‘আগামী জাতীয় বাজেটের উপর চার্টার্ড একাউন্টেন্টদের ভাবনা’

আইসিএবি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্ন্তভুক্তির জন্য আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত মতামতগুলো প্রেরণ করেছে । আইসিএবির প্রস্তাবনাসমূহ মূলতঃ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, আইনের বৈপরিত্য পরিহার ও ফাঁক-ফোকর হ্রাসকরণ, আইনের প্রয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, বিনিয়োগ কার্যক্রমকে অধিকতর উৎসাহ ও দেশ থেকে মূলধন পাচার নিরুৎসাহীতকরণ ইত্যাদি তুলে ধওে আইসিএবি রোববার ২৪ মার্চ ২০১৯ নিজস্ব ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।ট্যাক্সেশন ও কর্পোরেট ল’জ কমিটির চেয়ারম্যান ও আইসিএবি’র কাউন্সিল মেম্বার মো. হুমায়ুন কবীর এফসিএ সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আরো বক্তব্য রাখেন আইসিএবি’র প্রেসিডেন্ট জনাব এ এফ নেছারউদ্দিন এফসিএ।অন্যান্যদেরম মেধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি এন কে এ মুবিন এফসিএ এবং মো. মনিরুজ্জামন এফসিএ, সাবেক সভাপতি ও কাউন্সিল সদস্য ড. আবু সাঈদ খান এফসিএ এবং মো. নাছির উদ্দিন আহমেদ এফসিএ, কাউন্সিল সদস্য মোহাম্মদ ফুরকান উদ্দিন এফসিএ এবং মারিয়া খাওলাদার এফসিএ, আইসিএবি’র ট্যাক্সেশন ও কর্পোরেট ল’জ কমিটির সদস্য স্নেহাশিস বড়ুয়া এফসিএ এবং রাকেশ সাহা এফসিএ, আইসিএবি সচিব মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইমরুল কায়েস, এনডিসি, পিএসসি (অব.) এবং পরিচালক (টেকনিক্যাল) মাহবুব আহমেদ সিদ্দীকি এফসিএ।

আয়কর বিষয়ক প্রস্তাবনাসমূহ:

১. বিভিন্ন সেক্টর এর Corporate tax rate ২ শতাংশ হ্রাস করার জন্য আইসিএবি প্রস্তাব করছে। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে Corporate tax rate এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। আইসিএবি মনে করে ২% কর হ্রাস করা হলে রাজস্ব আহরন ও নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।

২. বিদ্যমান করদাতাদের উপর অতিরিক্ত কর দ্বায় না চাপিয়ে করযোগ্য ব্যক্তিদের কর নেটে অর্ন্তভুক্ত করে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যক্তি শ্রেণীর জন্য বিদ্যমান কর স্তর দ্বিতীয় ধাপ ৫ শতাংশ থেকে শুরু করা এবং সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশে সীমিত রাখার জন্য আইসিএবি প্রস্তাব করছে। কাজেই করহার কমিয়ে কর জালের আকার বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজ্বস্বের পরিমান বৃদ্ধি করা যেতে পারে বলে আইসিএবি মনে করে।

৩. NBR কর প্রদান সহজীকরনে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কিন্তু বাস্তবে কর গননা ও রিটার্ন ফর্ম ততটা সহজ নয়। বিনিয়োগ কর রেয়াতের জন্য নানা প্রকার হিসাব করতে হয় যা অত্যন্ত জটিল। আয়ের ২৫% এর উপর সরাসরি ১৫% কর রেয়াত প্রদান করলে জটিলতা এড়ানো যেতে পারে।

