আজ থেকে এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না: অর্থমন্ত্রী

আজ থেকে আর এক টাকারও খেলাপি ঋণ বাড়বে না বলে জানিয়েছেন নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থমন্ত্রীর দপ্তরে ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি একথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকে বসার আগেই আমার শর্ত ছিল একটা। কোনো কিছু আলাপ করার আগে আমার এক দফা। আজকের পর থেকে খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়তে পারবে না। এখন পর্যন্ত যে পরিমান খেলাপী ঋণ রয়েছে তাও ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হবে।’

বৈঠকে উপস্থিত ব্যাংক মালিকদের তিনি বলেন, ‘আপনারা কিভাবে বন্ধ করবেন, কিভাবে টেককেয়ার করবেন, কিভাবে ম্যানেজ করবেন আপনাদের ব্যাপার। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। তাই বলেছি আজকের পর থেকে খেলাপি ঋণ বাড়বে না ইনশাল্লাহ।’

বৈঠকে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার, আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবালসহ ব্যাংক মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত নিয়ে আলোচনা করেছি। তারাই ব্যাংকের মালিক। সবাই প্রায় এসেছেন। তাদের সঙ্গে যেসব আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ব্যাংকিং খাতের যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো ভেরিভফাই করবো, এভালুয়েট করবো, মূল্যায়ন করবো। এ জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে। এই মূল্যায়ন শেষ হলে আমরা একটি ব্যবস্থায় যাব।’

আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘আমরা একটি জায়গায় ঐক্যমতে পৌঁছেছি, মূল যে এলাকা মূল যে চিন্তা সেটি হচ্ছে ননপারফরমিং (খেলাপি) লোন। এটি আপনাদের উৎকণ্ঠা, জাতির উৎকণ্ঠা, আমাদের উৎকণ্ঠা এবং আমার উৎকণ্ঠা, তবে আমার উৎকণ্ঠা কিছুটা কম। কেননা এরই মাঝে আমি দেখেছি, যেভাবে যে পরিমান পত্রপত্রিকায় লেখা হয়, সেপরিমান ননপারফরমিং লোন না। দেশে ননপারফরমিং লোনের হার ১১ থেকে ১২ শতাংশ। এর চেয়ে অন্যান্য দেশে আরও বেশি। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও আরও বেশী। ননপারফরমিং লোন কমলে ব্যাংক সুদের হার কমে যাবে, সুতরাং এটা কোনোভাবেই বাড়তে দেয়া হবে না।’

তিনি বলেন, ‘ননপারফরমিং লোন এখনো ম্যানেজেবল। আর এই ম্যানেজেবল লোন আর বাড়তে পারবে না। এখানে যারা এসেছেন তারা নিশ্চিত করেছেন খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না বরং যা আছে সেটিও ধীরে ধীরে কমাবেন। কিভাবে কমাবেন সেটি পরবর্তী মিটিংয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেব। এটিই আলোচনার মূল বিষয় ছিল। যেহেতু খেলাপি ঋণ হয়েই গেছে, সে বিষয়ে তারাই আমাকে তথ্য দেবেন কি পরিমান, কোন ব্যাংকের কতটা খেলাপি ঋণ আছে। কার কাছে কতটা পাওয়া যাবে, এর মধ্যে কতটা আসল কতটা সুদ। তাদের তথ্য আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে সঠিক কাজটি যথাযথভাবে করতে পারবো।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নতুন অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বাংলাদেশে ব্যবসা করে তারা সবাই প্রভাবশালী। পৃথিবীতে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন সবাই প্রভাবশালী। ব্যবসায়ীরা যদি প্রভাবশালী না হয় তাহলে বিনিযোগ কিভাবে আসবে। কোথা থেকে কর্মসংস্থান হবে, কিভাবে হবে, দারিদ্র্য কিভাবে কমবে। প্রভাবশালী যারা যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে তারা অর্থনীতির ৮২ শতাংশ। এদেরকে বাদ দিয়ে ১৮ শতাংশ নিয়ে অর্থনীতি সাজানো সম্ভব নয়। এটা করতে চাওয়াটাও একটা অবাস্তব চিন্তা। ঋণখেলাপি না হয়ে তাদেরকে ব্যবসা করতে সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে।’

তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