ আদালতে এ রায় বহাল থাকবে এবং অতি দ্রুত যেন রায় কার্যকর হয় সে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমানও রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মো. জামাল উদ্দিন এবং সেলিনা আক্তার। তারা বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তারপরও রায়ে আসামিদের ফাঁসির আদেশ দেয়া হলো। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানান তারা।

এর আগে গত ১৭ অক্টোবর এ মামলায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ঠিক করেন আদালত।

কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার গোথালিয়া ভূঁইয়াবাড়ীর মৃত ইশাদ ভূঁইয়ার ছেলে মোবারক হোসেন ভূঁইয়া (৪৫)। ঢাকার জজ কোর্টে আইনজীবীর সহকারী ছিলেন তিনি।

মোবারক হোসেন ভূঁইয়া ও তার পরিবারের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে আসামিদের বিরোধ ছিল। ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গোথালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে আসামিরা মোবারক হোসেনের পেটে বল্লম দিয়ে আঘাত করে হত‌্যা করে।

মৃত্তিকা প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহতের ভাগিনা রায়হান মিয়াও আহত হন। পরে নিহতের ছোট ভাই মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া হত‌্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি বাজিতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামলার তদন্ত শেষে ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য সরকার ২০১৭ সালের নভেম্বরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠায়।

একই বছর ১৭ ডিসেম্বর একই ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন। বিচারকালে ট্রাইব্যুনাল চার্জশিটের ৩১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এছাড়া আসামি পক্ষে ১১ জন সাফাই সাক্ষ্য দেন।

আজকের বাজার/এমএইচ