৪. করের আওতা বাড়াতে, করদানে সক্ষম ব্যক্তি চিহিৃত করতে, নুন্যতম আয়কর আদায়ে, কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে এবং জাতীয় রাজস্ব বৃদ্ধিতে করের আওতা বাড়ানোর জন্য জোরদার ও অর্থবহ জরীপ কার্য পরিচালনা করার জন্য আইসিএবি প্রস্তাব করছে। এ কার্যক্রমে সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এনবিআর-এ গবেষনা দল (Research Team) শাখা/সেকশন প্রতিষ্ঠা করে বিভিন্ন সেক্টরে/খাতে জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির (GDP Growth) সাথে সংশ্লিষ্ট খাত থেকে অতিরিক্ত আহরিত কর রাজস্বের সাথে তুলনামূলক বিশ্লেষন করে সংশ্লিষ্ট সেক্টরে কর আহরন মনিটর করা যেতে পারে বলে আইসিএবি বিশ্বাস করে। এ গবেষনা কার্যক্রমে আইসিএবি প্রয়োজনীয় সহযোগীতা প্রদানে সর্বদা প্রস্তুত।

৫. সকল ETIN ধারীগণের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে রিটার্ণ দাখিল সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে বলে আইসিএবি মনে করে।

৬. আমাদের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবদান অনেক বেশি। তাই তাদের আয়কে ৩৬ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখলে তারা এবং নতুন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগণ অধিকতর উৎসাহিত হবেন যা অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে।

৭. বর্তমানে ITO 1984 ধারা ২৯ অনুসারে ভাড়া বাবদ ব্যয় অনুমোদনযোগ্য ব্যয় হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু ১ জানুয়ারী ২০১৯ বা তৎপরবর্তীতে শুরু হওয়া হিসাব বর্ষের ক্ষেত্রে IFRS 16-Lease অনুসারে কোম্পানি কোন সম্পদ এক বছরের অধিক সময়ের জন্য ভাড়া নিলে তা কোম্পানিকে আর্থিক বিবরণীতে সম্পদ হিসেবে দেখাতে হবে এবং সেক্ষেত্রে ভাড়া বাবদ ব্যয়ের পরিবর্তে সম্পদের অবচয় ও সুদ বাবদ ব্যয়কে কোম্পানির Profit or Loss Account-এ হিসাবভুক্ত করবে। এক্ষেত্রে আইসিএবি’র এই ধরনের নিয়ন্ত্রনাধীন সম্পত্তির অবচয় এবং সুদ বাবদ ব্যয়কে ২৯ ধারায় অনুমোদনযোগ্য ব্যয় হিসেবে বিবেচনা এবং নিয়ন্ত্রনাধীন সম্পদগুলোকে অবচয়ের জন্য তৃতীয় তফসিলে অর্ন্তভুক্তির জন্য প্রস্তাব করছে।

মূল্য সংযোজন কর বিষয়ক প্রস্তাবনাসমূহ:

৮. ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী চার্টার্ড একানট্যান্টসরা করদাতার অনুমোদিত প্রতিনিধি হিসেবে শুনানীতে অংশগ্রহন করতে পারে কিন্তু এ বিধান ২০১২ সালের মূসক আইনের ১৩০ ধারায় সন্নিবেশিত হয়নি। আইসিএবি এ ধারায় চার্টার্ড একানট্যান্টদের সংযোজন করতে জোর দাবী জানাচ্ছে।

৯. তালিকাভুক্তির সীমা ৩৬ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ লক্ষ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যার ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আওতা মুক্ত থাকবে এবং টার্নওভার ট্যাক্স এর সীমা ১ কোটি ৫০ লক্ষ (অর্থ বিল ২০১৭-২০১৮ অনুযায়ী) থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি ৮০ লক্ষে উন্নীত করা ও উহা ৩% এ বহাল রাখার প্রস্তাব করছে।

১০. ১৯৯১ সালের আইন অনুযায়ী যে কোন পর্যায়ে কেবলমাত্র ১০% অর্থ জমার মাধ্যমে আপীল করার বিধান ছিল এবং সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নিকট আপীল করার জন্য কোন প্রকার অর্থ জমা করার বিধান নাই। কিন্তু ২০১২ সালের মূসক আইন মোতাবেক প্রতিটি আপীল পর্যায়ে হাইকোর্টে আপীল দায়ের কালে ১০% অর্থ জমার বিধান রয়েছে যাহা অযৌক্তিক। আইসিএবি এক্ষেত্রে ১৯৯১ সালের বিধান বলবৎ এর প্রস্তাব করছে।