আবাসন খাতের রাজস্ব জটিলতায় সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ বাড়ছে

আবাসন খাতে রাজস্ব জটিলতার কারণে বাংলাদেশের অর্থ মালয়েশিয়ার সেকেন্ডে হোমে বিনিয়োগ হচ্ছে বলে মনে করেন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন।

তাই সেকেন্ডে হোমে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করার অংশ হিসেবে বিনা প্রশ্নে অ্যাপার্টমেন্টের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন ক্রয়ের ক্ষেত্রে সুযোগ প্রদানের দাবি জানান তিনি।

১১ নভেম্বর শনিবার রাজধানীর হোটেল পূর্বানী ইন্টারন্যাশনালে ‘এনবিআর-রিহ্যাব যৌথ সভায়’ রিহ্যাবের পক্ষ থেকে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট এমন অনুরোধ জানিয়েছেন।

এর আগে গত জুলাই মাসে মালয়েশিয়া সরকার জানায়, তাদের দেশে দ্বিতীয় বাড়ি (সেকেন্ড হোম) গড়ার অনুমতি পাওয়া নাগরিকদের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ২০০২ সালে মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম (এমএম২এইচ) নামে এই কর্মসূচি চালুর পর থেকে সে সময় পর্যন্ত তিন হাজার ৫৪৬ জন বাংলাদেশি সেখানে এই সুবিধা পেয়েছেন।

এর পরেই সেই মাসে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে কানাডা, সিঙ্গাপুর, ইউএসএ, মালয়েশিয়া এবং সুইজারল্যান্ডে অট্টালিকায় বসবাস করছে। ব্যাংকের অর্থ মেরে বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে। ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানতের অর্থ নানা কৌশলে বিদেশে অর্থ পাচার করে সেখানে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছে তারা। গৃহঋণের এই অর্থ দেশে থাকলে কর্মসংস্থান হতো এবং দেশের অর্থনীতি চাঙা থাকতো।

তবে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, আবাসন শিল্পে কর ছাড় করা হলে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, ভূমি মালিক থেকে সাইনিং মানির ওপর ১৫% কর আদায় কষ্টসাধ্য। সাইনিং মানি মূলত বিক্রয়মূল্যের একটি অংশ। সেক্ষেত্রে সাইনিং মানির ওপর ১৫% স্থলে ৭.৫% করা হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে। নির্মাণ সামগ্রী খোলা বাজার থেকে ক্রয় করা হয় বলে এক্ষেত্রে এআইটি কর্তনও সম্ভব নয়।

শামসুল আলামিন বলেন, কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হলে এ খাত সংশ্লিষ্টরা আরও বেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। এ খাতের সদস্যদের পেইড আপ ক্যাপিটাল বর্তমানে ১০-১২ লাখ টাকা। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পেইড আপ ক্যাপিটাল ১ কোটি টাকা করার। এক্ষেত্রে এনবিআর যেন এ টাকার উৎস না খোঁজে। নিবন্ধন খরচ বর্তমানে প্রায় ১৫.৫%। এ খরচ ৬.৭% করা হলে রাজস্ব আহরণ বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থা চালু করা উচিত। এতে এখাতে বিনিয়োগ, বিক্রি বাড়বে। সেকেন্ডারি মার্কেটে সর্বমোট ৩ শতাংশ নিবন্ধন খরচ করার প্রস্তাব করেন।

এসময় রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে দেশের আবাসন শিল্প নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মূখীন। নানা করআরোপ ও সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। কর্মসংস্থানের বড় খাত হওয়া সত্ত্বেও গত চার-পাঁচ বছর ধরে কোম্পানিগুলো কেবল লোকবল ছাঁটাই করছে। বর্তমানে অর্থের অভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যথাযথ গৃহ ঋণ না থাকায় বিক্রি করা ফ্ল্যাটের রিপেমেন্ট হচ্ছে না। সময়মত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ঋণ খেলাপি হচ্ছে, উচ্চ নিবন্ধন ফির কারণে ক্রেতারা এতে আগ্রহ হারাচ্ছে। তাই রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের নিবন্ধন ফি সংক্রান্ত ব্যয় সাড়ে ১৫ শতাংশ। এরমধ্যে গেইন ট্যাক্স ৪ শতাংশ, স্ট্যাম্প ডিউটি ৩ শতাংশ, নিবন্ধন ফি ২ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ২ শতাংশ এবং ভ্যাট দেড় থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ। তাই নিবন্ধন ব্যয় সাড়ে ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা জরুরি। ফ্ল্যাট পুনঃবিক্রয়ের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়াসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর মত নিবন্ধন সংক্রান্ত খরচ সর্বমোট ৩ শতাংশ নির্ধারণ করে সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থার প্রচলন করা কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (করনীতি) পারভেজ ইকবাল, রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১২ নভেম্বর ২০১৭