আবাসন শিল্পে কর ছাড়ে রাজস্ব বাড়বে

আবাসন শিল্পে কর ছাড় দেওয়া হলে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। সেজন্য এ খাতে বিশেষ নজর দিতে অনুরোধ জানিয়েছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
আজ শনিবার রাজধানীর হোটেল পূর্বানী ইন্টারন্যাশনালে ‘এনবিআর-রিহ্যাব যৌথ সভায়’ রিহ্যাবের পক্ষ থেকে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরনবী চৌধুরী শাওন এমন অনুরোধ জানিয়েছেন।মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, প্রতিবছর ১৫ থেকে ১৭ হাজার ফ্ল্যাট আমরা হস্তান্তর করি। কিন্তু নিবন্ধন ফিসহ রাজস্ব বেশি হওয়ায় ক্রেতারা নিবন্ধন করতে চায় না। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
তিনি বলেন, ভূমি মালিক থেকে সাইনিং মানির ওপর ১৫% কর আদায় কষ্টসাধ্য। সাইনিং মানি মূলত বিক্রয়মূল্যের একটি অংশ। সেক্ষেত্রে সাইনিং মানির ওপর ১৫% এর জায়গায় ৭.৫% করা হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।
শামসুল আলামিন বলেন, কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হলে এ খাত সংশ্লিষ্টরা আরও বেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। এ খাতের সদস্যদের পেইড আপ ক্যাপিটাল বর্তমানে ১০-১২ লাখ টাকা। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পেইড আপ ক্যাপিটাল ১ কোটি টাকা করার। এক্ষেত্রে এনবিআর যেন এ টাকার উৎস না খোঁজে। নিবন্ধন খরচ বর্তমানে প্রায় ১৫.৫%। এ খরচ ৬.৭% করা হলে রাজস্ব আহরণ বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থা চালু করা উচিত। এতে এখাতে বিনিয়োগ, বিক্রি বাড়বে। সেকেন্ডারি মার্কেটে সর্বমোট ৩ শতাংশ নিবন্ধন খরচ করার প্রস্থাব করেন।
রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে দেশের আবাসন শিল্প নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মূখীন। নানা করআরোপ ও সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। কর্মসংস্থানের বড় খাত হওয়া সত্ত্বেও গত চার-পাঁচ বছর ধরে কোম্পানিগুলো কেবল লোকবল ছাঁটাই করছে। বর্তমানে অর্থের অভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যথাযথ গৃহ ঋণ না থাকায় বিক্রি করা ফ্ল্যাটের রিপ্লেসমেন্ট হচ্ছে না। সময়মত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ঋণ খেলাপি হচ্ছে, উচ্চ নিবন্ধন ফির কারণে ক্রেতারা এতে আগ্রহ হারাচ্ছে। তাই রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্ভাবনাময় এ খাতকে এগিয়ে নিতে নিবন্ধন ফি ও গেইন ট্যাক্স কমানো, সেকেন্ডারি বাজার তৈরি এবং স্বল্প সুদে বিশেষ তহবিল গঠনসহ বেশ কিছু দাবি জানান তিনি।
নুরন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের নিবন্ধন ফি সংক্রান্ত ব্যয় সাড়ে ১৫ শতাংশ। এরমধ্যে গেইন ট্যাক্স ৪ শতাংশ, স্ট্যাম্প ডিউটি ৩ শতাংশ, নিবন্ধন ফি ২ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ২ শতাংশ এবং ভ্যাট দেড় থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ। তাই নিবন্ধন ব্যয় সাড়ে ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা জরুরি। ফ্ল্যাট পুনঃবিক্রয়ের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়াসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর মত নিবন্ধন সংক্রান্ত খরচ সর্বমোট ৩ শতাংশ নির্ধারণ করে সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থার প্রচলন করার কথা বলেন।
আবাসন খাতে ৫ শতাংশ সুদে ৩০ বছর মেয়াদে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের দাবি জানিয়ে নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, এ দীর্ঘমেয়াদী রি-ফাইন্যান্সিং চালু করা জরুরি।
এনবিআরের সদস্য (মূসকনীতি) ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিবন্ধন ব্যয় কমাতে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে রাজউক, হাউজিং অথরিটিসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে। নিবন্ধন ব্যয় কমলে রাজস্ব আহরণ অনেক বেড়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (করনীতি) পারভেজ ইকবাল, রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আজকের বাজার: সালি / ১১ নভেম্বর ২০১৭